স্টাফ রিপোর্টার : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র আসছে, তবে ‘আমরা কী করবো। যখন কেউ বালুর ট্রাকে করে ছোট্ট পিস্তল নিয়ে আসে তখন এটি হিউম্যানলি শনাক্ত করা সম্ভব না। এজন্য দরকার আধুনিক স্ক্যানার। সেই স্ক্যানার তো আমাদের নেই।’ তিনি আরো বলেন, সীমান্তে হত্যা ও চোরাচালান বন্ধে দু’টি চ্যালেঞ্জ। তার কথায় চ্যালেঞ্জ দুটি হচ্ছে- সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ এবং দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাস্তা সংস্কার। এ কারণেই সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। বন্ধ হচ্ছে না গরু ও মাদক চোরাচালানের মতো কর্মকা-ও।
গতকাল রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিদায়ী ডিজি আজিজ আহমেদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সীমান্তের জন্য স্ক্যানার প্রয়োজন এটির জন্য আমরা চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দিয়েছি। সেটি এখন কি পর্যায়ে আছে বলতে পারবো না। স্ক্যানারটি পেলে অস্ত্র চোরাচালান রোধে আমরা অনেক বেশি সফল হতাম। সম্প্রতি তাকে লে. জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়ে বিজিবি থেকে বদলি করে ময়মনসিংহের আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি হিসেবে বদলি করা হয়। তবে তাকে এখনো ব্যাজ পরানো হয়নি। আগামী রোববার প্রেসিডেন্টের সামরিক সচিব আবুল হোসেন নতুন মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। তার আগে বিজিবি মহাপরিচালক হিসেবে এটিই তার শেষ সংবাদ সম্মেলন।
গত চার বছর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) নেতৃত্ব দিয়েছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ। তার আমলেই সংস্থাটি নতুনরূপে সাজলেও এই দীর্ঘ সময়ে একটি বড় ব্যর্থতার কথাও স্বীকার করলেন তিনি। গত চার বছরে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কীÑ এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামাতে না পারা। সীমান্ত হত্যা বন্ধে অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। এটিকে তো ব্যর্থতাই বলতে হবে।’ তবে এই ব্যর্থতার পেছনে বেশ কিছু কারণের কথা বলতে ভুলেননি। তিনি জানান, ‘সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত এই সংস্থাটির অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। চাইলেই সব কিছু করা সম্ভব না। বিশেষ করে সীমান্তে যেখানে সড়কই নেই, সেখানে অপরাধ দমনে বিজিবি সদস্য কীভাবে কাজ করবে। এমন অনেক বাস্তবতা রয়েছে সংস্থাটির।’ আধুনিকতার এই যুগে অনেক পিছিয়ে আছে বিজিবি। চোরাচালান দমনে বিজিবির কাছে আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। সীমান্ত বড়, সমস্যা অনেক। ‘হিউম্যানলি’ সবকিছু মনিটরিং করা সম্ভব না। এজন্য দরকার আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ যন্ত্রপাতি। সেটিও হয়তো হবে। তবে সময় লাগবে বলে জানান বিজিবি ডিজি।
মঙ্গলবার বিজিবি সদর দপ্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি নানামুখী প্রশ্নের মুখে পড়েন। এক প্রশ্নের জবাবে আজিজ আহমেদ বলেছেন, ‘ফেলানী হত্যার ঘটনায় আমি অতৃপ্ত। অনেক আলোচিত এই হত্যার বিচার দেখে যেতে পারলে হয়তো আরও তৃপ্ত হতে পারতাম।’ ফেলানীর বিচার কার্য ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা জানিয়ে এই মহাপরিচালক বলেন, ‘আমি ভারতের সীমান্ত বাহিনীকে অনেক তাগাদা দিয়েছি। এই বিচার সম্পন্ন করতে অনেক চিঠি চালাচালি হয়েছে। শেষমেশ এটি এখন ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আছে। বিচারের রায় হয়তো হবে। তবে সেটি তো আর আমি দেখে যেতে পারলাম না।’ ফেলানী হত্যার বিচার এখনো সম্পন্ন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করে আজিজ আহমেদ বলেন, ‘ফেলানী হত্যার বিচার না পাওয়ার হতাশা রয়েছে। তবে সর্বোপরি এটি আদালতের বিষয়। আদালতই চূড়ান্তভাবে ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
বিজিবির এই বিদায়ী মহাপরিচালক গত চার বছরের সংস্থাটির সাফল্যের নানা দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সীমান্তে যদি এই দুইটি বিষয় নিশ্চিত করা যায় তাহলে সীমান্তে অপরাধ শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব। এজন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথাও তিনি জানান। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, নতুন মহাপরিচালক আমার পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবেন। মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ গত চার বছর এই সংস্থাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন। গতকাল তিনি গত চার বছরে তার সময়কালে নেয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন। সীমান্ত অপরাধের বিভিন্ন কারণ তুলে ধরে আজিজ আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তের মানুষগুলো অর্থনৈতিক দিক থেকে অনেক বেশি দুর্বল। তাদের অনেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। তাদেরকে চোরাচালানীরা সহজে কব্জা করে ফেলেন। তারা সামান্য অর্থের লোভে অবৈধভাবে চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ে। এরা কিন্তু সরাসরি জড়িত নয়। তারা শুধুই বাহক। কিন্তু মারা যায় এরাই। নেপথ্যে কলকাটি নাড়ে হোতারা। একারণে সীমান্তের মানুষগুলোর ভাগ্য বদলেও পদক্ষেপ নিয়েছে বিজিবি।’ তবে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে (এনজিও) সীমান্তবাসীর জন্য কাজ করার আহ্বান জানান বিজিবি মহাপরিচালক। অবৈধ গরু ব্যবসা বন্ধ করতে পারলে সীমান্ত ৯০ শতাংশ হত্যা কমে যাবে উল্লেখ করে মহাপরিচালক বলেন, ভারতীয় গরুর উপর আমাদের নির্ভরতা কমিয়ে আনতে হবে। এটা শূন্য নিয়ে আসতে পারলে সীমান্ত হত্যা কমে যাবে। এবছর কোরবানির উদাহরণ দিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, ‘এবার ভারতীয় গরু আমাদের দেশে আসে নাই। একারণে কী আমাদের গরুর সংকট হয়েছে? হয়নি। বরং আমাদের দেশের গরু ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছেন। এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সীমান্ত দিয়ে বৈধ পাসপোর্ট নিয়ে অবৈধ কাজ হয়। পাসপোর্ট বৈধ হলেও ওই ব্যক্তিই সেই ব্যক্তি কিনা সেটি শনাক্ত করার মতো আমাদের কাছে কোনো যন্ত্র নেই। যার কারণে তারা মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।
আজিজ আহমদ ২০১২ সালের ডিসেম্বরে এই সংস্থাটির মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব নেন। রক্তাক্ত বিডিআর বিদ্রোহের পর থেকেই আজিজ আহমদ বিজিবির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন