শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

জেন্ডার সমতা নিশ্চিতে নারী-পুরুষ পারষ্পারিক শ্রদ্ধাবোধ জরুরী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০২২, ৫:৪৯ পিএম

গৃহস্থালী কাজের মাধ্যমে নারীরা পারিবারিক ক্ষেত্রে উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা স্বত্ত্বেও তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না। আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সর্ব ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশীদারিত্ব এবং সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, নারীর গৃহস্থালী কাজের মূল্যায়ন ইত্যাদি। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক এ বছর আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য”। জেন্ডার সমতা নিশ্চিতে গৃহস্থালী কাজের অর্থমূল্য পরিশোধ নয় বরং নারীদের প্রাপ্য সম্মান প্রদান ও গৃহস্থালী কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা আবশ্যক।

আজ ২৮ মার্চ ২০২২ সকাল ১১.০০ টায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক সংস্থার কৈবর্ত সভাকক্ষে আয়োজিত “ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এবং অগ্রযাত্রায় জেন্ডার সমতা নিশ্চিতে করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী’র সভাপতিত্বে এবং কমিউনিকেশন অফিসার শানজিদা আক্তারের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন হেল্থ ব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার আঞ্চলিক পরিচালক দেবরা ইফরইমসন, দি পিপলস ইউনির্ভাসিটি বাংলাদেশের বিভাগীয় প্রধান (সমাজকর্ম বিভাগ) জনাব হাবিবুর রহমান, ডেভেলপমেন্ট ফর ডিজএ্যাডভান্টেজ পিপল (ডিডিপি) এর নির্বাহী পরিচালক কাজী সোহেল রানা ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্টের কর্মসূচি প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান।
সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, পারিবারিকভাবে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন। নারীদের নিজেদের মাঝেই পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও মূল্যায়নের জায়গাটি প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। গৃহস্থালী কাজের মাধ্যমে নারীরা পারিবারিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা সত্ত্বেও যথাযথ মূল্যায়ন পায় না। সমাজব্যবস্থা এমন হওয়া উচিৎ যেখানে নারী পুরুষ পরষ্পরের প্রতি দায়িত্বশীল ও শ্রদ্ধাশীল হবে এবং প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গীর ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।
কাজী সোহেল রানা বলেন, সরকার নারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও প্রকৃতপক্ষে নারীর অধিকার এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শহরের নারীদের তুলনায় গ্রামীণ নারীরা কম সুযোগ-সুবিধা পায়। শহরের নারীদের পাশাপাশি গ্রামের নারীদের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বিশেষত বাল্য বিবাহ রোধ, নারীদের সু-স্বাস্থ্য, শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশেষভাবে জোরারোপ করতে হবে।
হাবিবুর রহমান বলেন, সংসারে একজন নারী যতটা সময় ও কায়িক পরিশ্রম করেন তা যে কোন চাকরির চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। শুধুমাত্র গৃহে নয়, দেশের অর্থনীতিতে নারীর গৃহস্থালী কাজের মূল্য রয়েছে। নারীরা দিনের অধিকাংশ সময় রান্না, কাপড় ধোয়া, ঘর পরিষ্কার রাখা, সকলের সেবা করা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে আমাদের পরিবার তথা সমাজকে সুন্দর ভাবে পরিচালিত করার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করছেন। কিন্তু এ কাজকে কেবলমাত্র নারীদের কাজ বলে অবমূল্যায়ন করার মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। জেন্ডার সমতা নিশ্চিতে নারীদের প্রাপ্য সম্মান প্রদান ও গৃহস্থালী কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা আবশ্যক।
দেবরা ইফরইমসন বলেন, উন্নয়নশীল দেশের পাশাপাশি উন্নত দেশেও নারী পুরুষের বৈষম্য এখনও বিদ্যমান। এক্ষেত্রে নারী পুরুষ উভয়ের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরী। নারীদের নিজেদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। প্রতিযোগিতা নয় বরং সহযোগিতার মাধ্যমে নারী-পুরুষ একত্রে কাজ করতে হবে। পারিবারিক শিক্ষা নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধের জায়গাকে আরও বেশী মসৃণ করে। পরিবারের সদস্যদের মানসিকতার পরিবর্তন নারীদের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখবে।
গাউস পিয়ারী বলেন, সম্পত্তির উত্তরাধিকার বিষয়ে নারী পুরুষের সমান অধিকার স্থাপনের লক্ষ্যে আইন সংশোধন ও বাস্তবায়ন জরুরী। নারীদের নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নারীদের সচেষ্ট হতে হবে। জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি, ২০১১ তে জাতীয় অর্থনীতির সকল কর্মকান্ডে নারীর সক্রিয় ও সম-অধিকার নিশ্চিতকরণের কথা বলা হয়েছে। অর্থনীতিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অবদান অপরিসীম। গৃহস্থালী কাজের মাধ্যমে নারীদের ব্যাপক অবদান জাতীয় অর্থনীতিতে এখনো গ্রহনযোগ্য নয়। অর্থনীতিতে নারীর অবদান সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হলে আরো বৃহত্তর পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে আরও অংশগ্রহণ করেন নেটিভ, সুজন, মানবিক সাহায্য সংস্থা, আপন ফাউন্ডেশন, টিএমএসএস, মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র এবং ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ এর কর্মকর্তাবৃন্দ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন