বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকার আন্তর্জাতিকভাবে প্রবল চাপের মুখে পড়ে এখন দেশের বিরোধী দলকে উচ্ছেদ করার জন্য মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে। তারা এখন এক অজানা আতঙ্কে ভুগছে। দুর্নীতিগ্রস্ত এই অবৈধ সরকার দেশকে এমন এক খাদের প্রান্তে নিয়ে গেছে সেখান থেকে সরে আসার কোনো সুযোগ নেই দেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের এই রমজান মাসেও মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতারের হিড়িক শুরু করেছে। কিন্তু গণতন্ত্রকে হত্যা করে আর ক্ষমতায় থাকা যাবে না। চারিদিকে সরকার পতনের আওয়াজ উঠছে। বিশ্ববিবেক ও জনগণকে ধোঁকা দিয়ে ও জুলুম নির্যাতন চালিয়ে ক্ষমতা এক্সটেনশনের রাস্তা বন্ধ। গতকাল রোববার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, রোববার চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় প্রবাসী কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক মিথ্যা মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের আহবায়ক সুমন ভুঁইয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক এম এ গাফ্ফার এবং ঢাকা মহানগর কোতোয়ালী থানা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. গিয়াস সিকদারকে শনিবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সোহাগ নূরের ওপর ছাত্রলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করেছে। সে এখন হাসপাতালে মূমুর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

রিজভী বলেন, সরকার হিংসা, সন্ত্রাসবাদ, বিরোধী দলের ওপর নিপীড়ণ-নির্যাতন, নিজেদের স্বার্থসর্বস্বতাসহ হরেক কিসিমের অনাচারে দেশকে ভরিয়ে তুলেছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, উদার মনোভাব, সকলের একত্রিকরণ, বিনাবাধায় নিজের পছন্দমতো বিশ^াস নিয়ে চলার অধিকার হরণ করেছে এই আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে হিটলারের গ্যাস চেম্বারের ন্যায় বিষাক্ত চেম্বারে ঢুকিয়ে রাখতেই যেন তারা সকল শক্তি প্রয়োগ করছে। আওয়ামী সরকারের সহিংস উন্মত্ততা তাদের শাসনের ছত্রে ছত্রে উপস্থিতি দৃশ্যমান। এরা গণতন্ত্রের চিরকালীন পথরেখার মধ্যে গভীর গর্ত সৃষ্টি করে এক ভয়ংকর স্বৈরাচারের বৃত্ত তৈরি করেছে। এই স্বৈরাচারের বৃত্ত এখন সর্বনাশা নাৎসীবাদে আত্মপ্রকাশ করেছে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা মনে করছেন বিএনপির নিরপরাধ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে নিজের ক্ষমতা কন্টকমুক্ত রাখা যাবে। কিন্তু তার এই ধারণা অমূলক। চারিদিকে দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি, দেশের সম্পদ লুন্ঠনের পথ খুলে দেয়া, বিনা টেন্ডারে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পকেটে জমা করা, ছাত্রলীগ-যুবলীগের মানুষ হত্যায় আওয়ামী শাসকগোষ্ঠীর দারুণ উল্লসিত হওয়া, দুর্নীতি ও হানাহানিতে ক্লেদাক্ত সমাজ নির্মাণ, পানি-বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি খাতে চরম অস্থিরতা ও অরাজকতা, এর সাথে চলছে গ্রাহকদের পকেট কাটার মহৌৎসব। কিন্তু এসব অপকর্ম করে শেখ হাসিনা তার সাধের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন না। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে এবং দেশে শক্তিশালী একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার কায়েমের জন্য দিনের পর দিন হরতাল, ধ্বংসাত্মক জ¦ালাও-পোড়াও, কাটো-মারো কর্মসূচি চালিয়েছিল। তারাই আবার গায়ের জোরে তা সংবিধান থেকে মুছে দিয়ে ভোট নির্বাচনকেও বাকশালীকরণ করে কলঙ্ক রচনা করেছে। তাদের সকল কেলেঙ্কারি উন্মোচিত হওয়ায় এরা জনদৃষ্টি দিকভ্রান্ত করতে রমজান মাসেও নতুন করে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রিজভী অবিলম্বে উল্লিখিত নেতৃবৃন্দ সহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, আমিনুল ইসলাম, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, মোস্তাফিজুল করিম মজুমদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।