বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরের বোরো ফসল নষ্টের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান। এজন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্টদের বোরো ফসল না তোলা পর্যন্ত বাঁধ রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে গতকাল পীর ফজলুর রহমান বলেন, সুনামগঞ্জ হাওর এলাকার একমাত্র ফসল বোরো। এই ফসল ঘরে তুলতে ১০-১৫ দিন সময় প্রয়োজন। কিন্তু এই মুহূর্তে বোরো ফসল হুমকির মুখে।
এবার হাওরে বোরো ফসলের লক্ষমাত্রা ১৩ লাখ টন জানিয়ে তিনি বলেন, ১২টি উপজেলার ৫২টি হাওরে ২২ লাখ ২২ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। কিন্তু হাওরে এখন সীমান্তের ওপার থেকে ঢল নেমে আসছে। সুনামগঞ্জেও বৃষ্টি হচ্ছে। মনে হচ্ছে, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন এর গুরুত্বটা বুঝতে পারছেন না।
তিনি বলেন, এই ফসলহানি হলে হাহাকার দেখা দেবে। এই ফসলহানি হতে বেশিদিন লাগে না। একদিনের ভেতর একটা দুটা বাঁধ ভাঙা শুরু হলেই সমস্ত হাওর তলিয়ে যায়। টাঙ্গুয়ার হাওরের নজরখালি বাঁধ ভেঙে হাওরে পানি ঢুকেছে। আরও কয়েকটি বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। স্থানীয় লোকজন বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে। ফসল তোলার জন্য কয়েকটা দিন দরকার। এই ফসলকে গুরুত্ব দিয়ে পানিসম্পদ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উচিত সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে ফসল রক্ষা করা দরকার। ৯ লাখ টন ধান, এটা বিশাল বিষয়।
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এখানে উপস্থিত আছেন। তিনি হাওরে বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রায় ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। যেগুলো নির্মাণ হয়েছে সেগুলো সঠিকভাবে হয়েছে কিনা, না হয়ে থাকলে স্পটে গিয়ে যা দরকার তাই করতে হবে।
দেশে কৃষি শ্রমিকের ঘাটতি আছে
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষিতে শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এ সংকট উত্তরণে উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে কৃষকদের আধুনিক যন্ত্রপাতি দেওয়া হচ্ছে।
জাতীয় সংসদে গতকাল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী এ কথা জানান। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপন করা হয়।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কৃষিতে শ্রমিকের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে ধানের চারা রোপন এবং ধান কাটার সময় কৃষি শ্রমিকের সংকট চরম আকার ধারণ করে। এ সংকট উত্তরণে সরকার সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ শীর্ষক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে হাওর ও উপকূলীয় এলাকায় ৭০ শতাংশ এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে কৃষকদের মাঝে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৫ বছরে ৫১ হাজার ৩০০টি উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করা হবে বলেও সংসদকে জানান মন্ত্রী।
সংসদে নৌপ্রতিমন্ত্রীর প্রশংসা
বুড়িগঙ্গা নদী থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে ভূমিকা রাখায় জাতীয় সংসদে প্রশংসা পেলেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। সাহসিকতার সঙ্গে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করে নদীর জমি সরকারের দখলে নিয়ে আসায় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা তাকে ধন্যবাদ জানান।
সংসদে গতকাল মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ বিল পাসের সময় বিলটি নিয়ে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি ও বিএনপির এমপিরা। বিলটির জনমত যাচাইয়ের প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্ন বলেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বুড়িগঙ্গা নদীর দখলমুক্ত করেছেন সাহকিতার সঙ্গে। বুড়িগঙ্গা নদীর যারা দখলদার ছিল তাদের মধ্যে সরকারি দলেরও অনেকে ছিল। তিনি তাদের সবকিছু উপেক্ষা করে দখলমুক্ত করেছেন। অনেক অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলে সরকারের আয়ত্তে এনেছেন। তিনি বলেন, আমরা শুধু সমালোচনাই করি না। ভালো কাজের জন্য ধন্যবাদ দেই। এজন্য বুড়িগঙ্গা দখলমুক্ত করতে তাকে ধন্যবাদ দেওয়া প্রয়োজন।
জাতীয় পার্টির এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, গত ১৩ বছরে ২৬টি ঈদ হয়েছে। আমরা যারা সড়ক ও বিমানে বাড়ি গিয়েছি কয়েকগুণ বেশি ভাড়া দিয়েছি এবং যানজটে পড়েছি। বিকল্প সমাধান অধিক সংখ্যক বিমানবন্দর ও নৌ চ্যানেল তৈরি করা। বর্তমান নৌপ্রতিমন্ত্রী অনেকগুলো নৌ চ্যানেল বের করেছেন। উদ্ভাবনী শক্তি দেখাচ্ছেন। তবে এটা আরও অনেকগুণ প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন