আবাহনী-মোহামেডান ঐতিহ্যের লড়াই ক্রমশ যেন রঙ হারিয়ে বিবর্ণ। গ্যালারি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকলেও কোন দর্শকই আসেননি মাঠে। কেবল আবাহনীর ক্লাবের কয়েকজন সমর্থক গলা ফাটিয়েছেন পুরোটা সময়। খেলার মাঠেও ছিল না উত্তাপ। মোহাম্মদ হাফিজ, রুবেল মিয়ার ফিফটিতে মোহামেডানের আড়াইশ ছড়ানো পুঁজি যে যথেষ্ট না তা প্রমাণ করে দেন হনুমা বিহারী, জাকের আলি অনিক, মোসাদ্দেক হোসেন, আফিফ হোসেন ধ্রæবরা।
গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে আবাহনী লিমিটেড। মোহামেডানের ২৫৫ রান ২২ বল আগেই টপকে যায় আবাহনী। এই জয়ে ৭ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট হলো আবাহনীর, পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান তিন নম্বরে। অন্যদিকে ৬ ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে মোহামেডান পড়ে আছে আটে।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা মোহামেডান ৫৯ রানের মধ্যে হারায় দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে। তবে তৃতীয় উইকেটে রুবেল মিয়াকে নিয়ে ১১৫ রানের জুটি গড়েন মোহাম্মদ হাফিজ। প্রিমিয়ার লিগে পান নিজের দ্বিতীয় অর্ধশতক, আউট হন ৭০ রান করে। রুবেল ফেরেন ৫১ রানে। তবে এরপর ঠিক রানের গতি বাড়াতে পারেনি মোহামেডান, মাহমুদউল্লাহর ৩৭ বলে ৪২ রানের ইনিংসের পরও ১ ওভার বাকি থাকতে ২৫৫ রানেই অলআউট। তানজিম হাসান ৩ উইকেট নেন ৩৩ রানে, ৩৬ রান দিয়ে ২ উইকেট আফিফের।
রান তাড়ায় ৩৯ রানের মধ্যেই ফিরে আসেন মোহাম্মদ নাঈম ও মুনিম শাহরিয়ার। নাঈম ১০ বল খেলে কোনো রান না করেই রানআউট হয়েছেন, দারুণ শুরু করা মুনিম ২৫ বলে ৩১ রান করে শিকার হয়েছেন পয়েন্টে নাজমুল ইসলামের দুর্দান্ত ক্যাচের। বিহারি ও জাকেরের ৯৮ রানের তৃতীয় উইকেটে জুটিতে চাপ সামাল দেয় আবাহনী। ৮০ বলে ৫৯ রান করা বিহারি ও ৮৯ বলে ৬০ রান করা জাকের খেলেছেন ধীর গতিতেই। তবে রান ও বলের পার্থক্যের চাপ আবাহনী টের পায়নি মোসাদ্দেক হোসেন ও আফিফ হোসেনের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে। ৫৬ বলে ৮৫ রান যোগ করেছেন দুজন। ৩৮ বলে ৪৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন আফিফ, মোসাদ্দেকও অপরাজিত ৫২ রান করতে খেলেছেন ৩৭ বল। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরা হয়েছেন আফিফ।
হোম অব ক্রিকেটে রোমাঞ্চ মিলেছে দিনের অন্য দুই ম্যাচে। বিকেএসপিতে মোহাম্মদ আশরাফুলের লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ার সেরা ১৪১ রানের ইনিংস পাল্টা শতকে প্রায় ¤øান করে দিয়েছিলেন ফজলে রাব্বী। তবে শেষ পর্যন্ত ফজলের রূপগঞ্জ টাইগার্সকে হারিয়েছে আশরাফুলের ব্রাদার্স ইউনিয়ন। ৭ ম্যাচে এটি মাত্র দ্বিতীয় জয় ব্রাদার্সের।
এদিন খোলস ছেড়ে নিজের পুরনো রূপে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন আশরাফুল। ওপেন করতে নেমেছিলেন, আর আউটই হননি। লিস্ট-এ ক্রিকেটে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেললেন দেশের ক্রিকেটে প্রথম সুপারস্টার। বিকেএসপি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচে আশরাফুল করেন ১৩৯ বলে অপরাজিত ১৪১ রান। লিস্ট-এ ক্রিকেটে এর আগে তার সর্বোচ্চ ছিল ১২৭ রান, ২০১৮ সালে। তার ব্যাটে তিনশো ছাড়ানো পুঁজি পায় ব্রাদার্স ইউনিয়ন। আশরাফুলের পাশাপাশি রান পান মাইশুকুর রহমান (৯২ বলে ৬৮)। শ্রীলঙ্কান চতুরঙ্গ ডি সিলভা নেমে তুলেন ঝড়। ২৫ বলে ৫১ করে তিনশো ছাড়ানোর কাজটা করেন তিনিই।
এছাড়া ইউল্যাব গ্রাউন্ডে পারভেজ রাসুলের ৫১ বলে ৬৫ রানের ইনিংসে ভর করে প্রাইম ব্যাংককে ১ বল ও ১ উইকেট হাতে রেখে হারিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানের সঙ্গে মেহেদী হাসানের অবদানে জামাল তোলে ২৬৫ রান। দারুণ ফর্মে থাকা এনামুল হক করেছেন ৬১ বলে ৭৭, তিনে নামা অভিমন্যু ঈশ্বরণ অপরাজিত ছিলেন ৮১ বলে ৬২ রান। বিনা উইকেটে ১২০ থেকে ৩৩ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়েছিল তারা, আটে নামা মেহেদী হাসানের ৪১ বলে ৪০ রানের ইনিংসে পায় লড়াই করার মতো সংগ্রহ।
রান তাড়ায় সৈকত আলীর ৬৪ বলে ৬৫ রানের পর তিনে নামা ইমরুল কায়েসের ৭৯ বলে ৫২ রানের ইনিংসে ভালো শুরু পায় শেখ জামাল। তবে মিডল অর্ডারে ইনিংস বড় করতে পারেননি কেউ, ১৪১ রানে ৫ উইকেট হারায়া তারা। সাতে নামা পারভেজ রসুল এরপর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে ৩৭ রানের জুটির পর সানজামুল ইসলাম, মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে নিয়ে এগিয়ে নেন শেখ জামালকে। জয় থেকে ২৭ রান দ‚রে নবম উইকেট হারায় তারা, তবে দমেননি রসুল। শেষ ওভারে রবিউলকে চার-ছয়ের পর দুই নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন। ৭ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে এখন টেবিলের দুইয়ে আছে শেখ জামাল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন