মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

যানজট নিয়ন্ত্রণে সর্তক ট্রাফিক

আজ থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু চট্টগ্রামে পুরোদমে ক্লাস শুরুর দিনে যানজটে দুর্ভোগের শঙ্কা

ইনকিলাব রিপোর্ট | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০২২, ১২:০২ এএম

সকালে অফিসে যাওয়ার সময় রাজধানীজুড়ে যানজটের চিত্র প্রতিদিনেরই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জটের তীব্রতা কমতে থাকলেও দুপুর শেষে তা ফের বাড়তে থাকে, চলে রাত পর্যন্ত। স্বাভাবিক সময়ে দুপুরে রাজধানীর সড়কগুলোতে যানবাহনের চাপ কিছুটা কম দেখা যায়। কিন্তু গতকাল সোমবার রাজধানীর সড়কজুড়ে যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। সকালের যানজট গড়িয়ে অব্যাহত ছিল দুপুর, বিকেল ও রাত পর্যন্ত। তবে দুই বছর পর ফের আগের রূপে ফিরছে দেশের শিক্ষাঙ্গন। দীর্ঘদিন ধরেই করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সীমিত পরিসরে শ্রেণি কার্যক্রম চলছিল। আজ মঙ্গলবার থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক সময়ের মতোই শতভাগ ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এ জন্য সর্তকতার পাশাপাশি জনবল বাড়িয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। দুর্ভোগ এড়াতে হাতে সময় নিয়ে স্কুলগামী ছাত্র-ছাত্রীদের বাসা থেকে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা। অন্যদিকে রাজধানীর যানজটের বেহাল অবস্থায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। তারা বলছেন, এমনিতেই রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রাজপথে যানজট লেগেই থাকে। এ জন্য ক্লাস শুরুর অনেকই আগেই বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে অভিভাবকদের।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, মঙ্গলবার থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক সময়ের মতোই শতভাগ ক্লাস ও পরীক্ষা শুরুর বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা কাজ করছি। রাজধানীর যেসব এলাকায় স্কুল রয়েছে, সেখানে খুব সকাল থেকেই ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদের আসা-যাওয়ার কারনে যে সব সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয় সেসব এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। আমরা অন্যান্য সময়ের থেকে ট্রাফিক পুলিশের সংখ্যা কিছুটা বাড়িয়েছি যাতে সাধারণ মানুষ যানজটে কষ্ট না পান।
রাজধানীর মহাখালির বাসিন্দা হামিদুর রহমান। তিনি মতিঝিলের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। গতকাল তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমার মেয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের ছাত্রী। অন্যান্য সময় এক ঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হলে স্কুলে মেয়ে দিয়ে অফিসে আসতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক সময়ের মতোই শতভাগ ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এ জন্য আরো ৩০ মিনিট সময় বেশি নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাসার আশপাশে মানসম্মত স্কুল না থাকায় মেয়েকে মতিঝিলে ভর্তি করতে বাধ্য হয়েছি। এছাড়া আমার অফিসও মতিঝিলে এ জন্য খুব বেশি কষ্ট হয় না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মালিবাগ চৌধুরিপাড়ার বাসিন্দা রনি ইনকিলাবকে বলেন, আমার মেয়ে ভিকারুন্নেসা স্কুল এন্ড কলেজের বেইলি রোড শাখার দশম নবম শ্রেনীর ছাত্রী। অন্যান্য দিনে বাসা থেকে ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যেই স্কুলে মেয়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয়। কিন্তু ঢাকার যানজটের যে অবস্থা গত কয়েকদিন যাবত হচ্ছে, তাতে মনে হয় আরো বেশি সময় হাতে নিয়েই বাসা থেকে বের হতে হবে। যানজটের কারনে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে আসা-নেয়া একটা ভোগান্তি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ইনকিলাবকে বলেন, যেহেতু দুই বছর পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুরোপুরি ক্লাস শুরু হচ্ছে এ জন্য অভিভাবকদের হাতে সময় নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়া উচিত। যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করলেও কোন কারণে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য বাচ্চার স্কুল যেন বিলম্বিত না হয় অভিভাবকদের সর্তক থাকা প্রয়োজন।
ব্যবসায়ী আশরাফুল রানা বলেন, রাজধানী জুড়ে চলছে মেট্রোরেল প্রকল্প ও সড়ক সংস্কার। একারণে রাস্তা যেমন সরু হয়েছে, তেমনি বেড়েছে সড়কে পরিবহনের সংখ্যা। এরফলে মানুষের কর্মঘণ্টা কমার পাশাপাশি বাড়ছে মানসিক চাপ। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, দেশের অনেক কিছুই ডিজিটালাইজ হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ অনলাইনে মামলা দিচ্ছে। কিন্তু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সেই আগের মতই রয়ে গেছে। এখনো হাতের ইশারায় সড়কগুলোতে সব ধরণের বাহন চলছে। রাজধানীতে দিন দিন বাড়ছে যানজট।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, টানা দুই বছর পর স্কুল-কলেজে আজ থেকে শুরু হচ্ছে পুরোদমে ক্লাস। একসাথে সব শিক্ষার্থী সশরীরে ক্লাস করবে। এ নিয়ে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে উৎসাহের কোন কমতি নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও উৎসবের আবহ। তবে নগরীর যানজটের বেহাল অবস্থায় উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। মহানগরীতে যানজট এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। বেশিরভাগ সড়ক সংস্কারের অভাবে খানাখন্দে ভরা। সড়ক থেকে অলিগলি সর্বত্রই রিক্সার ঢল সেইসাথে ছোট গাড়ির দাপট। চলছে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিক্সা, টমটমসহ হরেক যানবাহন। যত্রতত্র পার্কিং, সড়ক দখল করে ফুটপাতের পসরা এবং নির্মাণ সামগ্রী রাখার ফলে সড়কে চরম বিশৃঙ্খলা। নগরীতে নেই পর্যাপ্ত সংখ্যক পথচারী পারাপার সেতু। ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা তো আছেই।
অপরিকল্পিত ও সমন্বয়হীন খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাস্তায় নেমেই ধুলাবালুতে নাকাল হচ্ছে নগরবাসী। নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতে বিস্তৃত হয়েছে তীব্র জট। এ অবস্থায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পুরোদমে ক্লাস শুরুর ফলে নগরীতে তীব্র জটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। নগরীর কয়েকটি এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। নগরীর জামালখান থেকে চকবাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই নিজস্ব কোন পরিবহন।
ফলে ব্যক্তিগত গাড়ি এবং গণপরিবহনই শিক্ষার্থীদের ভরসা। সকাল বেলা অফিস শুরুর সময় শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হবে বলে জানান ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তারা। এমনিতেই নগরীতে গণপরিবহন সংকট। চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলি ইপিজেডসহ শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ কারখানার নেই নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। বিভিন্ন রুটের বাস ভাড়া করে শ্রমিক পরিবহন করা হয়। ফলে অফিস শুরুর সময় নগরীতে গণপরিবহন সংকট আরও তীব্র হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) শ্যামল কুমার নাথ ইনকিলাবকে বলেন, ট্রাফিক বিভাগ সীমিত সামর্থ্য দিয়ে যানজট নিরসনে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। নগরবাসীর স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের জন্য আমরা সবসময়ই আন্তরিক। তবে স্কুল-কলেজে পুরোদমে ক্লাস শুরু হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে পুরো ট্রাফিক বিভাগ সক্রিয় থাকবে। আশা করি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে আমরা সক্ষম হব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
ananda dutta ১৫ মার্চ, ২০২২, ১:০৮ এএম says : 0
অফিসের সময় দশটা আর স্কুল বা কলেজের সময় এগারোটা করলে,সবার জন্য কিছু টা ভালো হতে পারে। এ-ই নিয়ম শুধু মাত্র ঢাকা শহরের এর জন্য।
Total Reply(0)
ananda dutta ১৫ মার্চ, ২০২২, ১:০৮ এএম says : 0
অফিসের সময় দশটা আর স্কুল বা কলেজের সময় এগারোটা করলে,সবার জন্য কিছু টা ভালো হতে পারে। এ-ই নিয়ম শুধু মাত্র ঢাকা শহরের এর জন্য।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন