শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

৩২ কোটি টাকা হাতিয়ে দুবাই পালানোর চেষ্টা এমডির

আকাশ নীলের ডিসকাউন্ট ফাঁদে গ্রাহক

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০২২, ১২:০২ এএম

‘আকাশ নীল’ নামের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান খুলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। চক্রটি তিন দফায় ৯ হাজারের বেশি গ্রাহককে আকৃষ্ট করে হাতিয়ে নেয় ৩২ কোটি টাকা। পণ্য বা টাকা ফেরত না দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এমডি মশিউর রহমান ওরফে সাদ্দাম (২৮) ধানমন্ডিতে কেনেন তিন কোটি টাকার ফ্ল্যাট। চড়তেন ৬০ লাখ টাকার গাড়িতে। প্রতি মাসে কর্মীদের বেতন দিতেন ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। গ্রাহকদের ৩২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হওয়া মশিউর রহমান ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান রনিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গতকাল সোমবার কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, মশিউর ও রনি ২০১৯ সালে ‘আকাশ নীল’ নামে ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ খোলেন। ট্রেড লাইসেন্সও নেন। প্রথমে শাক-সবজি কিনে অনলাইনে হোম ডেলিভারি শুরু করেন। করোনায় সুবিধা করতে না পেরে শুরু করেন প্রতারণামূলক ব্যবসা। কোম্পানিকে লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত করে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মতো ডিসকাউন্ট অফারে মোটরসাইকেল বিক্রি শুরু করেন। তিন দফায় তিনি ৯ হাজারের বেশি গ্রাহককে আকৃষ্ট করে হাতিয়ে নেন ৩২ কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বরে ইভ্যালিসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযানের ফলে গ্রাহকরা পণ্য অথবা টাকা ফেরতের চাপ দিতে শুরু করলে অফিস গুটিয়ে নেন। নিজেদের ফোন বন্ধ রাখেন। একপর্যায়ে দুবাই যাওয়ার জন্য ভিসা ও টিকিট নেন এমডি মশিউর।
র‌্যাবের কর্মকর্তা জানান, তাদের প্রথম ক্যাম্পেইন ছিল গত মে মাসে। সে সময় ৩০ শতাংশ ছাড়ে দুই মাসের মধ্যে ডেলিভারির আশ্বাসে দুই শতাধিক মোটরসাইকেলের অর্ডার পান। গত বছরের জুলাই মাসে ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে ৪৫ দিনের মধ্যে ডেলিভারির নিশ্চয়তায় এক হাজারের অধিক মোটরসাইকেলের অর্ডার পান। সর্বশেষ গত আগস্ট মাসে মোটরসাইকেলের তৃতীয় ক্যাম্পেইনে ২৩ শতাংশ ছাড়ে ২৫ দিনের মধ্যে সরবরাহের আশ্বাসে ৯ হাজারের অধিক মোটর সাইকেলের অর্ডার পান। মোটরসাইকেলের পাশাপাশি তারা লোভনীয় ছাড়ে মোবাইল, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, গৃহস্থালির অন্যান্য পণ্য বিক্রি নিয়েও অফার দেন।
তিনি আরো বলেন, গ্রাহকদের টাকা সরাসরি মশিউরের নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হতো। অন্যান্য ই-কমার্স ব্যবসার মতো গেটওয়ে সিস্টেম থাকলেও সরাসরি গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হতো। ই-কমার্স নীতিমালার কারণে পণ্য ডেলিভারি না হলে টাকা গেটওয়েতে আটকে থাকার কারণে সেসব টাকা গ্রাহকদের রিফান্ড করা হতো। সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রদানকৃত অর্থ নিয়ে তারা প্রতারণা করতো। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, আকাশ নীলে প্রায় ৪০ জন অস্থায়ী কর্মচারী ছিলেন। যাদের মাসিক ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা বেতন দেয়া হতো। গ্রাহকের টাকায় ধানমন্ডিতে তিন কোটি টাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনেন। রয়েছে প্রিয়াশ ও সিএইচআর মডেলের দুটি দামি গাড়ি। এছাড়া কোম্পানির চারটি টাটা পিকআপ রয়েছে। স¤প্রতি মশিউর দুবাই পালানোর জন্য ভিসা ও বিমান টিকিট ক্রয় করেন। তার আগেই গ্রেফতার হন মশিউর ও তার সহযোগী রনি।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৮ মার্চ এক ভুক্তভোগী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ‘আকাশ নীল’ এর এমডি ও ডিরেক্টরসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন । আরও কয়েকজন ভুক্তভোগীও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন