বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ মৌসুম মাহে রমজান

খুৎবা-পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৭ এএম

তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ মৌসুম মাহে রমজান। এ মাসটি বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ উপঢৌকন। তাকওয়া অর্জনকারী ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য করা, কখনো নাফরমানি না করা এবং আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। গতকাল রমজানের প্রথম জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। প্রথম জুমার নামাজে অংশ নিতে সকাল ১১টা থেকে বিভিন্ন এলাকার মুসল্লিরা বায়তুল মোকাররমে জড়ো হতে থাকেন। নগরীর অন্যান্য মসজিদেও জুমার নামাজে উপচেপড়া ভিড় পরিলক্ষীত হয়। নগরীর মহাখালিস্থ মসজিদে গাউছুল আজমেও জুমার নামাজে প্রচুর মুসল্লির সমাগম ঘটে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন গতকাল জুমার বয়ানে মাহে রমজানের গুরুত্ব ও মহত্ব তুলে ধরে বলেন, কোরআন নাযিলের মাসে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। খতিব বলেন, আল্লাহ বলেছেন, রোজা আমার জন্য আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমি নিজেই দেব। রমজানের পরনিন্দা, গীবত এবং অপরের দোষচর্চা পরিহার করতে হবে। জান্নাত লাভ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইতে হবে। খতিব বলেন, মাহে রমজানের মধ্যে পহেলা বৈশাখ নিয়ে অযথা মাতামাতি পরিহার করতে হবে। কথিত পান্তা-ইলিশের সংস্কৃতি পরিহার করুন। পান্তা-ইলিশের টাকা গরিব অসহায়দের মাঝে বিতরণ করুন। খতিব বলেন, হিজাব নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের দেশেও মাঝে মধ্যে হিজাব নিয়ে বাধার সৃষ্টি করা হয়। তিনি বলেন, মুসলমান নারীদের হিজাব পরিধান ধর্মীয় বিধান। হিজাব নিয়ে কোনো প্রকার বাধা বা নিষেধাজ্ঞা জারি করা যাবে না এব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।

ঢাকার মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে বলেন, রমজান মাস তাকওয়া অর্জন ও অনুশীলনের মাস। তাকওয়ার গুণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। কারণ মুত্তাকিরাই আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানের অধিকারী হবে সে, যে সর্বাধিক পরহেজগার (মুত্তাকি)’ সূরা হুজরাত, আয়াত নং-১৩। খতিব আরো বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলা বর্ষবরণের নামে পহেলা বৈশাখে আমাদের অনেকেই বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতের পর মদীনায় গিয়ে দুটি উৎসব বন্ধ করেছিলেন। একটি হচ্ছে, বছরের প্রথম দিন উদযাপন বা ‘নওরোজ’। অপরটি ছিল ‘মিহিরজান’। এ উৎসব দুটির বিপরীতে চালু হয় মুসলমানদের দুই ঈদ। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন। আমীন।

ভোলা সদর নিজাম হাসিনা ফাউন্ডেশন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা এ কে এম মুশাররফ হুসাইন গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, তাকওয়া অর্জনের শ্রেষ্ঠ মৌসুম মাহে রমজান। এ মাসটি বান্দার প্রতি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে শ্রেষ্ঠ উপঢৌকন, কেননা একজন তাকওয়া অর্জনকারী ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি সর্বদা আল্লাহর আনুগত্য করবে, কখনো নাফরমানি করবে না, সর্বদা আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করবে, কখনো ভুলে যাবে না, সর্বদা আল্লাহ তায়ালার নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, কখনো অকৃতজ্ঞ হবে না। তাকওয়ার এ শিক্ষা আমরা রমজানের মাধ্যমেই অর্জন করতে পারি। আল্লাহ সবাইকে রমজানে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকার মিরপুর শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, রোজার উদ্দেশ্য হলো জীবনের সকল ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর আদেশ পালন এবং নিষিদ্ধ কাজ বর্জনের জন্য তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ ভয় অর্জন করা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ১৬ ঘণ্টা মানবিক চাহিদার একেবারে মৌলিক ও প্রয়োজনীয় বস্তু থেকে বিরত থাকতে হয়। অথচ রোজাদারের ঘরে খাবার ও পানীয় সামগ্রী বিদ্যমান রয়েছে। এগুলো থেকে শুধু মহান আল্লাহর ভয় অন্তরে থাকার কারণে বিরত থাকা সম্ভব হয়। এভাবে রমজান মাসের ৩০ দিন চেষ্টা চলতে থাকে। সব ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে সারা বছর মানুষকে মহান আল্লাহর ভয়ের ভিত্তিতে বিরত রাখার জন্যই রোজা ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহ সবাইকে নেক আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

ঢাকার নিউমার্কেট গাউসিয়া মার্কেট জামে মসজিদ খতিব মুফতি আব্দুল্লাহ ইয়াহইয়া গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধন সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। নিজের প্রিয় ও উত্তম বস্তু দান করার প্রতি উৎসাহ দিয়ে মহাগ্রন্থ আল কোরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, তোমরা কস্মিণকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্তু থেকে তোমরা ব্যয় না কর। আর তোমরা যদি কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন। (সূরা আলে ইমরান-৯২)। আল্লাহ সবাইকে নেক আমলে সম্পৃক্ত থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।
গুলিস্তানস্থ ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে জামে মসজিদের খতিব আল্লামা মুহিউদ্দীন রাব্বানী জুমার বয়ানে বলেন, আরবি মাসসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ হচ্ছে মাহে রমজান মাস। বছরের বাকি এগার মাস অপেক্ষা অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতপূর্ণ মাস। এ মাসের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য অপরিসীম। দুনিয়ার কোনো সম্পদের সঙ্গে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না। রমজানের আগমনে বিশ্বনবি অনেক আনন্দিত হতেন। সাহাবাদের উদ্দেশ্যে এভাবে ঘোষণা দিতেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- তোমাদের দরজায় বরকতময় মাস রমজান এসেছে।’ তারপর রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোরআনের ঘোষণা দিয়ে এ মাসের বিশেষ ফযিলত বর্ণনা করতেন। আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে রমজানের ফযিলত ও বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো যথাযথভাবে পালনের তৌফিক দান করুন। আমিন।

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, রমজান মাসের গুরুত্ব, ফজিলত ও মহাত্ম্য অন্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। রোজাদারের জন্য রয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে অফুরন্ত নেয়ামত ও বিশেষ পুরুস্কারের ঘোষণা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রোজাদারের জন্য দু’টি সময় বড় আনন্দ ও খুশির, একটি ইফতারের সময় আর একটি তার মহান প্রভু আল্লাহর তায়ালার দিদার তথা সাক্ষাৎ লাভের সময়। (বুখারী ও মুসলিম)। আল্লাহ আমাদের সকলকে তৌফিক দান করেন। আমিন।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র মাহে রমজানের গতকাল প্রথম জুমায় নগরীর মসজিদগুলোতে মুসল্লির ঢল নামে। জুমার আজানের আগেই মসজিদমুখী হন নগরবাসী। আজানের পর মসজিদগুলোতে তিলধারণের ঠাঁই ছিল না। প্রায় প্রতিটি মসজিদে নামাজের কাতার মসজিদ ছাড়িয়ে আশপাশের সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। কয়েকটি এলাকায় জুমার নামাজ চলাকালে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চৈত্র দিনের তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে অনেক মুসল্লি পিচঢালা সড়কে নামাজের জন্য কাতারবন্দি হন।

সব শ্রেণি পেশা ও বয়সের মানুষ এক কাতারে সামিল হয়ে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে ইমাম ও খতিবগণ দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ দোয়া করেন। নগরীর ঐতিহাসিক আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ, লালদীঘি জামে মসজিদ, হযরত শাহ আমানত খান দরগাহ মসজিদ, এনায়েত বাজার শাহী জামে মসজিদ, ধনিয়ালাপাড়ার বায়তুশ শরফ জামে মসজিদ, পাঠানটুলি চট্টেশ্বরাই গায়েবি মসজিদ, ফিরিঙ্গি বাজার জামে মসজিদ, মুরাদপুর মসজিদে বেলাল, বহদ্দারহাট জামে মসজিদ, মেহেদিবাগ সিডিএ আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, কাজির দেউড়ি জামে মসজিদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, সিজিএস কলোনী জামে মসজিদ, বন্দরটিলা হযরত আলী শাহ জামে মসজিদসহ নগরীর বেশিরভাগ মসজিদে ছিল মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন