শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

এনবিআর চেয়ারম্যানের সাথে প্রাক-বাজেট আলোচনা সভা করলেন সিলেটের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ

সিলেট ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১৬ মার্চ, ২০২২, ৯:৩১ পিএম

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম বলেছেন, দেশের স্বার্থে ব্যবসায়ীদের স্ব-উদ্যোগে রাজস্ব প্রদানে এগিয়ে আসতে হবে। রাজস্ব আহরণ বাঁধাগ্রস্থ হলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হয়। তিনি বলেন, সিলেট চেম্বার অব কমার্স ও সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স কর্তৃক প্রস্তুতকৃত বাজেট প্রস্তাবনা আমরা গ্রহণ করেছি। এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে। যা আমরা আগামী বাজেটে অবশ্যই বিবেচনা করবো। দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ও সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র উদ্যোগে আজ বুধবার বেলা আড়াইটায় নগরীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। উক্ত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক নীতি) মোঃ মাসুদ সাদিক ও সদস্য (করনীতি) সামস্ উদ্দিন আহমেদ। এতে সভাপতিত্ব করেন সিলেট চেম্বারের সভাপতি ও এফবিসিসিআই এর পরিচালক তাহমিন আহমদ।

আলোচনা সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান আরো বলেন, রাজস্ব কর্মকর্তাদের সাথে আইনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক সময় ব্যবসায়ীদের ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। সে বিষয়গুলি চিহ্নিতকরণ ও তা সমাধানে আমরা কাজ করছি। করের বোঝা কমিয়ে করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এজন্য সকল স্তরের ব্যবসায়ীদের আন্তরিক সহযোগিতা ও সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে সিলেটের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর নিকট হতে প্রাপ্ত বাজেট প্রস্তাবনা সরকারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি প্রাক-বাজেট আলোচনা সভাটি আয়োজনের জন্য দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি ও সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিকে ধন্যবাদ জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক নীতি) মোঃ মাসুদ সাদিক বলেন, সিলেট প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হিসেবে সিলেটে রেমিটেন্সের প্রবাহ বেশী হওয়ায় এখানে মাথাপিছু আয় দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বেশী। তাই সিলেট থেকে সরকারের রাজস্ব প্রত্যাশাও বেশী। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দাবীর প্রেক্ষিতেই সুপারশপগুলোকে সেন্ট্রাল রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে ভ্যাট সংগ্রহ করা হয়। এগুলোকে স্থানীয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন করলেই যে সিলেটের ভ্যাট আদায়ের টার্গেট কমে যাবে এমন কিছু নয়। রাজস্ব আহরণের টার্গেট বছর বছর বাড়বে কারণ সরকারের সকল ধরণের উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যবসায়ীদের প্রদানকৃত রাজস্বের মাধ্যমে সম্পাদন হয়। তিনি ব্যবসায়ীদের ভ্যাট সংক্রান্ত ঝামেলা এড়াতে অনলাইন ভ্যাট রিটার্ন দাখিলে অভ্যস্ত হওয়ার আহবান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানে প্রায় ৮০ ভাগ ভ্যাট রিটার্ন অনলাইনে দাখিল হয়, সেখানে সিলেটের মাত্র ৬৮ ভাগ করদাতা অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে থাকেন। তিনি পণ্য আমদানি না হলে আমদানিকারকগণ কর্তৃক দাখিলকৃত ‘এডভান্স ট্যাক্স’ রিফান্ড সহজে প্রাপ্তির লক্ষ্যে অনলাইনে রিফান্ড আবেদন করার অনুরোধ জানান। এছাড়াও তিনি ব্যবসায়ীদের অনলাইনে ভ্যাট-ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর নীতি) সাম্স উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিলেট চেম্বার ও সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার কর্তৃক প্রস্তুতকৃত বাজেট প্রস্তাবনায় সিলেটের ব্যবসায়ী ও করদাতাদের কল্যাণে অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা স্থান পেয়েছে। তবে আমাদেরকে সমগ্র বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাজেট তৈরী করতে হয়। আমরা অবশ্যই সিলেটের ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবনাগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবো। তিনি বলেন, দেশ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের এ গতিকে ধরে রাখতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ‘ট্যাক্স কালচার’ বা ‘কর সংস্কৃতি’ গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে ট্যাক্সতে একটি সংস্কৃতির মতো বিবেচনা করা হয়। তাই তাদের উন্নয়নে আর্থিক কোন বাঁধা থাকে না। তিনি সিলেটের অনেকগুলো শুল্ক স্টেশনে ব্যাংক শাখা বা বুথ না থাকলেও ই-চালানের মাধ্যমে অনলাইনে সহজে ব্যবসায়ীদেরকে ট্রাভেল ট্যাক্স সহ অন্যান্য শুল্ক-করাদি পরিশোধের পরামর্শ দেন। তিনি জানান, সিলেটে কর ভবন নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে, অচিরেই সিলেটে কর ভবন নির্মিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

সভাপতির বক্তব্যে দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, ব্যবসায়ীরা ভ্যাট, ট্যাক্স ও অন্যান্য রাজস্ব প্রদানের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখেন। তাই ব্যবসায়ীদের সকল সুবিধা-অসুবিধার প্রতি লক্ষ্য রাখা সরকারের নৈতিক দায়িত্ব। তিনি বলেন, এবছর বৃহত্তর সিলেটের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে সিলেট চেম্বার অব কমার্স ও সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স যৌথভাবে বাজেট প্রস্তাবনা তৈরী করেছে। তিনি আগামী বাজেটে ব্যক্তিগত করমুক্ত আয়ের সীমা ৩ লক্ষ টাকা থেকে বর্ধিত করে ৫ লক্ষ টাকা করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে টিআইএনধারী করদাতার সংখ্যা মাত্র ২৭ লক্ষ। এ নগন্য সংখ্যক করদাতার দ্বারা সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরর্ণ করা সম্ভব নয়। তিনি রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের নিয়মিত কর প্রদানকারীদের উপর করের বোঝা না বাড়িয়ে করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধির দাবী জানান। তিনি পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিতে পর্যটন খাতের বিনিয়োগকারীদের ৫ বছরের ট্যাক্স হলিডে প্রদান, সিলেটে কোম্পানী শ্রেণীর করদাতাদের জন্য আপীল বেঞ্চ ও কর আপীল ট্রাইবুনাল গঠন, ব্যবসায়ীদের ভ্যাট আপীলের ব্যবস্থা করা, পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে আমদানি শুল্ক হ্রাস ও সকল শুল্ক স্টেশন চালু রাখা, সিলেটের ভ্যাটদাতাদের উপর ভ্যাটের বোঝা কমাতে স্থানীয় সুপারশপগুলোতে প্রদানকৃত ভ্যাট সিলেট ভ্যাট বিভাগের হিসাবে আনার বিধান করা সহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। সভায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আফজাল রশীদ চৌধুরী। তিনি সভায় উপস্থিত হয়ে সিলেটের ব্যবসায়ীদের দাবী-দাওয়া সমূহ শোনার জন্য প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সিলেটের বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ীদের দাবী-দাওয়াকে পর্যালোচনা করে বাজেট প্রস্তাবনাটি তৈরী করা হয়েছে। তিনি প্রস্তাবনায় উল্লেখিত বিষয়সমূহ যথাযথভাবে বিবেচনার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতি আহবান জানান। সভায় বক্তাগণ অবসর গ্রহণকারী করদাতাদের জন্য অবসরকালীন ভাতা চালু, পর্যটন খাতের জন্য আমদানিকৃত গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ফি কমানো, দেশীয় চা শিল্পকে উৎসাহিত করতে চা আমদানী বন্ধে কঠোর নীতিমালা প্রয়োগ, এডভান্স ইনকাম ট্যাক্স রিফান্ড প্রক্রিয়া সহজীকরণ, ভোগ্যপণ্য পরিবেশকদের উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার, টার্ন ওভার ট্যাক্স দাখিলের বিধান রহিতকরণ, কর আপীলের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদেরকে সরাসরি উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ প্রদান, কন্সট্রাকশন আইটেম ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর উপর থেকে টিডিএস প্রত্যাহার, ট্যাক্স বিভাগের সার্ভার ডাউন হলে ম্যানুয়েলি ট্যাক্স গ্রহণ করা, ব্যবসায়ীদের উপর থেকে ভ্রমণ কর প্রত্যাহার সহ বিভিন্ন দাবী-দাওয়া তুলে ধরেন।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন কাস্টম্স এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সিলেট এর কমিশনার মোহাম্মদ আহসানুল হক, কর অঞ্চল-সিলেট এর কর কমিশনার মোঃ আবুল কালাম আজাদ, সিলেট ওমেন্স চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি স্বর্ণলতা রায়, সিলেট চেম্বারের সিনিয়র সহ সভাপতি ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ, সিলেট চেম্বারের পরিচালক আবু তাহের মোঃ শোয়েব, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সাবেক সভাপতি হাসিন আহমদ, সহ সভাপতি মাওলানা মোঃ খায়রুল হোসেন, প্রাইভেট হসপিটাল মালিক সমিতির সভাপতি ডাঃ নাসিম আহমদ, সিলেট চেম্বারের সাবেক সিনিয়র সহ সভাপতি শাহ আলম, চন্দন সাহা, সিলেট মহানগর ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান রিপন, সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম. শফিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি এডভোকেট মোঃ আবুল ফজল, কর আইনজীবী মোঃ মাজহারুল হক, কাস্টম্স এর অতিরিক্ত কমিশনার মুহাম্মদ রাশেদুল আলম, সিলেট চেম্বারের সহ সভাপতি মোঃ আতিক হোসেন, পরিচালক মোঃ হিজকিল গুলজার, মুশফিক জায়গীরদার, মুজিবুর রহমান মিন্টু, ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরী রাজিব, আলীমুল এহছান চৌধুরী, মোঃ আব্দুস সামাদ, দেবাংশু দাস, কাজী মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, মোঃ সরোয়ার হোসেন ছেদু, সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ সভাপতি মাওলানা মোঃ খায়রুল হোসেন, পরিচালক জিয়াউল গণি আরেফিন, আলিমুছ ছাদাত চৌধুরী, সদস্য মোঃ তফাজ্জুল হোসেন এফসিএ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং কাস্টম্স ও কর বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বারের পরিচালক মুয়াম্মির হোসেন চৌধুরী ও সিলেট চেম্বারের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মিনতি দেবী।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন