চট্টগ্রামের ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) কমপ্লেক্স লিমিটেডের কারখানা থেকে যশোরে পাঠানো সরকারি ভর্তুকির ৭০ মেট্টিক টন টিএসপি সার নকল সন্দেহে জব্দ করা হয়েছে। ওই সার গুদামে ঢুকতে দেয়নি যশোরের বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি’র) বাফার গুদাম কর্তৃপক্ষ। পথে বিক্রি করে দিয়ে নকল সার গুদামে পাঠানো হয়েছে এমন অভিযোগের তদন্তে নেমেছে তিন সদস্যের কমিটি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা রবিবার গুদাম পরিদর্শন ও নমুনা সংগ্রহ করেছে।
জানা যায়, দক্ষিণাঞ্চলে যুগোপযোগী কৃষি উন্নয়ন, কৃষি মাটি ও উৎপাদনের সঠিক গুনগত মান সম্পন্ন সার কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে যশোর শহরতলী বাহাদুরপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ কেমিকেল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি’র) বাফার গুদাম রয়েছে। ১০ হাজার মেট্টিকটন ধারণ ক্ষমতা এই গুদামে রাখা হয় চট্টগ্রামসহ দেশে সরকারিভাবে উৎপাদিত সার। এই সার গুদাম থেকে যশোর ঝিনাইদহ নড়াইল মাগুরা মেহেরপুর চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ৪৬০ জন ডিলারের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রয় করা হয়।
চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামের মাঝিরঘাটের পরিবহন ঠিকাদার মেসার্স সৈয়দ এন্টারপ্রাইজকে যশোর বাফার গুদামে সরকারি ভর্তুকির সার পরিবহনের কার্যাদেশ দেয় টিএসপি কমপ্লেক্স। এরপর থেকে সার পরিবহন করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। সেই ধারাবাহিকতায় ১৭ মার্চ চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্স থেকে ১৪ লাখ টাকার মূল্যে ৭০ মেট্টিক টন (১৪শ’ বস্তা) সার ট্রাভেলস কোম্পানি চট্টগ্রামের সৈয়দ এন্টারপ্রাইজ ৫ ট্রাকে লোড দিয়ে যশোরে আনে। এ সময় ট্রাকে বোঝাই সার দেখে যশোর বাফার গুদাম কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হয়। ১৮ মার্চ সার খালাস বন্ধ করে চট্টগ্রামের টিএসপি কমপ্লেক্সে লিখিত আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ট্রাকসহ ৭০ মেট্টিক টন সার জব্দ করার নির্দেশ দেয়। এরপর ২০ মার্চ টিএসপি কমপ্লেক্সের উপ প্রধান রাসায়নবিদ রেজাউল হক, ব্যবস্থাপক (উৎপাদন) শফিকুল কবীর এবং বিসিআইসির উপপ্রধান হিসাব রক্ষক নির্মল কুমার দত্ত যশোরের বাফার গুদামে আসেন। তারা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। চট্টগ্রাম থেকে আসা কাগজ পত্র, ট্রাভেলস এজেন্সির কাগজপত্র পরীক্ষা করেন। এছাড়া সব ট্রাকের সারের নমুনা সংগ্রহ করেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক যশোর বাফার গুদামের এক কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম টিএসপি কমপ্লেক্স থেকে যে সার যশোর গুদামে নামানো হচ্ছে, সেগুলো আসল সার নয়। কারণ সারের বস্তার সেলাই টিএসপির সেলাইয়ের মত নয়। সার পাল্টে নকল সার ভর্তি করে বস্তাগুলো পুনরায় সেলাই করা হয়েছে। বস্তায় ডাবল সেলাই স্পষ্ট হয়েছে। পথে সার বদলে নকল সার সরবরাহের জন্য গুদামে আনা হয়েছে।
যশোর বাফার গুদাম ইনচার্জ আকতারুল ইসলাম বলেন, গত ১৭ মার্চ চট্টগ্রাম টিএসপি কমপ্লেক্স থেকে পাঁচ ট্রাক সার আসে। সারগুলো সন্দেহ হওয়ায় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা আপাতত সার খালাস না করে ট্রাকসহ গুদামের বাইরে রাখার নির্দেশ দেন। রবিবার টিএসপি কমপ্লেক্সে লিমিটেডের পক্ষ থেকে কয়েকজন কর্মকর্তা যশোরে এসে জব্দকৃত সারের নমুনা সংগ্রহ করে চট্রগ্রামের সার কারখানার পরীক্ষাগারে নিয়ে গেছেন। এ বিষয়ে দুই একদিনের মধ্যে ফলাফল পাওয়া যাবে।
পরিবহনকারী ঠিকাদার মেসার্স সৈয়দ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আহসান হাবীবের দাবি, ওই সার নকল নয়। যশোরে সন্দেহ হওয়ায় পাঁচটি ট্রাক আটকানো হয়েছে। এখন তারা (বিসিআইসি) কমিটি করেছেন। সার পাল্টে যাওয়া কিংবা তাদের কাছ থেকে ভেজাল হয়ে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা। তদন্ত কমিটির সদস্য ও বিসিআইসি বিপণন বিভাগের উপপ্রধান হিসাব রক্ষক নির্মল দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, যশোর বাফার গুদামে নকল সার সরবরাহের একটি অভিযোগ পেয়েছি। তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কমিটির সদস্যরা যশোরে বাফার গুদামে পাঠানো সার নমুনা সংগ্রহ করেছে। পরীক্ষা করে দেখা হবে। সার নকল প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন