আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে ওমরাহ যাত্রীদের মাঝে বিমানের টিকিটের জন্য দেখা দিয়েছে হাহাকার। টিকিট ক্রয়ের জন্য ট্রাভেল এজেন্সিগুলোতে গিয়েও অনেকেই টিকিট পাচ্ছে না। বিমানসহ বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো সিন্ডিকেট করে মধ্যপ্রাচ্যগামী টিকিটের মূল্য তিনগুণ বাড়িয়েছে। চড়া দামে টিকিটের টাকা যোগাতে বিদেশগামী কর্মী ও ওমরাযাত্রাীদের নাভিশ্বাস উঠছে।
করোনা মহামারির দরুণ বিগত দু’বছর হজ ও ওমরাহ পালন বন্ধ থাকায় এবার আসন্ন রমজানে ওমরাযাত্রীর চাপ বাড়ছে। অগ্রিম টাকা দিয়েও ওমরাযাত্রীরা কাঙ্খিত সময়ে বিমানসহ বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের টিকিট পাচ্ছে না। অনেকে পরিবার পরিজন নিয়ে রমজানের পবিত্র মক্কা মদিনায় এতেকাফ করার নিয়ত করেও অতিরিক্ত টাকা দিয়েও বিমানের টিকিট পাচ্ছে না। বিমানের কোনো টিকিট বুকিং করা সম্ভব হচ্ছে না। ওমরাযাত্রীদের টিকিট সঙ্কট নিরসনে ওমরাহ এজেন্সির মালিকার অনতিবিলম্বে থার্ড ক্যারিয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন। এ দিকে, রমজান যতই ঘনিয়ে আসছে ওমরাযাত্রীদের চাপও ততই বাড়ছে। আসন্ন রমজানে ওমরাযাত্রীদের ফ্লাইট সঙ্কট নিরসন এবং অধিক সংখ্যক ওমরাযাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যে ঢাকা জেদ্দা রুটে সাউদিয়া আরাবিয়া এয়ারলাইন্স অতিরিক্ত ফ্লাইট চালুর অনুমতি চেয়ে সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত আবেদন জানিয়েছে। অতিরিক্ত ওমরাযাত্রী পরিবহনের জন্য সাউদিয়া এয়ারলাইন্সকে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয়া হবে কি না এমন প্রশ্বের জবাবে গতকাল সোমবার রাতে সিভিল এভিয়েশনের পরিচালক (এয়ার ট্রান্সপোর্ট) মো. ফাইজুল হক ইনকিলাবকে বলেন, সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তিনি বলেন, বিমান বন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ কাজ চলছে রাতে আট ঘন্টা ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। সব দিক খেয়াল রেখেই সাউদিয়া এয়ারলাইন্সের অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
এর আগে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের পর সতর্কতামূলক কঠোর বিধি নিষেধ জারি করে সউদী আরব। তখন ওমরাহ পালনে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এরপর কারফিউ জারি করে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করার পাশাপাশি সব অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে সীমিত পরিসরে ওমরাহ ও হজ কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা হয়।
করোনা সংক্রমণ রোধে পবত্রি মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববিসহ সব স্থানে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ পুনরায় বাধ্যতামূলক করেছে সউদী সরকার। এরই ধারাবাহিকতায় পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে ওমরাযাত্রীদের জন্য তাওয়াফের সারি কমিয়ে ৩৪ সারি করা হয়েছিল। পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণের ৩৪ সারিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পথনির্দেশক স্টিকার লাগানো হয়। এছাড়াও মাস্ক পরিধারন, হাত ধৌত করা, জায়নামাজ নেয়াসহ সব ধরণের সতর্কতামূলক পদক্ষেপ অনুসরণ করা হয়েছিল। মুসল্লি ওমরাযাত্রী ও দর্শনার্থীদের পবিত্র মসজিদুল হারামে প্রবেশের সময়সূচিও বেধে দেয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ‘ইতামারনা’ অ্যাপেরে সাহায্যে নির্ধারিত সময়েই মসজিদে প্রবেশ করতে হয়েছে সবাইকে।
গত বছরের ১৭ অক্টোবর সামাজিক দূরত্ব ও মাস্ক পরাসহ করোনা বিষয়ক বিধি নিষেধ শিথিল করে সউদী আরব। ওই সময় মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদে আগের মতো মুসল্লিদের দিয়ে পুরোপুরি ধারণের অনুমোদন দেয় সউদী সরকার। রাজশাহী ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মুফতি মুস্তাফিজুর রহমান গতকাল ইনকিলাবকে পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে ওমরাযাত্রীদের টিকিট নিয়ে চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, আমার কাছে বর্তমানে দু’হাজার ওমরাযাত্রীর তালিকা রয়েছে। কমপক্ষে দু’হাজার টিকিট পেলে এসব ওমরাযাত্রীকে সউদীতে পাঠাতে পারবো। তিনি বলেন, টিকিটের জন্য দফায় দফায় ধরনা দিয়েও ওমরাহ টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। রাতে কেয়া ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মো. দেলোয়ার হোসেন ইনকিলাবের সাথে আলাপকালে বলেন, বিগত দু’বছর করোনা মহামারি কারণে হজযাত্রী ও ওমরাযাত্রীরা সউদী যেতে পারেননি।
বর্তমানের করোনা মহামারি উন্নতি হওয়ায় ওমরাযাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। রমজান উপলক্ষে অনেক ওমরাযাত্রীই মক্কা মদিনায় বাড়ী ভাড়ার কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। ওমরাযাত্রীদের বিমানের টিকিট সঙ্কটের দরুণ অনেকেরই রমজানে সউদী যাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চয়তার দিকে গড়াচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রমজানে ওমরায় যাওয়ার জন্য প্রায় ত্রিশ হাজার যাত্রী অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যগামী কর্মীদের ওয়ানওয়ে বিমানের টিকিট তিন গুন বাড়ছে। একজন কর্মীর টিকিট ৮০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ওমরাযাত্রীর টিকিট আসা যাওয়ার দাম হচ্ছে ৯০ হাজার টাকা। এতে এয়ারলাইন্সগুলোর নিয়োগকৃত ট্রাভেলস এজেন্সিগুলো বিদেশগামী কর্মীর টিকিট বিক্রিতেই বেশি লাভের মুখ দেখছে। তিনি আসন্ন রমজানে ওমরা টিকিট সঙ্কট নিরসনে দ্রুত কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ ও থার্ড ক্যারিয়ার চালুর জোর দাবি জানান। আগামী ২৭ মার্চ বিশ জন ওমরাযাত্রীর টিকিট ক্রয়ের জন্য দ্বারে দ্বারে ধরর্না দিয়েও কোনো সাড়া মিলছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
কোবা হজ গ্রুপের চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দুই বছর মানুষ হজ ও ওমরায় যেতে পারেননি। আল্লাহপাক অশেষ দফায় করোনা থেকে মুক্তি পাওয়ায় মানুষ এবার ওমরা পালনে সউদী যাওয়ার জন্য মরিয়া। তিনি বলেন, অগ্রিম টাকা দিয়েও ওমরা টিকিট পাচ্ছি না। টিকিট সঙ্কট চরম আকার ধারণ করায় ওমরাযাত্রীরা চরম হতাশায় ভুগছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি ওমরা টিকিট সঙ্কট নিরসনে দ্রুত কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার জন্য সরকারের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন