শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

আইসিডিডিআরবিতে ঠাঁই নেই

প্রায় প্রতি মিনিটে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছেন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০২২, ১২:০৪ এএম

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ এবং করোনাভাইরাসের মৃত্যু ও শনাক্ত কমলেও চৈত্রের মাঝামাঝি ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের এলাকায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েই চলছে। গরম আর সাপ্লাইয়ের দুষিত পানি পান করায় এ রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। আইসিডিডিআর,বি’তে যায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় তাঁবু টানিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সেখানে যারা যায়গা পাচ্ছেন না তারা বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন বলে জানা গেছে। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় অলিগলিতে গজিয়ে উঠা হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়ে গেছে।
জানতে চাইলে আইসিডিডিআর,বি’র অ্যাসিস্টেন্ট সায়েন্টিস্ট ডা. শোয়েব বিন ইসলাম ইনকিলাববে বলেন, খাবার ও পানির মাধ্যমে ডায়ারিয়ার জীবাণু সংক্রমিত হয়। ঢাকার যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, মোহাম্মদপুর, শনির আখড়া, শ্যামপুর, উত্তরা থেকে বেশি রোগী আসছেন। এবার ডায়রিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে শিশুদের তুলনায় প্রাপ্ত বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি। ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদ পানি ও খাবারের বিকল্প নেই। সবচেয়ে ভালো ঘরে তৈরি করা খাবার ও ফুটানো পানি খেতে হবে। পাশাপাশি বারবার হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
রাজধানীর মহাখালিস্থ আইসিডিডিআর,বি’র হাসপাতালে প্রায় প্রতি মিনিটে মিনিটে ডায়রিয়ার আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৩৮ জন ডায়রিয়ার আক্রান্ত রোগী হাসপাতালটিতে ভর্তি হয়েছেন। আর গত ১৪ ঘণ্টায় (অর্থাৎ রাত ১২ টার পর থেকে) গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত ভর্তি হয়েছেন ৭৬৯ জন। এই সংখ্যা আগের দিন উল্লিখিত সময়ে ছিল ৭২৪ জন। ডায়রিয়ার রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। তবে সেখানে বিনা পয়সায় এবং ভালো চিকিৎসা পাওয়ায় ঢাকা ও আশপাশের সব রোগীই এই আন্তর্জাতিক সেবাকেন্দ্রে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করে থাকেন।
আইসিডিডিআর,বি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালে শয্যা খালি নেই। কয়েকদিন আগেই শয্যা পূরণ হয়ে গেছে। হাসপাতালের বাইরে কয়েকটি তাঁবু টানিয়েও আগত রোগীদের জায়গা দেয়া যাচ্ছে না। তবে যারা ভর্তি হতে পেরেছেন তাদের আত্মীয়-স্বাজনরা খুশি। অন্তত ভালো চিকিৎসা নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এখন হাসপাতালের বাইরে বড় দুইটি অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করে আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রোগীদের বেশিরভাগ বয়স্ক ও শিশু। তবে চিকিৎসাসেবা দেয়ার বিষয়ে তাদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানী ঢাকা শহর ও এর আশপাশের এলাকাগুলোয় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। যারা সাপ্লাইয়ের পানি পান করেন তাদের মধ্যেই এই আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। একজন ডাক্তার জানান, হাসপাতালের শয্যার চেয়ে রোগী বেশি হওয়ায় তাঁবু টানিয়ে ডায়রিয়া রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছে আইসিডিডিআর,বি। এখন সেখানে প্রায় ১৫০০ রোগীর ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে দায়িত্বরত একজন চিকিৎসক জানিয়েছেন।
আইসিডিডিআর,বির কয়েকজন চিকিৎসক জানান, এখন ঘণ্টায় ৫০ জনের বেশি রোগী ভর্তি হচ্ছে। যাদের ভর্তি করা যাচ্ছে না তাদের প্রাথমিক স্যালাইন দিয়ে অন্যত্র যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
আইসিডিডিআর,বি সূত্র বলছে, সারাবছর দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ ডায়রিয়া রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। বর্ষা মৌসুম শুরু হওয়ার আগে রোগীর সংখ্যা কিছু বাড়ে। সাধারণত মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে শেষ সপ্তাহে রোগী চূড়ান্তভাবে বাড়ে। কিন্তু এ বছর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। এবার অনেক আগেই ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনে রমজান মাস। ঢাকার প্রায় দেড় থেকে পৌনে দুই কোটি মানুষ রোজা রাখবেন। তাদের জন্য সাপ্লাইয়ের সুপেয় পানির ব্যবস্থা না করলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। কারণ সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় ইফতারের পর মানুষ খাওয়া দাওয়া করবেন। এ সময় সুপেয় পানি পান করতে না পারলে মানুষের পেট খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে।
আইসিডিডিআর,বির বরাত দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সূত্র বলছে, চলতি মাসের ২৯ মার্চ পর্যন্ত আইসিডিডিআর,বির হাসপাতালে মোট ২৭ হাজার ৩৭ জন ডায়রিয়ার আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভার্চুয়াল স্বাস্থ্য বুলেটিনে এ কথা বলেন অধিদফতরের পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুম আসার আগেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে খবর আসছে, ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীতে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশুদ্ধ পানি পান করলে এবং রান্নাসহ বিভিন্ন কাজে সুপেয় পানি ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে ডায়রিয়া রোধ করা যাবে। তিনি বলেন, অল্প ডায়রিয়া থাকতেই চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসাসেবা নেওয়া উচিত। ডায়রিয়াজনিত রোগ একেবারেই চলে যায়নি। আমরা একে মোকাবিলা করতে চাই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ৩০ মার্চ, ২০২২, ১১:৫৪ এএম says : 0
পানির অপর নাম জীবন আমাদের দেশটাকে এত উন্নত করেছে যে আমাদেরকে ময়লা পানি খেতে হয় আর আমাদের শাসকরা আমাদের ট্যাক্সের টাকায় রাজা রানীর মত বাস করে
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন