মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

কীভাবে বুঝা যাবে একটি দেশে গণতন্ত্র নেই

হারুন-আর-রশিদ | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২২, ১২:০৬ এএম

গণতন্ত্র এমন একটি রাষ্ট্র বা সরকার ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে, যা একনায়কতন্ত্র বা রাজতন্ত্রের বিপরীত। জনগণের ইচ্ছানুসারে পরিচালিত রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে গণতন্ত্র বলা হয়। প্রাচীনকাল থেকে অদ্যাবধি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থাই হলো মানুষের সেরা আবিষ্কারগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সফল প্রয়োগের মাধ্যমে বহু দেশের অর্থনৈতিক, সামাাজিক উন্নতি লাভ সম্ভব হয়েছে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা তিনটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। এই তিনটি স্তম্ভ হলো নির্বাহী বিভাগ (Executive department). নির্বাচিত প্রতিনিধি বিভাগ (legislative department) এবং বিচার বিভাগ (Judicial department)। এই তিনটি বিভাগের মধ্যে আদর্শগত সংযোগ এবং ক্ষমতার সুষম বণ্টন থাকলে একটি দেশে শাসনব্যবস্থা ভালোভাবে পরিচালিত হয়। বিভাগগুলো পরস্পরের থেকে যত বেশি পৃথক থাকে গণতন্ত্রের জন্য ততই মঙ্গলজনক। গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হলো সংবাদমাধ্যম বা গণমাধ্যম। মুক্ত এবং নিরপেক্ষ সংবাদমাধ্যম আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সুশাসনের অন্যতম শর্ত হিসেবে মনে করা হয়। সমতা, সুশাসন ও সুবিচার থাকলে দেশে ভালো গণতন্ত্র আছে বলে মানুষ মনে করে।
আজ পৃথিবীর বহু দেশে গণতন্ত্রের ধস নেমেছে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বিংশ শতাব্দীর সমাপ্তি বছর পর্যন্ত বিশ্বের বহু দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কার্যকর ছিল। একবিংশ শতাব্দীতে এসে সে চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। বতর্মান বিশ্বের অনেক দেশে গণতন্ত্র নামেমাত্র কার্যকর রয়েছে বলে রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের গবেষণায় ধরা পড়েছে। বিংশ শতাব্দীর মতো অনেক দেশে সরাসরি সামরিক শাসন না থাকলেও বহু দেশে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলো একনায়কতন্ত্রের মতোই আচরণ করছে। আবার অনেক দেশে পূর্ণ সিভিল সরকার কার্যকর থাকলেও গণতন্ত্র কতটা সক্রিয়ভাবে আছে, সেটি নিয়েও নানাভাবে প্রশ্ন উঠছে। গণতন্ত্রের ওপর ডিজিটাল কর্তৃত্ববাদের প্রসার ঘটেছে। সব ক্ষমতা এখন নির্বাহী বিভাগের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে। এধরনের কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এখন আর গণতন্ত্র বলতে চাইছেন না। ইকোনোমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট তার নতুন প্রতিবেদনে বলেছে, বিশ্বব্যপী গণতন্ত্র হুমকির মধ্যে রয়েছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত তার বার্ষিক গণতন্ত্র সূচকে বলা হয়েছে, বিশ্বে মাত্র ১৯টি দেশে পূর্ণ গণতন্ত্র চর্চা করা হচ্ছে। এর মধ্যে পশ্চিম ইউরোপের ১৪টি দেশ রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্ব জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীনে আছে। এর বড় একটি অংশ চীনের জনগোষ্ঠী। এই সূচকে বিশ্বের সর্বোচ্চ গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে নরওয়ে, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড প্রথম সারিতে আছে। প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, পূর্ণ গণতন্ত্র আছে বলেই দেশগুলো সুখী দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। একসময়ের উন্নতমানের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার বর্তমান অবস্থান কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার দেশগুলোর কাতারে যুক্ত হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বজুড়েই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবনতি ঘটেছে। ২০১৭ সাল থেকে গণতান্ত্রিক চর্চার চরম অবনতি শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষ বিশ্বাস হারাচ্ছে। জনগণের বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা অনেক কমে গেছে। অনেক দেশের রাষ্ট্র গণমাধ্যমের এবং সাধারণ মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে। নিরাপত্তা সুরক্ষা আইনের নামে বিপক্ষের মতাদর্শের মানুষদের গুম, হত্যা এবং রিমান্ডের মাধ্যমে জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে ২০১৭ সাল থেকে গাম্ভিয়া গণতন্ত্র চর্চায় সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে।

ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিটের হিসাব মতে, বিশ্বের ১৬৭টি দেশের মধ্যে মাত্র ২০টি দেশ পূর্ণমাত্রার গণতন্ত্রের তালিকায় আছে। ৫৫টি দেশ ত্রুটিপূর্ণ তালিকায়। ৩৯টি দেশ হাইব্রিড রেজিমের তালিকায় এবং ৫৩টি দেশ স্বৈরতান্ত্রিক দেশের তালিকায় রয়েছে। সবচেয়ে কম গণতন্ত্র থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে উত্তর কোরিয়া, লাওস, চীন, কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া, ভিয়েতনাম, নেপাল এবং হংকং। জার্মানির গবেষণা প্রতিষ্ঠান বেরটেলসমান স্টিফটুং অন লাইন ডেস্ক ২৪-০৩-২০১৮ এর প্রতিবেদনে দেওয়া সূচকে গণতন্ত্রের মানের দিক থেকে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে উরুগুয়ে, দুইয়ে আছে এস্তোনিয়া, তিন নম্বরে আছে তাইওয়ান। সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে চীন ১০৯ নম্বরে, এর পরের অবস্থান যথাক্রমে ইয়েমেন, সিরিয়া এবং সোমালিয়ার দখলে। রাশিয়ার অবস্থান ৮১ নম্বরে। বাংলাদেশের অবস্থান ৮০ নম্বরে। সূচকে ভারতের অবস্থান ২৪ এবং শ্রীলংঙ্কার অবস্থান ৪২ নম্বরে। উক্ত প্রতিবেদনে আরো দাবি করা হয়েছে, পাঁচটি দেশ গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদ- পূরণ করছে না। দেশগুলো হলো: বাংলাদেশ, লেবানন, মোজাম্বিক, নিকারাগুয়া ও উগান্ডা। এই পাঁচটি দেশ বিগত কয়েক বছর ধরে সবচেয়ে খারাপ মানের নিবার্চন পদ্ধতি মেনে চলছে, যা কোনোভাবেই আন্তর্জাতিক মানদ-ে পড়ে না। এই দেশগুলোতে বছর পরিক্রমায় গণতন্ত্রের ভিত ক্রমাবনতিশীল হয়ে পড়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর একাধিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেছেন, বাংলাদেশ এখন মূলত একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালু আছে। আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমারে বহু বছর ধরে সামরিক শাসনব্যবস্থা চালু আছে। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মরক্কো, জর্দান, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া, কুয়েত, মিশর, কাতার, ওমান, বাহরাইন, ব্রুনাই এবং এ ছাড়া সোয়াজিল্যান্ড, মোনাকো, ভ্যাটিকান সিটি, ভুটানসহ আরো বহু দেশে গণতন্ত্র নেই। এসব দেশে রাজতন্ত্র, পরিবারতন্ত্র এবং গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কার্যকর আছে। বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনের পর ব্রিটেনের ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, সেখানে গণতান্ত্রিক দেশের তালিকায় নেই বাংলাদেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র সামিটে বাংলাদেশকে বয়কট করেছে। ওই সামিটে পাকিস্তান, ভারত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাকে দাওয়াত দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে যে চিত্র দেখা গেছে, সেটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে যে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এমনটাই মনে করছেন দুর্নীতি বিরোধী ইন্টারন্যাশন বাংলাদেশ (টিআইবি) লিমিটেড। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পযর্ন্ত নির্দলীয় সরকারের অধীনে যেসব নির্বাচন হয়েছে, সেখানে পরাজিত দল বরাবরই অভিযোগ তুললেও সাধারণভাবে সেসব নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা ছিল সর্বমহলের কাছে। কিন্তু ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র উল্টা পথে হাঁটতে শুরু করে বলে জনগণ বিরূপ মন্তব্য উত্থাপন করেছে। সর্বশেষ নির্বাচনের (২০১৮) পর এ প্রশ্ন আরো জোরালো রূপ নিয়েছে। একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে, সর্বশেষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থার পুরো কাঠামোটাই ভেঙ্গে পড়েছে। এরপর থেকেই সাধারণ মানুষের ভোটের উপর আস্থা উঠে গেছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য ছিল অশনিসংকেত বা বড় ধাক্কা। একটি দেশে গণতন্ত্র নেই, সেটা আরও বুঝা যাবে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন দেখলে, যে নির্বাচনে সাধারণ মানুষ ভোট দিতে মোটেই আগ্রহ প্রকাশ করে না। যে সব দেশে বেসামরিক একনায়কতন্ত্র আছে, সেখানেও নিয়মিত নির্বাচন হয়। এর বিরুদ্ধে জনগণ প্রতিবাদ করলে তা সহিংসভাবে দমনের চেষ্টা করা হয়। অনেক সময় গণতান্ত্রিক সরকারের চরিত্র দেখে অনেক সামরিক সরকারও লজ্জা পেয়ে থাকে। এ ধরনের নির্বাচনে সঙ্গতকারণেই ভোটার অংশগ্রহণ কমে যাবে। সংসদ হবে একদলীয়। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রভাব বাড়বে। নির্বাচন কমিশন, সংসদ এবং বিচার বিভাগ ভঙ্গুর অবস্থার দিকে অগ্রসর হবে। মানুষ মত প্রকাশে ভয় পাবে। দুর্নীতি বেড়ে যাবে। পণ্যমূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়বে। সরকার ব্যবসায়ী এবং আমলানির্ভর হয়ে পড়বে।

৯ জানুয়ারি ২০১৯ বুধবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখানে ২০১৮ সাল থেকে বাংলাদেশ ৫ দশমিক ৫৭ স্কোর পেয়ে হাইব্রিড রেজিম তালিকায় রয়েছে। ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র এবং স্বৈরতন্ত্রের মাঝামাঝি অবস্থান হাইব্রিড রেজিম। ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্সি ইউনিটের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৬ সালে গণতন্ত্র সূচকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ৬ দশমিক ১১। এই সূচকটি ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল, এই এক দশক পর্যন্ত বাংলাদেশ গণতন্ত্র সূচকে হাইব্রিড রেজিমে অবস্থান করেছে। ইকোনমিস্ট গ্রুপ ২০০৬ সালে এই সূচক প্রকাশ শুরু করার পর ২০১৭ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫ দশমিক ৪৩ এবং এটাই ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে বাজে অবস্থান। বাংলাদেশ এই বাজে অবস্থান থেকে অদ্যাবদি বের হতে পারেনি। ইআইইউ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র বিরাজ করছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও পাকিস্তান হাইব্রিড রেজিম এবং আফগানিস্তানে স্বৈরতন্ত্র কার্যকর আছে। ২০০৬ সাল থেকে ইআইইউ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্র পর্যালোচনা করে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ স্কোর ৯ দশমিক ৮৭ পেয়ে গণতান্ত্রিক সূচকে সবচেয়ে উপরের অবস্থানে আছে নরওয়ে। অন্যদিকে মাত্র ১ দশমিক ০৮ স্কোর নিয়ে উত্তর কোরিয়ার অবস্থান সবার নিচে।

ইকোনমিস্টের গণতন্ত্রের সূচক স্কোর অনুযায়ী ক্যাটাগরি ৯-১০ পূর্ণ গণতন্ত্র, ৭-৮ ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র, ৫-৬ হাইব্রিড রেজিম এবং স্বৈরতান্ত্রিক দেশগুলোর স্কোর ০ থেকে ৪ এর মধ্যে। ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট সূত্র বলছে, এই হিসাব অনুযায়ী একটি দেশেকে পূর্ণ গণতান্ত্রিক অবস্থায় যেতে হলে গণতান্ত্রিক সূচকে ৯ থেকে ১০ স্কোর অবশ্যই করতে হবে।

লেখক: গ্রন্থকার ও গবেষক।
harunrashidar@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ১৪ মার্চ, ২০২২, ১১:৫২ এএম says : 0
কাফেরের আইন দিয়ে দেশ চলে আজকে আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ চলে আমরা আমাদের দেশে আরামে এবং সুখে শান্তিতে বসবাস করতে পারতাম>>>>>>এদের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে জনগণকে চুষে চুষে খাবে কেউ কোন কথা বললে তাকে গুম করবে তাহলে হত্যা করবে না হলে মিথ্যা কেস দিয়ে চিরজীবনের জন্য জেলের মধ্যে দিয়ে রাখবে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন