শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে

গুলিস্তানে লাখো জনতার ঢল : ৩ মাসের কর্মসূচি ঘোষণা মহাসমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ এএম

আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে। আগামী সংসদ নির্বাচনে জনগণ আর কোনো তামাশার নির্বাচন মেনে নেবে না। কারচুপির ইভিএম এর ভোট গহণের পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। জাতীয় সংসদ বহাল রেখে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকার গঠন করে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে। জনগণের দুশমনদের পরাজিত করতে না পারলে দেশে শান্তি আসবে না। দুর্নীতিবাজদের চিরতরে বয়কট করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, শিক্ষা সিলেবাসে ধর্মীয়শিক্ষা সঙ্কোচন বন্ধ, ইসলাম দেশ ও মানবতাবিরোধী বিধিমালা-২০২২ বাতিল, স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র গঠনে ইসলামী হুকুমত কায়েমের লক্ষে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে গতকাল বাদ জুমা রাজধানীর ঐতিহাসিক গুলিস্তান শহিদ মতিউর রহমান পার্কে (গুলিস্তান পার্ক) জাতীয় মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে দলের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই এসব কথা বলেন।
এসব দাবি দাওয়া পূরণের লক্ষ্যে পীর সাহেব চরমোনাই আগামী ১৩ মে থেকে কয়েকটি বিভাগীয় সমাবেশ এবং আগামী ১ জুলাই ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। অবিলম্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধসহ বিভিন্ন দাবি পূরণ করা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণারও হুমকি দেন পীর সাহেব চরমোনাই।
উল্লেখ্য, রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিলে সরকার সেখানে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি। একাধিক শর্তের বিনিময়ে সরকার গতকাল গুলিস্তান পার্কে সমাবেশের অনুমতি দেয়। সকাল থেকেই সারাদেশ থেকে বিভিন্ন যানবাহন যোগে সমাবেশ স্থলে দলীয় লোকজন জড়ো হতে থাকে। দুপুর ১২টার মধ্যেই সমাবেশ স্থলে লাখো জনতার ঢল নামে। গুলিস্তান, মতিঝিল, ফকিরাপুল, টিকাটুলী, মৎস ভবন, পল্টন, বিজয়নগর, প্রেসক্লাব, নবাবপুর, ফুলবাড়িয়া এলাকায় বাস ও যানবাহন রেখে দলীয় নেতা কর্মীরা পায়ে হেঁটে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে যোগদান করেন। এসময়ে গোটা এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে হাজার হাজার পথচারী চরম দুর্ভোগের কবলে পড়েন। শত শত স্বেচ্ছাসেবক কর্মীরা সমাবেশ স্থলে শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করেছে।
এছাড়া সমাবেশের চার দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। মহাসমাবেশ পরিচালনা করেন প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম ও শিক্ষা সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা নেছার উদ্দিন। মহাসমাবেশে আরো যেসব নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন, তারা হচ্ছেন, দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল আউয়াল পীর সাহেব খুলনা, মাওলানা আব্দুল হক আজাদ, দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন্দ, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, দলের মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইফনুছ আহমাদ, সাবেক এমপি প্রফেসর ডা. আব্বাস আলী, ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ, দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, যুগ্ম মহাসচিব আলহাজ আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. আতিকুল ইসলাম, চরমোনাই মরহুম পীর সাহেবের সাহেবজাদা মাওলানা মুফতি আবুল খায়ের, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম, হাফেজ মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ, মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, কে এম আতিকুর রহমান, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ সেক্রেটারি জেনারেল বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবুল কাশেম, ইসলামী যুব আন্দোলন সেক্রেটারি জেনারেল আতিকুর রহমান মুজাহিদ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ নুরুল করীম আকরাম।
আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই ইসলামের সুমহান আদর্শের আলোকে একটি কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, স্বাধীনতার ৫১তম বর্ষে এসেও বর্তমান সরকার ৭১ পূর্ববর্তী সরকারের মতো, নিপিড়নমূলক আচরণ করছে। দেশের সাধারণ নাগরিকদের কোনো অধিকার ও সম্মান নেই। সকল অধিকার ভোগ করছে ক্ষমতাসীন এবং তাদের দোসররা। অথচ স্বাধীনতা উত্তর দেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল, স্বাধীন দেশে তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে। স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মর্যাদা পাবে, সম্মান পাবে। বাক স্বাধীনতা পাবে, ন্যায় বিচার পাবে। জান-মাল, ইজ্জত-আবরু এবং জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবে। অর্থনৈতিক সাম্য ও রুটি রুজির নিশ্চয়তা পাবে। একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পাবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতাপরবর্তী যারাই ক্ষমতায় এসেছে, সবাই জনগণের সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। গণ-মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। দেশ শাসনের নামে জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে। জনগণের সকল মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। গণতন্ত্রের নামে সর্বত্র দলীয়করণ এবং স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। জনতাকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধি দেশে একধরনের দুর্ভিক্ষ জন্ম দিয়েছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষুধা পেটে ঘুমাতে যাচ্ছে। খাবারের জন্য খাদ্য ট্রাকের পেছনে মানুষ দৌড়াচ্ছে। জাতীকে নেশাগ্রস্ত করে স্বার্থ হাসিলের পাঁয়তারা চলছে। দেশ আর এভাবে চলতে পারে না।
মহাসমাবেশে ১৫ দফা দাবি এবং ৮ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দাবিগুলো হচ্ছেÑ যেকোনো মূল্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে হবে। বাজার কারসাজির সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে, দেশে সকল ধরনের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করতে হবে, শিক্ষার সকল স্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
কর্মসূচি : বিভাগীয় সমাবেশ, ১৩ মে শুক্রবার রংপুর, ২০ মে শুক্রবার বরিশাল ২১ মে শনিবার খুলনা, ২৭ মে শুক্রবার চট্টগ্রাম, ৪ জুন শনিবার রাজশাহী, ১০ জুন শুক্রবার সিলেট, ২০ জুন সোমবার মোমেনশাহী এবং ১ জুলাই শুক্রবার ঢাকায় গণমিছিল।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেন, দশ টাকায় চাল খাওয়ানোর কথা বলে ক্ষমতায় এসে আজ দুর্ভিক্ষ তৈরি করা হয়েছে। দুর্নীতির ক্ষেত্রে সকল সীমা ছাড়িয়েছে যা রাষ্ট্রপতি, পরিকল্পনামন্ত্রীদের কথাতেই প্রমাণিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের যতটুকু উন্নতি তার পুরোটাই মানুষের শ্রমের ফসল, সরকারের কোনো নীতির কারণে নয়।
মুফতী ফয়জুল করীম বলেন, আমাদের প্রবাসীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে টাকা উপার্জন করে দেশে পাঠায় আর সরকারদলীয়রা দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে। তিনি বলেন, পাকিস্তান সরকার উন্নয়ন করা সত্যেও ভোটের মর্যাদা রক্ষা করতে না পারার কারণে বাংলার মানুষ যার কাছে যা আছে তা নিয়ে পাকদের উৎখাত করেছিলো। আপনারাও যদি ভোটের অধিকার বারংবার কেড়ে নিতে চান তাহলে বাংলার মানুষ আপনাদেরও উৎখাত করে ছাড়বে। আমরা কোনো হামলা, মামলা বা বুলেটের ভয় করি না। বাংলার মানুষ আইয়ুব খানের বুলেটের ভয় পায় নাই, আপনাদের এসব জুলুম নির্যাতনকেও ভয় পায় না। আগামীতে জালেম সরকারকে গদি থেকে নামাতে বাধ্য করা হবে। তিনি বলেন, দেশে কোথাও মদের দোকান খোলা হলে বাংলাদেশের জনতা মেনে নেবে না। তিনি বলেন, মদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর কঠোর অবস্থান ছিলো। র্তার কন্যার সময় মদের আইন পাস হতে পারে না। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) মদের সাথে সম্পৃক্ত সকল কিছুর ওপরে আল্লাহর পক্ষ থেকে অভিশাপের সংবাদ দিয়েছেন। তিনি বলেন, পরিমণীর ভক্তরাই মদের অনুমোদন দিতে পারে। তিনি কারাবন্দি সকল আলেমের মুক্তির দাবি জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
Shahadat Hossain ২ এপ্রিল, ২০২২, ৬:২৯ এএম says : 0
বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে আজকের এই মহাসমাবেশের প্রস্তাবনা মাইলফলক ।
Total Reply(0)
Shahadat Hossain ২ এপ্রিল, ২০২২, ৬:২৯ এএম says : 0
বাংলাদেশকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে আজকের এই মহাসমাবেশের প্রস্তাবনা মাইলফলক ।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন