আমীরে হিযবুল্লাহ ছারছীনা শরীফের পীর ছাহেব আলহাজ¦ হযরত মাওলানা শাহ্ মোহাম্মদ মোহেব্বুল্লাহ (মা.জি.আ.) বলেছেন- তরীকা মশকের মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি প্রকৃত মুসলমান হিসেবে জীবন যাপন করতে পারে। আর প্রকৃত মুসলমান হয়ে কবরে যেতে পারলেই কেবলমাত্র নাজাতের আশা করা যায়। কেননা আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ ফরমান ‘হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’
পীর ছাহেব কেবলা আরও বলেন- তরীকা হলো সঠিক ভাবে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলা, জিকির-আজকার, মুরাকাবা-মুশাহাদার মাধ্যমে আত্মিক উন্নতি সাধন করা এবং আধ্যাত্মিক জগতে ক্রমোন্নতি লাভ করা। তরীকতের অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যক্তির মধ্যে মনুষ্যত্ব, মহানুভবতা, উদারতা ও সহমর্মিতার সুকোমল বৃত্তিগুলি বিকাশ লাভ করে এবং পশুত্ব, হিংসা, অহংকার ও আত্মম্ভরিতা যেমন মানবতা বিধ্বংসী কুরিপুগুলি দূরীভ‚ত হয়। তাই সঠিক ভাবে ইসলামের চর্চা ব্যতীত যেমন প্রকৃত মানুষ হওয়া যায় না তেমনি মনুষ্যত্ববিহীন মানব সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তার কোন গ্যারান্টি থাকতে পারে না।
আমিন মোহাম্মদ গ্রæপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম এম এনামুল হক কয়েক লাখ মুসল্লির উদ্দেশ্যে বলেন, আমার পূর্ব পুরুষদের সকলেই এই ছারছীনা দরবারের অনুসারী ছিলেন। ছারছীনা দরবার একমাত্র সুন্নাতের অনুসারী দরবার তাই আমরাও এ দরবারে আসি। এ দরবার শরীফ থেকে লাখো মানুষ সঠিক পথের সন্ধান পেয়ে ঈমানদার হয়েছে। বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহে আলম বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার ইসলাম বান্ধব সরকার, তাই বঙ্গবন্ধু দেশে ইসলামীক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ৫০০ মডেল মসজিদ নির্মাণ করে পৃথিবী ব্যাপী অনান্য ভুমিকা রেখেছে। আত্মশুদ্ধি লাভের মাধ্যমে ছারছীনা দরবারের দেয়া পরামর্শগুলো মেনে চলে দেশ জাতির কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার আহŸান জানান।
গতকাল বাদ জোহর আখেরী ছারছীনা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা পীর কুত্ববুল আলম শাহ্সূফী হযরত মাওলানা নেছার উদ্দীন আহমদ (রহঃ) এর ৭০তম এবং তদীয় জানেসীন মুজাদ্দেদে যামান হযরত মাওলানা শাহ্ আবু জা’ফর মোহাম্মাদ ছালেহ (রহ.) এর ৩২তম এন্তেকাল বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত এবারের তিন দিন ব্যাপী ঈছালে ছওয়াব এবং ছারছীনা মাদরাসার ১৩২তম বার্ষিক মাহফিলের শেষ দিন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন- বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর সিনিয়র নায়েবে আমীর আলহাজ¦ হযরত মাওলানা শাহ্ আবু নছর নেছার উদ্দিন আহমদ হুসাইন, নায়েবে আমীর মাওলানা মির্জা নূরুর রহমান বেগ, মাওলানা মো. সিরাজুম মুনীর তাওহীদ, মাওলানা মো. রূহুল আমীন আফসারী ও মাওলানা মো. রূহুল আমীন ছালেহী প্রমূখ।
তিনদিনব্যাপী মাহফিলে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- পিরোজপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্জ ডা. রুস্তুম আলী ফরাজী, বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম, পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ এ. কে. এম. এ. আউয়াল, আমিন মোহাম্মাদ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম.এম. এনামুল হক, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদার্রেসীনের মহাসচিব মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী, বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি এস.এম. আক্তারুজ্জামান, পিরোজপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. সাঈদুর রহমান (পিপিএম), নেছারাবাদ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোশাররেফ হোসেন, নেছারাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবির মোহাম্মদ হোসেন এবং স্বরূপকাঠী পৌরসভার মেয়র মো. গোলাম কবিরসহ স্থানীয় সরকারী কর্মকর্তা ও নের্তৃবৃন্দ প্রমুখ।
আখেরী মুনাজাতের পূর্বে গতকাল বাদ জোহর মীলাদ, তওবা ও বাইয়াত গ্রহণের পর সকলকে লক্ষ্য করে নসীহত করতে গিয়ে পীর ছাহেব কেবলা বলেন- আল্লাহ চাহেতো আজ হতে ৮ মাস পর অগ্রহায়ণের মাহফিলে আবার দেখা হবে। এই অন্তবর্তীকালীন সময়ে তিনি সকলকে নিয়মিত অজিফা ও আমলের উপর মজবুত থাকতে বলেন এবং বাংলাদেশ জমইয়াতে হিযবুল্লাহর মাধ্যমে তা’লীমী জলসা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন। তিনি সমবেত জনতাকে হাত তুলে সুন্নাত তরীকা মোতাবেক আমল করার অঙ্গীকার গ্রহণ করেন।
বিকাল ৩ ঘটিকায় শুরু হওয়া মুনাজাত প্রায় দীর্ঘ ৪০ মিনিটব্যাপী চলমান থাকে। প্রায় দুই কিলোমিটার ব্যাপী মাহফিল ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মুনাজাতে হযরত পীর ছাহেব কেবলা সমবেত জনতার হেদায়েত এবং বিশ^ মুসলিমের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করেন। অশ্রæসিক্ত নয়নে হযরত পীর ছাহেব কেবলা যখন সকলের গোনাহ মাফ চেয়ে বার আল্লাহর দররারে ফরিয়াদ জানাচ্ছিলেন তখন সকলের ক্রন্দন রোলে এবং আমীন আমীন ধ্বনিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা। মুনাজাতে সকলে হযরত পীর ছাহেব কেবলার হায়াত দারাজী ও সুস্থতা কামনা করে দোয়া করেন। বিশেষজ্ঞ মহলের মতানুযায়ী আখেরী মুনাজাতে দশ লক্ষাধিক লোক অংশ গ্রহণ করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন