বাহাদুরাবাদঘাট ও গাইবান্ধার বালাসীঘাটের মধ্যে পরীক্ষামূলক লঞ্চ সার্ভিস চালু হয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে গাইবান্ধার বালাসী থেকে বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত্য রেলওয়ে ফেরী পারাপার বা বিআইডব্লিউটি এর ফেরী পারাপার শুরু করতে পারলে উত্তরাঞ্চল ও উত্তর পুর্বাঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
গতকাল শনিবার নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাহাদুরাবাদঘাটে পরীক্ষামূলক এ লঞ্চ সার্ভিসের উদ্বোধন করেন। এর আগে বাহাদুরাবাদঘাটে নৌটার্মিনাল ভবন উদ্বোধন করেন তিনি। এ সময় বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক উপস্থিত ছিলেন।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার মো.জাহাঙ্গীর আলম খান ইনকিলাবকে জানান, ২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বাহাদুরাবাদঘাট ও বালাসীঘাটের নৌপথের দূরত্ব ৩৯ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১০ কিলোমিটার নৌচ্যানেল খনন করা হয়েছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জামালপুরের বাহাদুরাবাদঘাট ও বালাসীঘাট নৌপথের দূরত্ব ৩৯ কিলোমিটার। তার মধ্যে ১০ কিলোমিটার নৌ চ্যানেল খনন করা হয়েছে। যার প্রস্থ ৩৭ মিটার। বেসরকারি ও বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার দিয়ে ১৮ দশমিক ২০ লাখ ঘনমিটার খনন করা হয়েছে। যার মধ্যে বেসরকারি ড্রেজার দিয়ে খনন করা হয়েছে ১৫ লাখ ঘনমিটার। এ জন্য ব্যয় হয়েছে ২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। চ্যানেলে বর্তমানে ৯-১০ ফুট পানি আছে বলেও জানানো হয়।
জানা গেছে, ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ নৌরুট চালু করে। তখন থেকে এই রুটের মাধ্যমে ঢাকা-রংপুর-দিনাজপুর রেল যোগাযোগ চালু ছিল। উত্তরাঞ্চলের আটটি জেলার মানুষ ট্রেনে তিস্তামুখ ঘাটে যেতেন। এরপর তিস্তামুখ ঘাট-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি পারাপার হতেন। ওপারে বাহাদুরাবাদে গিয়ে ট্রেনে উঠে ঢাকায় যেতেন। সে সময় কম খরচে নিরাপদে ঢাকা যাতায়াত করা যেত। নদীর নাব্য সংকটের কারণে ১৯৯০ সালে তিস্তামুখ ঘাটটি একই উপজেলার বালাসীতে স্থানান্তর করা হয়। এ জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ত্রিমোহিনী থেকে বালাসী পর্যন্ত নতুন প্রায় ৬ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়। তখন বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটের মাধ্যমে একইভাবে রেল যোগাযোগব্যবস্থা চালু ছিল। তৎকালীন বালাসীঘাটে রেলওয়ের নানা ধরনের ৩০টি নৌযান ছিল। ২০১৫ সালের পর থেকে এসব নৌযান বিক্রি শুরু হয়। বর্তমানে এখানে রেলের প্রায় ১১টি নৌযান আছে।
যমুনা নদীতে নাব্য হ্রাসের কারণে ১৯৯৬ সাল থেকে বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধের উপক্রম হয়। ১৯৯৮ সালের জুনে যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হয়। ফলে ২০০০ সাল থেকে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অকার্যকর হয়ে পড়ে বালাসীঘাট। তখন থেকে প্রায় ২২ বছর বালাসী-বাহাদুরাবাদ রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। অবশ্য শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে ঝুঁকিপূর্ণ পারাপার চলছে। বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌরুটে লঞ্চ সার্ভিস চালুর দাবিতে নানা আন্দোলন কর্মসূচি চলতে থাকে। রুটটি চালু হলে ঢাকার সঙ্গে উত্তরের আট জেলা ভ্রমণে দুই-তিন ঘণ্টা সময় কম লাগবে। ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক ও যমুনা সেতুর ওপর চাপ কমবে। স্থানীয় জনগণের দাবির মুখে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ উভয় পাশে ১৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নৌ টার্মিনাল ভবন নির্মাণ করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন