রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ক্রিস রককে চড় উইল স্মিথের

ইতিহাস গড়লেন শ্রবণশক্তিহীন অভিনেতা কোটসুর

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০২২, ১২:০১ এএম

এবারের অস্কারের মঞ্চ ছিল নানা ঐতিহাসিক মুহূর্তে ভর্তি। একদিকে যেমন ক্রিস রক এবং উইল স্মিথের বিতর্ক প্রায় সব কিছুকে ছাপিয়ে গেল, উল্টোদিকে সিনেমাপ্রেমী সব দৃষ্টি কেড়ে নিলেন ট্রয় কোটসুর।
পুরস্কারের মঞ্চে সঞ্চালকের সঙ্গে অভিনেতার ঝামেলা খুব একটা হয় না। টুকরো-টাকরা রসিকতা চালু থাকে। কিন্তু তা কখনওই হাতাহাতি বা মারধরে গড়ায় না। বাংলাদেশ সময় গতকাল সকালে অস্কারের মঞ্চে সেটাই ঘটল। তার স্ত্রীকে নিয়ে চটুল রসিকতার ‘শাস্তি’ হিসেবে সোজাসুজি অস্কারের মঞ্চে উঠে গিয়ে সঞ্চালক কমেডিয়ান ক্রিস রককে সপাটে একটি চড় মেরেছেন স্মিথ। যিনি ঘটনাচক্রে, তার কিছুক্ষণের মধ্যে ‘কিং রিচার্ড’ ছবিতে তার অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন।
কিন্তু তার আগেই ঘটনা ঘটে গিয়েছে। যা টেলিভিশনে দেখে বিস্ফারিত বিশ্বের কোটি কোটি দর্শক। বিধিমতোই অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে সঞ্চালক ক্রিস নানা ধরনের রসিকতা করছিলেন। তার মধ্যেই একটি রসিকতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন স্মিথের স্ত্রী জাডা পিঙ্কেট। সঞ্চালনা করতে করতেই ক্রিস বলেন, ‘আমি জি আই জেন-এর সিক্যুয়েলের অপেক্ষায় রয়েছি।’ দর্শকাসনে একেবারে সামনের সারিতে সবুজ গাউন পরিহিতা জাডা ওই মন্তব্য শুনে দৃশ্যতই অসন্তুষ্ট হন। তার মুখভঙ্গিতে তা স্পষ্ট বোঝাও যাচ্ছিল।
এর পরেই নিজের আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ান স্মিথ। লম্বা লম্বা পায়ে এগিয়ে যান মঞ্চের দিকে। মঞ্চে উঠে কোনও বাক্যব্যয় না-করে ডানহাতে সপাটে ক্রিসের বাঁ-গালে একটি চড় কষান! আচমকা চড়ের অভিঘাতে ক্রিস খানিকটা হকচকিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বিষয়টি সামলে নেন। স্মিথ কোনও বাক্যব্যয় করেননি। এক ঝলকে মনে হয়েছিল, পুরো বিষয়টি সম্ভবত ‘সাজানো’। যেমন অনেক সময় অনেক পুরস্কারের মঞ্চে হয়ে থাকে। অনুষ্ঠানের মধ্যে খানিকটা ‘মশলা’ আনার জন্য।
কিন্তু তার পরেই বোঝা যায়, এটা কোনও ‘সাজানো ঘটনা’ নয়। কারণ, নিজের আসনে ফিরে আবার চিৎকার করে স্মিথ বলতে থাকেন, ‘তোমার (নোংরা) কথা থেকে আমার স্ত্রীকে দূরে রাখো!’ বস্তুত, ক্রিসের উদ্দেশ্যে ছাপার অযোগ্য চার অক্ষরের শব্দও ব্যবহার করেন ক্রুদ্ধ স্মিথ। প্রসঙ্গত, ২০১৬-তেও সঞ্চালনার সময়ে পিঙ্কেটকে নিয়ে রসিকতা করেছিলেন ক্রিস। এ বারও তিনি বোঝাতে যান, রসিকতাই করছিলেন। তার চেয়ে বেশি কিছু নয়। কিন্তু স্মিথকে থামানো যায়নি। ক্রিসের ওই বক্তব্যের পরেও চিৎকার করে তাকে একই কথা বলেন স্মিথ।
১৯৯৭ সালের ছবি ‘জি আই জেন’-এ নায়িকার চরিত্রে অভিনেত্রীর মাথায় চুল কম থাকা নিয়ে বিস্তর চর্চা হয়েছিল। স্মিথের স্ত্রী জাডার মাথাতেও চুল কম। অনেকটা মস্তক মুন্ডনের পর সদ্য চুল গজালে যেমন হয়, তেমনই। সে কারণেই সম্ভবত রসিকতা করে জাডাকে ‘জি আই জেন ২’-এর নায়িকার ভূমিকায় দেখার বাসনার ইঙ্গিত করেন ক্রিস। প্রসঙ্গত, ‘অ্যালোপেশিয়া’ নামে একটি রোগে আক্রান্ত উইল স্মিথের ঘরনি জাডা। এই রোগের শিকার হলে মাথার চুল পড়ে যায়। জাডার ক্ষেত্রেও তেমনই হয়ে থাকবে। কিন্তু স্ত্রীর অসুস্থতা নিয়ে অস্কারের মঞ্চে সঞ্চালক ক্রিস রসিকতা করাতেই মেজাজ হারান স্মিথ।
অস্কারের মঞ্চে অনুষ্ঠানে এমন নজিরবিহীন ঘটনার পরে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কারে সম্মানিত হন স্মিথ। ধন্যবাদ জ্ঞাপক ভাষণে তিনি বারবার নিজের পরিবারকে ‘আগলে রাখার’ করার কথা বলেন। আমেরিকার টেনিস তারকা দুই বোন ভিনাস এবং সেরিনা ইউলিয়ামসের বাবার ভূমিকার ওই ছবিতে অভিনয় করেছেন স্মিথ। ধন্যবাদজ্ঞাপক ভাষণে তিনি বলেন, ‘যে ভাবে ভিনাস-সেরিনার বাবা তাদের এবং তাদের পরিবারকে আগলে রেখেছিলেন, তা প্রত্যেক মানুষের কর্তব্য। আমি এটা শিখেছি।’ অনেকেরই ধারনা, স্ত্রীকে ‘আগলে রাখার’ দিকেই ইঙ্গিত করেছেন স্মিথ। তিনি মানুষকে ভালবাসায় বিশ্বাস করেন বলেও তার ভাষণে জানান স্মিথ। ওই ঘটনার জন্য পরে সঞ্চালক ক্রিসের কাছে ক্ষমাও চান অস্কারজয়ী অভিনেতা।
এদিকে, শ্রবণশক্তিহীন অভিনেতা ট্রয় কোটসুর ‘কোডা’ ছবির জন্য সেরা সহ-অভিনেতার সম্মান পেলেন। উপস্থিত সকলেই তাকে সম্মান জানাতে উঠে দাঁড়ান। মূক ও বধিরদের সাংকেতিক ভাষায় তাকে সম্মান জানালেন অনেকেই। ট্রয়ও মঞ্চ থেকে বুঝিয়ে দিলেন তার বক্তব্য। আলাদা করে বললেন, ‘কোডা’র পরিচালক সিয়ান হেডেরের কথাও। কীভাবে সিয়ান তার কাজটি সহজ করে দিয়েছিলেন, সেকথাও বুঝিয়ে দিলেন।
এর আগে বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন ট্রয় কোটসুর। তার মধ্যে রয়েছে জিম ক্যারি অভিনীত ‘দ্য নাম্বার ২৩’ এবং ‘ইউনিভার্সাল সাইন’-এর মতো ছবি। ছোটপর্দাতেও ‘স্ট্রং মেডিসিন’, ‘ক্রিমিনাল মাইন্ডস’-এর মতো জনপ্রিয় শোয়ে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু ট্রয় প্রথম শ্রবণশক্তিহীন অভিনেতা নন, যিনি এই পুরস্কারটি পেলেন। ১৯৮৬ সালে ‘চিলড্রেন অব আ লেসার গড’ ছবির জন্য অস্কার পান অভিনেত্রী মার্লি ম্যাটলিন। তিনিও শ্রবণশক্তিহীন। অস্কারের মঞ্চে সেই প্রথম বার কোনও শ্রবণশক্তিহীন অভিনেতা বা অভিনেত্রী পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ট্রয় এই পুরস্কার পাওয়ায় দ্বিতীয় বার কেউ এটি পেলেন। সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, পেজ সিক্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
Zakaria Amin ২৯ মার্চ, ২০২২, ৭:৪২ এএম says : 0
মুখে প্রতিবাদ জানাতে পারতো, চড় মারা ঠিক হয়নি। সমগ্র দুনিয়ার মানুষ এই শো দেখছে, সবার ই আত্মসম্মান বোধ আছে। চড় না মেরে আগে সাবধান করতে পারতো।
Total Reply(0)
Sukanya Paul ২৯ মার্চ, ২০২২, ৭:৪২ এএম says : 0
Won an Oscar but lost respect
Total Reply(0)
Hafiz Khan ২৯ মার্চ, ২০২২, ৭:৪২ এএম says : 0
এখন হলিউডের দেখাদেখি বলিউড আর ঢালিউড মন্চে চর-থাপ্পর শুরু না করলেই হয়।
Total Reply(0)
Nowfel Mahmud ২৯ মার্চ, ২০২২, ৭:৪২ এএম says : 0
It's okay for his son's friend to sleep with his wife but not okay for a comedian to make a joke about his wife?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন