ইনকিলাব ডেস্ক : সব হিসাব-নিকাশ আর জল্পনা-কল্পনা উল্টে দিয়ে আগামী চার বছরের জন্য হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আমেরিকাকে শ্রেষ্ঠত্বের শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার যে স্বপ্ন তিনি ভোটারদের দেখিয়েছিলেন, সেই স্বপ্নপূরণে তার ওপর আস্থা রেখেছেন বেশিরভাগ ভোটার। দেশ শাসনের ভার তাই তার হাতেই তুলে দিয়েছেন তারা। কীভাবে তিনি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন, তা নিয়েই এই প্রতিবেদন।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার অনেক আগে থেকেই মার্কিন সমাজে ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন ধনকুবের হিসেবে পরিচিত। মার্কিনরা তাকে চেনেন বর্ণাঢ্য ও জাঁকালো জীবনের অধিকারী ব্যবসায়ী হিসেবে। সেই ব্যবসায়ী যে বিশ্ব রাজনীতির ক্ষমতার একেবারে কেন্দ্রে চলে যাবেন, সে কথা হয়তো তার অনেক ঘনিষ্ঠরাও ভাবতে পারেননি। তবে তারা যা ভাবতে পারেননি, তা তিনি করে দেখিয়েছেন।
ট্রাম্পের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৪ জুন কুইন্সে। তার বাবা নিউইয়র্কের আবাসন ব্যবসায়ী ফ্রেড ট্রাম্প। মা মেরি ট্রাম্প ছিলেন স্কটিশ বংশোদ্ভূত মার্কিন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প চতুর্থ। বাবা ধনী হলেও তার প্রতিষ্ঠানে একেবারে ছোট পদের কাজ দিয়ে শুরু করতে হয়েছে ট্রাম্পকে। তবে তিনি দমে যাননি। ছোটবেলা থেকেই পরিচিতি পান উদ্যমী আর তেজস্বী হিসেবে। ছোটবেলায় পড়াশোনায় যত না আগ্রহী ছিলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি ব্যস্ত ছিলেন দুরন্তপনায়। সামাল দিতে না পেরে মা-বাবা ট্রাম্পকে ১৩ বছর বয়সে সামরিক একাডেমিতে পাঠিয়ে দেন। ১৯৬৮ সালে ট্রাম্প পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে পড়াশোনা শেষ করেন।
ট্রাম্প বাবার কাছ থেকে অর্থ ধার করে নিজেই আবাসন ব্যবসা শুরু করেন। সফলও হন। পরে অবশ্য বাবার সঙ্গেই ব্যবসায় যোগ দেন এবং ব্যবসার প্রসার ঘটাতে থাকেন। লোকসানের মুখ যে দেখেননি, তা নয়। তবে দমে যাননি তিনি। ব্যর্থতার মুখে ট্রাম্প ১৯৭৫ সালে হায়াত হোটেল করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করে নতুন হোটেল নির্মাণের কাজ শুরু করেন। ১৯৮০ সালে গ্র্যান্ড হায়াত হোটেল খুলে দেয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যে তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। লোকসানি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসায়িক সাফল্য এনে দেয়ায় তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। আবাসন ব্যবসার পাশাপাশি ক্যাসিনো ও হোটেল ব্যবসাতেও সফল হন তিনি। ১৯৯৯ সালে বাবার মৃত্যুর পর ব্যবসার হাল ধরেন তিনি। ২০০৪ সালে এনবিসি টেলিভিশনে রিয়্যালিটি শো শুরু করেন ট্রাম্প। টানা ১৪টি সিজন ওই শো উপস্থাপনা করেন তিনি।
ট্রাম্প তিনবার বিয়ে করেছেন। তার প্রথম স্ত্রী চেক অ্যাথলেট ও মডেল ইভানা মেয়ার। এ দম্পতির তিন সন্তান। ১৯৯০ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। দ্বিতীয় স্ত্রী মডেল মার্লা ম্যাপলসকে ১৯৯৩ সালে বিয়ে করেন ট্রাম্প। ১৯৯৯ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। ২০০৫ সালে তৃতীয় ও বর্তমান স্ত্রী মডেল মেলানিয়াকে তিনি বিয়ে করেন। বিয়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন এবারের নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটন ও তার স্বামী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। এই ঘরে এক সন্তান।
ব্যবসায়ী হিসেবেই চলছিল ট্রাম্পের দিনকাল। মাত্র ১৭ মাস আগে তিনি রাজনীতিতে আসেন। ১৬ প্রার্থীকে পরাজিত করে রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন চূড়ান্ত করেন ৭০ বছর বয়সী ট্রাম্প। বেশির ভাগ জনমত জরিপে তিনি পিছিয়ে ছিলেন। এমনকি তিনি তিনটি প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কেও হেরে যান। অভিবাসী, মুসলমান ও নারীদের নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে নিজ দল ও দেশে সমালোচিত হন তিনি। উঠেছিল একের পর এক যৌন হয়রানির অভিযোগ। মার্কিন বুদ্ধিজীবী, অধিকারকর্মী ও সংস্কৃতিকর্মীদের বেশিরভাগই তার প্রতি আস্থা দেখাননি। তবে সেসব এখন অতীত। চমক দেখিয়ে বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হলেন ব্যবসা থেকে রাজনীতিতে আসা ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন