বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাজেট বরাদ্দে রাজনীতি বেশি গুরুত্ব পায়

গোলটেবিল আলোচনায় পরিকল্পনামন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, বাজেট বরাদ্দে প্রয়োজনীয়তার চেয়ে রাজনীতি গুরুত্ব পায় বেশি। এই বরাদ্দ দিতে গিয়ে সরকার এক ধরনের ‘ঠেকা’র মধ্যে পড়ে। কায়েমী স্বার্থ বরাদ্দ বিভাজনকে প্রভাবিত করে। বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা গণতান্ত্রিক সমাজে থাকা উচিত নয়। হঠাৎ করে এই বেড়াজাল ভাঙ্গা সহজ নয়। তবে সরকার প্রধান শেখ হাসিনা চেষ্টা করছেন। আশা করা যায় তিনি সফল হবেন।

গতকাল ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ(আইসিএবি) ও ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন। আইসিএবি সভাপতি শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সিএ ভবনে ‘সামষ্টিক অর্থনীতি ঃ ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রত্যশা’ শীর্ষক এ গোলটেবিল আলোচনাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আলোচনায় বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিদ ও হিসাববিদরা রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার, কর্পোরেট কর কমিয়ে আনা, করোনা প্রভাব মোকাবেলা এবং রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে সৃষ্টি হওয়া নতুন বৈশি^ক পরিস্থিতিতে করণীয়, এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি, এসএমই খাতের বিকাশ, সরকারি ব্যয়ের সুষ্ঠু ব্যবহার, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজেট বরাদ্দ দেয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

এসব আলোচনার প্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার খুবই জরুরি। অনুৎপাদনশীল খাতে সরকারি বরাদ্দ দেয়া অন্যায়। তিনি বলেন, অনেক সমস্যার মধ্যেও বর্তমান সরকার গত ১০ বছরে লক্ষ্যমান, দৃশ্যমান ও প্রত্যাশা অনুযায়ী উন্নয়ন করেছে। দেশে ব্যবসায়, পরিবেশে সমস্যা আছে। তবে বড় সমস্যা হচ্ছে একটি শ্রেণি বলছে তারা নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তারা খেলা ভন্ডুল করার প্রয়াশ থেকে এসব বলছে। এ ধরনের মতামতের বিষয়ে দেশের ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজকে মতামত জানানোর আহ্বান জানান তিনি।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন আইসিএবি সভাপতি শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, দেশ এগোচ্ছে। তবে বৈষম্যও বাড়ছে। এর কারণ হচ্ছে পরোক্ষ কর। তিনি প্রত্যক্ষ কর ও অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিবর্তে বৈদেশিক ঋণ সহায়তা ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, স্বয়ংক্রীয় রাজস্ব ব্যবস্থা, করের অর্থের সঠিক ব্যবহার, সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোসহ সুষ্ঠু বিতরণ ব্যবস্থার ওপর জোর দেন।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ক্যাম্পেইন ফর পপুলার এডুকেশনের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, বাজেটে থেকে যে বিনিয়োগ হয় সেখানে সংস্কার দরকার। শিক্ষা খাতের জন্য পূর্ণাঙ্গ বাজেট দিতে হবে। তিনি বলেন, জাতির জনক যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেছিলেন। তখন ডিজিপি ছিলো ১৪ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কেন জাতীয়করণ হবে না।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনা পরবর্তী পুনরুদ্ধার ভালো হচ্ছে। তবে বৈশি^ক পরিস্থিতি বিবেচনায় সুচিন্তিত পদক্ষেপ দরকার। আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এখন রিজার্ভ খরচের বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। এখন সুদহারে সর্বোচ্চ সীমা রাখা ঠিক হবে না। তিনি কর নীতি ও কর প্রশাসনকে আলাদা করা, এসএমই খাতের বিকাশের জন্য গ্যারান্টি স্কিম বাড়ানো, ভ্যাট আইন সংস্কারের প্রস্তাব করেন।

এমসিসিআই সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর পরিকল্পনা অনুযায়ী অনেক কাজ করা সম্ভব হয়নি। ফলে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা পুনঃমূল্যায়ন করা দরকার। কারণ এই পরিকল্পনা যখন করা হয়েছিলো তখন করোনা, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ ছিলো না। তিনি করপোরেট করা কমানো ও সকল রফতানি খাতে সমান সুবিধা দেয়ার প্রস্তাব করেন।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ শতাংশের বেশি ধরা ঠিক হবে না। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, খাদ্য উৎপাদন যাতে ব্যহত না হয় সে উদ্যোগ দরকার। পাশাপাশি পেট্রোলিয়াম পণ্যের দাম এমনভাবে সমন্বয় করতে হবে যাতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সমস্যায় না পড়েন।

ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম খান বলেন, অগ্রিম আয়কর নেয়া বন্ধ করতে হবে। অগ্রিম আয়কর বাবদ যে টাকা সরকারের কাছে যেতো, সেই টাকা কোম্পানিগুলো যাতে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগ করে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি উৎসে কর নেয়া বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ছাড়া অন্য কেউ এ কর নেয় না। কর সবাই দিতে চায়, কিন্তু করের ঝামেলা কেউ নিতে চায় না। এজন্য কর কর্তৃপক্ষের সংস্কার দরকার। এনবিআর মনে করে, তারা রাজা আর করদাতারা প্রজা। সবাইকে চোর মনে করে ধরতে চায় সবাই। তিনি ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাপেক্সকে শক্তিশালী করা, কয়লা উত্তোলন বাড়ানো ও পিপিপিতে ভালো প্রকল্প অন্তভূক্ত করার প্রস্তাব করেন।

ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার ই-কমার্স খাতে কর কমানো ও দক্ষতা উন্নোয়নের প্রস্তাব করেন।
প্রথম আলোর বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেন মাসুম সরকারের দেয়া প্রণোদনা কোথায় কিভাবে বিনিয়োগ হচ্ছে, খেলাপি ঋণসহ ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানে ব্যাংক কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন। একইসঙ্গে সরকারের ব্যয় পর্যালোচনা কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আইসিএবি’র সাবেক সভাপতি হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, শিল্প খাতের অর্থায়নের অতিমাত্রায় ব্যাংক নির্ভরতা দূর করতে পুঁজিবাজার ও বন্ড বাজারকে উন্নত করতে হবে। এছাড়া আইসিএবির সিইও শুভাশীষ বসু, ইআরএফ সভাপতি শারমীন রিনভী ও সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন