শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এস কে সিনহার বিরুদ্ধে আরো মামলা করছে দুদক

যুক্তরাষ্ট্রে তিন তলা বাড়ি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২২, ১২:৩২ এএম

অবসরে যাওয়া প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ লক্ষ্যে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করেছে সংস্থাটি। বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে দায়ের হবে এ মামলা। দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে এ তথ্য।
সূত্রমতে, প্রধান বিচারপতি থাকাকালে এস কে সিনহা বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন; এমন অভিযোগের ভিত্তিতে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ শুরু করে দুদক। অনুসন্ধান পর্যায়ে সংস্থাটির উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান তথ্য-উপাত্ত চেয়ে কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সিংগাপুরসহ কয়েকটি দেশে চিঠি দেন। এ প্রেক্ষিতে এস কে সিনহা একটি তিন তলা বাড়ির মালিক-এমন রেকর্ডপত্র পাঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ তথ্যের ভিত্তিতেই আরেকটি মামলার প্রস্তুতি নিয়েছে সংস্থাটি।
সূত্রমতে, এস কে সিনহার সহোদর অনন্ত কুমার সিনহা যুক্তরাষ্ট্রে একজন ডেন্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। তিনি ওই দেশের ব্যাংক থেকে ৩০ বছরের জন্য ১০৮৭৫০ মার্কিন ডলার ঋণ নিয়ে ১৪৫,০০০.০০ ডলার দিয়ে একটি বাড়ি কেনেন। ২০১৮ সালের ১২ জুন ২৮০,০০০ ডলার ক্যাশ দিয়ে অপর একটি বাড়ি কেনেন। অনন্ত কুমার সিনহার ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংক, প্যাটারসন, নিউজার্সি এর অ্যাকাউন্ট নং-৮৫৮০৩৩৭৫-এ ১১ এপ্রিল, ২০১৮ থেকে ২০ জুন, ২০১৮ পর্যন্ত ১৯৬,৪৫৮ ডলার জমা হয়। ৫ মার্চ, ২০১৮ থেকে ২৮ মে, ২০১৮ পর্যন্ত ৬০,০১০ ডলার জমা হয়। এই ডলার ইন্দোনেশিয়া এবং কানাডার ‘রয় এ গ্রুপ’র কাছ থেকে প্রাপ্ত মর্মে জানানো হয়। প্রকৃতপক্ষে এটি একটি সেল কোম্পানি। অন্যদিকে, অনন্ত কুমার সিনহা ১৫৭,০৯০ ডলারের ক্যাশিয়ার চেক সংগ্রহের জন্য তার বড় ভাই সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নিয়ে ভ্যালি ন্যাশনাল ব্যাংকে আসেন । সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানান, আমেরিকার প্যাটারসন এলাকায় বাড়ি ক্রয়ের জন্য বন্ধুর কাছ থেকে তিনি অর্থ পয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাংলাদেশে প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিভিন্নভাবে অবৈধ টাকা অর্জন করে তা হুন্ডিসহ বিভিন্ন কায়দায় যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করে তার ছোট ভাইয়ের অ্যাকাউন্টে উক্ত অর্থ স্থানান্তর করেন। তা দিয়েই ১৭৯, জ্যাপার স্ট্রিট, প্যাটারসন নিউ জার্সি ০৭৫২২’ তে ১২ জুন, ২০১৮ ইংরেজি তারিখে ২৮০,০০০ ডলার ক্যাশ দিয়ে একটি বাড়ি কেনেন। দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে দাবি করা হচ্ছে, এ বাড়িটির প্রকৃত মালিক সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।
এই প্রেক্ষাপটে সাবেক এই প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে অর্থ উর্পাজন করে অপরাধলব্ধ অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন-মর্মে অভিযোগ আনা হচ্ছে। অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, এসকে সিনহা অবৈধ অর্থ নিজ ভোগ দখলে রেখে এর অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান গোপন করে বা এর ছদ্মাবরণে ২৮০,০০০ ডলার পাচার করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২), (৩) ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়, এসকে সিনহার নরেন্দ্র কুমার সিনহার রাজধানীর উত্তরার মতো জায়গায় বাড়ি করার আর্থিক সামর্থ নেই। তার বক্তব্য ও অন্যান্যদের বক্তব্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, উত্তরার প্লটটি মূলত সুরেন্দ্র কুমার সিনহারই। তিনি ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে তার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে উত্তরার সেক্টর-৮, রোড নং-৬, বাড়ি নং-১/এ প্লটটি রাজউক থেকে অনুমোদন করান। তিনিই এ প্লটের কিস্তি পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে প্লটের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেন শংখজিৎ সিংহকে। এ প্লটের ওপর যে বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে, তা মূলত এসকে সিনহারই। তিনিই কৌশল খাটিয়ে তার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে প্রথমে প্লটটি অনুমোদন করান। পরে ব্যাংক ঋণ করান। পরবর্তী পর্যায়ে, আয়কর আইনজীবীর মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে তার ভাইয়ের নামে ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আয়কর নথিতে বাড়ি তৈরির টাকার উৎস দেখান। বাড়িটিকে বৈধ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু রেকর্ডপত্র যাচাই শেষে এবং এ সংক্রান্ত বক্তব্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, উত্তরা আবাসিক এলাকার ৪ নং সেক্টরের ৬ নং রাস্তার ৫ কাঠার আয়তনের ১/এ নং প্লটটি এবং তার ওপর নির্মিত বাড়িটি মূলত নরেন্দ্র কুমার সিনহারই। নরেন্দ্র কুমার সিনহা অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে অপরাধমুলক বিশ্বাসভঙ্গ করে মিথ্যা তথ্য ও সম্পদ গোপন করে তা স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে ৬,৩৫,৩৭,৭৬০/- টাকার অবৈধ ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে অপরাধ করেছেন মর্মে প্রমাণিত হয়। এটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা; দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ধারা ও ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরাধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২), (৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ-মর্মে উল্লেখ করা হয়। এর আগে ৪ কোটি টাকার ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা একটি মামলায় এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় দুদক। ওই মামলার বিচারে এস কে সিনহাকে ১১ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
প্রবাসী-একজন ২৮ মার্চ, ২০২২, ৭:৪৩ এএম says : 0
এই লোকটির মাধ্যমে কত লোকের মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত হয়েছিল; বলা হয়েছিল ন্যয়বিচার হয়েছে। মহান আল্লাহতালা এই লোকটিকে তার জীবদ্দশায় লাঞ্ছিত করছেন; যারা তাকে অন্যায় কাজে মদত দিয়েছে তাদের পরিণতি কি এ ধরণের হবে না?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন