বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

হাইব্রিড ধানের আবাদ থেকে সরে আসছে কৃষকরা

প্রকাশের সময় : ১২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ভারত থেকে চাল আমদানি হওয়ায় ও দাম কম হওয়ার অভিযোগ
মাহফুজুল হক আনার : পর পর তিন বছর ধানের দাম না পাওয়ায় কৃষকরা অধিক ফলনশীল হাইব্রিড জাতের মোটা ধানের আবাদ থেকে সরে আসছে। মোটা ধানের জায়গায় চিকন জাতের কাঠারী ধান আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। ফলে বাম্পার ফলন হলেও গড় উৎপাদন কমে যাবে। গত মৌসুমের তুলনায় এবার অন্তত ৩০ শতাংশ মোটা ধানের আবাদ কম হয়েছে। ধানের দাম কম হওয়ার জন্য মৌসুমের শুরুতে ভারত থেকে চাল আমদানি এবং সঠিক সময়ে সরকারী ক্রয় কার্যক্রম শুরু না হওয়াকেই দায়ী করছে ব্যবসায়ীরা। একই সাথে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ধান, চাল ও সাধারণ ব্যবসার নামে দেয়া সিসি ঋণ মূলত মজুদদারীতে ব্যবহার হওয়ায় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির আরেকটি অন্যতম কারণ। ধানের দাম না পাওয়ায় কৃষকদের মোটা ধান আবাদে নিরুৎসাহিত হওয়ার বিষয়টি দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার বিষয়টিকে মøান করে দিতে পারে। কেবলমাত্র অর্থনৈতিক কারণে মোটা ধানের আবাদ না করায় কৃষকরাও পড়বে চরম সংকটে। মোটা চালই কৃষক ও নিম্ন আয়ের মানুষদের অন্যতম খাদ্য। ফলে শস্য উৎপাদনকারী কৃষকরাই বাজারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে। স্বাভাবিকভাবেই মোটা চালের মূল্য বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সারা দেশে আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়ে গেছে। কৃষি নির্ভর দিনাজপুর অঞ্চলে এখনও পুরোদমে আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়নি। দিগন্তজোড়া ক্ষেতে সবুজ ধান গাছ শোভা পাচ্ছে। অথচ এ সময়ে কৃষকরা ধান কাটা-মাড়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ার কথা। অধিক ফলনশীল হাইব্রিড ৩১, ৪২, ৪৯, ৫৬ ও ৫৭ জাতের ধানের আবাদ করে কৃষকরা লাভবান হয়েছে। কারণ, এসকল জাতের ধান প্রতিবিঘায় ২০ থেকে ২৫ মণ ধান উৎপাদন হয়ে থাকে। এসব হাইব্রিড জাতের ধান আবাদের মাধ্যমেই মূলত দেশে ধান উৎপাদনে বিপ্লব ঘটেছে। কিন্তু এবার এই ধানের আবাদ কম হয়েছে। মোটা জাতের ধানের জায়গায় আবাদ হয়েছে চিকন কাঠারী জাতের ধান। অথচ এই ধান উৎপাদন হয়ে থাকে এর মোটা জাতের চেয়ে অর্ধেক। তারপরও কৃষকরা আবারও চিকন ধান আবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। গত বছর এক বস্তা মোটা ধান বিক্রি হয়েছে ৭ থেকে ৮শ’ টাকা। আর চিকন ধান বিক্রি হয়েছে ২৩ থেকে ২৫শ’ টাকা।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলা যাওয়ার পথে সড়কের দু’ধারে একরের পর একর জমিতে কাঠারী জাতের গাছ শোভা পাচ্ছে। সুগন্ধি ছড়াচ্ছে কাঠারী চালের। আলাপ হলো কৃষক বাবুল মেম্বারের সাথে। তার মতে, বেশী ধান পেয়ে লাভ কি। মোটা ধানের চেয়ে অর্ধেক ধান পেয়েও চিকন ধানের দাম বেশী হওয়ায় বেশী টাকা পাওয়া যায়। তার মতে, মোটা ধান আবাদে খরচ বেশী হয়। চিকন ধান আবাদে খরচ কম পড়ে। তবে মোটা ধানের ন্যায্য দাম পাওয়া গেলে আবারও মোটা ধান আবাদ করবে। কারণ, উৎপাদন বেশী হওয়ার পাশাপাশি সময় লাগে কম। সে বললো মোটা ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু ধানগাছে কেবল ধান বের হচ্ছে। কাটা-মাড়াই শুরু হতে আরো কমপক্ষে একমাস লাগবে।
কৃষি বিভাগের মতে, এবার দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় দুই লক্ষ ৫৬ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড বা উফশী জাতের আবাদ হয়েছে মাত্র ১৩৭৫০ হেক্টরে। যা মোট আবাদী জমির মাত্র ৬ শতাংশ। আগাম জাতের এসব ধান ইতিমধ্যে কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। বাকি ৯৪ শতাংশ জমির ধান এখনো কাঁচা রয়েছে। আগাম জাতের মোটা ধান কাটা শুরু হতেই বাজারে ধানের দাম কমে গেছে। গত এক মাস আগে যে ধান ছিল ১৮শ’ টাকা বস্তা তা এখন বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ টাকা বস্তায়। কৃষকদের মতে, এই দামে তাদের উৎপাদন খরচ উঠে না। গড় উৎপাদন বেশী হওয়ায় মোটা ধান আবাদ কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। একইভাবে দামে কম হওয়ায় খেটে খাওয়া মানুষের কাছে এর চাহিদা বেশী। কিন্তু দাম না পাওয়ায় মোটা ধান আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে কৃষকরা। ফলে বাম্পার ফলন হলেও আগামীতে গড় খাদ্য-শস্যের উৎপাদন যেমন কমবে, তেমনি নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে চাল ক্রয়ে হিমশিম খেতে হবে। তাই ধানের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে মোটা ধান আবাদ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়েছে। আর এজন্য দরকার মৌসুমের শুরুতে চাল আমদানী নিরুৎসাহিত করার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ বিপরীতে তদারকি বাড়িয়ে মজুতদারী প্রতিরোধ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন