শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

কোরআন মানব জাতির জন্য হেদায়েত

মাওলানা মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব | প্রকাশের সময় : ২৪ মার্চ, ২০২২, ১২:০০ এএম

পৃথিবীতে অনেক নবী-রাসূল এসেছেন। তাঁদের প্রতি আল্লাহ তাআলা অনেক কিতাবও নাজিল করেছেন। কিন্তু সেই সব কিতাব স্বরূপে সংরক্ষিত থাকেনি। নানা ব্যক্তি গোষ্ঠী ও ফেতনার কবলে পড়ে বিকৃত হয়েছে। মানুষের মনগড়া কথাবার্তা দিয়ে পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু কুরআনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো : কোনো মিথ্যা এর পর্যন্ত পৌঁছতে পারে না। না এর সম্মুখ থেকে না পেছন থেকে। (সূরা হা মীম সাজদাহ : ৪২)। মূলত আল্লাহ তাআলা নিজেই কোরআন হেফাজত ও সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন। এর মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত সকল মানুষকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্কের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। বলেছেন : তোমরা আল্লাহর রজ্জু (অর্থাৎ এই কোরআন) মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো। বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (সূরা আলে ইমরান : ১০৩)।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন : নিশ্চয়ই এই পথ বিপদসংকুল। তাতে দাঁড়িয়ে আছে শয়তান। ডাকছে, হে আল্লাহর বান্দা, এদিকে এসো। পথ এদিকে। মূলত ওরা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করতে চায়। সুতরাং তোমরা আল্লাহর রজ্জু মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো। নিশ্চয়ই আল্লাহর রজ্জু হলো তাঁর কিতাব। (তাফসীরে তাবারী ৫/৬৪৫)।

অতএব, এই কোরআন যারা আঁকড়ে ধরবে, ধারণ করবে, গ্রহণ করবে তারা দুনিয়া-আখেরাতে সফল হবে এবং সকল অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকবে। যারা এই কোরআন থেকে বিমুখ হবে, তাদের জন্য থাকবে মহা সঙ্কটময় জীবন। আল্লাহ তাআলা বলেন : যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য রয়েছে মহা সঙ্কটময় জীবন। কিয়ামতের দিন তাকে আমি উঠাব অন্ধ করে। সে বলবে, হে আমার রব! আপনি আমাকে অন্ধ করে উঠালেন কেন? আমি তো (দুনিয়াতে) চক্ষুষ্মান ছিলাম। আল্লাহ বলবেন, এভাবেই তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল। তুমি তা ভুলে থেকেছিলে। আজ তাই এমনিভাবে তোমাকে ভুলে থাকা হবে। (সূরা ত্বহা : ১২৪-১২৬)।

বিখ্যাত তাফসীরবিদ সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : যে ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করবে এবং কুরআনের বিধিবিধান মেনে চলবে আল্লাহ তার জন্য এই দায়িত্ব নিয়েছেন যে, সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্ট হবে না। আখেরাতেও দুর্দশাগ্রস্ত হবে না।

আরেক বর্ণনায় আছে, তিনি বলেন : যে ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করবে, কুরআনের বিধান অনুযায়ী চলবে, আল্লাহ তাআলা তাকে সকল ভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা করবেন। কিয়ামতের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি থেকে হেফাজত করবেন। তার প্রমাণ আল্লাহ তাআলার এই বাণী : যে আমার হেদায়েতের অনুসরণ করবে সে বিপথগামী হবে না। দুঃখগ্রস্ত হবে না। (তাফসীরে তাবারী ১৮/৩৮৯)।

এখানে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) কুরআনের অনুসরণ প্রসঙ্গে প্রথমে বলেছেন তিলাওয়াতের কথা। এরপর বিধিবিধান মেনে চলার কথা। কোরআন মাজীদ নিজে তিলাওয়াত করলে যেমন ফায়েদা ও সওয়াব, তেমনি অন্যের তিলাওয়াত শোনায়ও অনেক ফায়েদা ও সওয়াব।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত বিখ্যাত হাদিস, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের একটি হরফ তিলাওয়াত করবে তার জন্য রয়েছে একটি নেকী। আর প্রতিটি নেকী দশ গুণ বৃদ্ধি পাবে। আমি বলছি না, ‘আলিফ লাম মীম’ একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ, মীম একটি হরফ। (জামে তিরমিযী : ২৯১০)।

অর্থাৎ কেউ যদি শুধু ‘আলিফ লাম মীম’ তিলাওয়াত করে তাহলেও ত্রিশ নেকী লাভ করবে। এভাবে যেকোনো সূরা তিলাওয়াত করা হবে তার প্রতি হরফে কমপক্ষে দশটি নেকী আল্লাহ তাআলা দান করবেন। কুরআনের একেকটি আয়াতে একেকটি সূরায় কতগুলো করে হরফ থাকে! সুবহানাল্লাহ।

হযরত আবু উমামা রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি : তোমরা কোরআন তিলাওয়াত করো। কেননা, কোরআন কিয়ামতের দিন তিলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশকারী হিসেবে হাজির হবে। (সহীহ মুসলিম : ৮০৪)। হাদিস শরীফে কোরআন তিলাওয়াতের আরো অনেক ফজিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Imam Hossain ২৪ মার্চ, ২০২২, ৬:১৩ এএম says : 0
Allah hu Akbar. Alhamdulillah
Total Reply(0)
Kamrul Sharif ২৪ মার্চ, ২০২২, ৬:১৩ এএম says : 0
কোরআন নাজিলের মাধ্যমে আল্লাহতায়ালা দ্বীনকে মানব জাতির জন্য পূর্ণাঙ্গ রূপদান করেছেন। বন্ধ করে দিয়েছেন নবুওয়ত ও আসমানি কিতাবের দরজা সুতরাং এটা সর্বশেষ খোদায়ী বিধান গ্রন্থ।
Total Reply(0)
Mamunur Rashid ২৪ মার্চ, ২০২২, ৬:১৩ এএম says : 0
আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘আজকের এই দিনে আমি দ্বীনকে তোমাদের জন্য পরিপূর্ণ করে দিলাম।’ বস্তুত কোরআন নাজিল শেষ করার পরই আল্লাহ এই ঘোষণা প্রদান করেন। কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির জীবন সমস্যার সকল সমাধান কোরআনে রয়েছে।
Total Reply(0)
Mir Irfan Hossain ২৪ মার্চ, ২০২২, ৬:১৩ এএম says : 0
কোরআন একাধারে বিশ্ব পরিচালনার সংবিধান, বিজ্ঞান গ্রন্থ, সমাজ বিজ্ঞান এবং একটি আধ্যাত্মিক গ্রন্থ। জ্ঞানের এমন কোনো শাখা আজও উদ্ভব হয়নি, যে সম্পর্কে কোরআনে উল্লেখ নেই। কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির সব চাহিদা ও জিজ্ঞাসার জবাব এই কোরআন।
Total Reply(0)
Muhammad Abdul Waresh ২৪ মার্চ, ২০২২, ৬:১৪ এএম says : 0
তথ্য-প্রযুক্তির চাকচিক্যময় চোখ ধাঁধানো এ যুগেও যে গ্রন্থটি সম্পর্কে বিশ্ববাসীর বিস্ময়ের অন্ত নেই তার নাম কোরআনে কারিম।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন