মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভোগান্তি যেন নিত্য উপহার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে যানজট যেন পাল্লা দিয়ে বেড়েই চলেছে। গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে নগরীতে দেখা গেছে ভয়াবহ যানজট। এ পরিস্থিতি রাজধানীর একক কোন রাস্তায় নয়। সব রাস্তায়ই ছিলো ভয়াবহ যানজটের চিত্র। প্রত্যেকটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে গণপরিবহনের পার্কিং ও যাত্রী ওঠা নামার কারণে এই যানজটের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে দেখা যায়, বিভিন্ন রুটের যাত্রীবাহী বাস পার্কিং করে রাখা হয়েছে। এসব বাস দিনের অধিকাংশ সময়ই এভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। যানজটকে আরও বাড়িয়েছে ব্যস্ত সড়কে অবৈধ পার্কিং। মৌচাক এলাকায় প্রচুর প্রাইভেটকার অবৈধভাবে পার্কিং করা থাকে। মতিঝিল ও দিলকুশা এলাকায়ও দিনের বেশিরভাগ সময় রাস্তার ওপর গাড়ি পার্কিং করে রাখা হয়। রাজধানীর বেশিরভাগ ভবনের পার্কিং ব্যবস্থা নেই। এই কারণে অবৈধ পার্কিংয়ের জন্য যানজট আরও বাড়ছে। এছাড়াও রাজধানীর প্রায় সব রাস্তাই এখন ভ্রম্যমাণ দোকানদারদের দখলে। এতে যানজট বেড়েই যাচ্ছে। যানজটের কারণে যথেষ্ট সময় নিয়ে বেরিয়েও বাসায় গিয়ে ইফতার করতে পারেননি অনেকে। গত সপ্তাহের মতো চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে কর্মব্যস্ত মানুষকে।
নিয়মিত যারা অফিসে যান তাদেরকে যানজট পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে প্রাইভেট কারকে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে বেশি, তুলনায় গণমানুষের জন্য গণপরিবহন সবসময় উপেক্ষিত থেকেছে। এমনকি যে বিআরটিসি’র সাধারণ মানুষের জন্য গণপরিবহন চালানোর কথা তারা তাদের বাস উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দিয়ে রেখেছে। এমনকি যানজটের ভয়াবহতা মূল রাস্তা থেকে গিয়ে নগরীর অলি-গলির রাস্তায় সৃষ্টি করে যানবাহনের জটলা। দৈনন্দিন এই যানজটে প্রতিনিয়ত আটকে থেকে নগরবাসী অস্বস্তির জীবনযাপন পার করছেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। কর্মজীবী যাত্রী ও পথচারীদের ক্ষোভ অন্যদিকে যানবাহন চালকরাও জানিয়েছে তাদের অস্বস্তির কথা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর হিসাবমতে, রাজধানী ঢাকার ৭৭ শতাংশ রাস্তা দখল করে রাখে প্রাইভেটকার। রাইড শেয়ারিংসহ এসব ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহারকারী রাজধানীর ১৫ শতাংশ মানুষ। এর মানে রাজধানীর ৮৫ শতাংশ মানুষ ব্যবহার করছে ২৩ শতাংশ রাস্তা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)-এর তথ্যমতে, ঢাকা মহানগরীতে তাদের চলমান বাসের সংখ্যা ৭২৩। এর মধ্যে গণপরিবহন হিসেবে ৪৬৩টি চললেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ভাড়ায় চলছে ২৩৫টি। এর বাইরে স্কুল বাস আটটি এবং মহিলা বাস ১৭টি।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীতে বাস রুটের সংখ্যা প্রায় ৩০০, সম্প্রতি কিছু রুট বাড়ানোর পরিকল্পনা হয়েছে। বর্তমানের রুটগুলোতে ৩০ হাজারের মতো গাড়ি চলে। তবে, বেশকিছু রুট অকার্যকর, কিছু রুটে প্রয়োজনের তুলনায় গাড়ি বেশি হলেও কিছু রুটে কম। বিকল্প হিসেবে তাই মানুষকে রাইড শেয়ারিং-এর মোটর সাইকেল ব্যবহার করতে হচ্ছে।
গতকাল রোববার সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে রাজধানীর সড়কগুলোতে যানবাহন ও যাত্রী সংখ্যার সংখ্যা সাধারণত বেশি থাকে। কিন্তু অন্য বছর রমজানের এই সময়টায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতসহ অনেক প্রতিষ্ঠান থাকে বন্ধ। কিন্তু এ বছর সব প্রতিষ্ঠানই রয়েছে খোলা। এজন্য শিক্ষার্থী ও কর্মজীবীরা একই সময় বাসা থেকে বের হওয়ায় রাস্তায় সৃষ্টি হয় যানজট। সড়কে চলমান রয়েছে সড়ক উন্নয়নের বিভিন্ন প্রজেক্টের কাজও। সব মিলিয়ে সড়কের যানজটের ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে।
গতকাল রাজধানীর পল্টন, গুলিস্তান, কারওয়ানবাজার, পান্থপথ, মিরপুর, ভাসানটেক, পল্লবী আগারগাঁও, শ্যামলী, বনানী-কাকলী, মহাখালী, সাতরাস্তা, রামপুরা, মালিবাগ, উত্তরা এলাকায় সকাল থেকেই তীব্র যানজটের দেখা যায়। এসব পয়েন্টে যানজট ছাড়লেও আবার জটলা তৈরি হতে দেখা যায়। সকাল থেকেই গতিহীন ছিল উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে জসীম উদ্দীন পর্যন্ত সড়কে চলা যানবাহনগুলো। বিমানবন্দর রুটে গাড়ি যেন চলতেই চায়না। রাস্তায় গাড়ির চাকা ঘুরতে সময় নিয়েছে ঘণ্টারও বেশি। এই যানজটে বসে থেকে অধিকাংশ মানুষ সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি। আজিমপুর এলাকায় সকালে রাস্তায় প্রাইভেটকার বেড়ে যাওয়ায় যানজট দেখা গেছে।
পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা বলছেন, সড়কে যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সেই তুলনায় রাস্তা নেই। যানবাহন বাড়ার মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেল সংখ্যা অনেকাংশে বেড়েছে। গণপরিবহন চালকরা সড়কে নিয়ম অনুযায়ী চলাচল না করা সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায়সড়কের পাশেই যানবাহন পার্কিং করে রাখা হচ্ছে। এতেও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
নগরবাসীরা বলছেন, প্রতিদিন সকালে থেকে সড়কে যানজটে পড়তে হয়। সন্তানদের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে কর্মস্থলে পৌঁছাতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। সড়কের যানজট এমন পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে যে হাতে সময় নিয়ে বের হলেও সময় মতো গন্তব্যে পৌঁছানো যায় না। দিনের অনেকটা সময় এই যানজটের কারণেই নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও গরমে ও তীব্র যানজটে আটকা পড়ে থেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে দুর্বলতা চলে আসে।
এক পথচারী বলেন, সড়কে প্রচণ্ড যানজট। কোন গাড়ির চালকই কথা শুনে না। যে যার মতো চালাচ্ছেন গাড়ি। রাস্তার পাশে ফুটপাথ দখল করে বসানো হয়েছে দোকান। এসব রাস্তা এখন হকার ব্যবসায়ীদের দখলে। এ কারণে রাত পর্যন্ত বেশিরভাগ রাস্তায়ই যানজট লেগে থাকে।
বাস চালকরা বলছেন, রাস্তায় অনেক যানজট। নিজের মতো করে গাড়ি চালাতে পারি না। এক ট্রিপেই বসে থাকতে হয় ঘণ্টর পর ঘণ্টা। দিনশেষে টার্গেট অনুযায়ী টাকা রোজগার করতে পারি না। যানজট নিরসনের দাবি জানিয়েছে পরিবহন চালকরা।
ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান রবিন বলেন, প্রতিদিন বাসা থেকে বের হলেই রাস্তায় যানজটে পড়তে হয়। যানজট পেড়িয়ে অফিসে গেলে আর কাজ করার ইচ্ছা হয়না। এমনভাবে চলতে থাকলে এক সময় আমাদের কাজের প্রতি অনিহা চলে আসবে। যানজটের কারণে ব্যবসায় লোকসান গুনতে হয়। ঈদের আগের সময়ে যদি ভালো বেচাকেনা করতে না পারি তাহলে আর করার সুযোগ নেই।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক বলেন, ফুটপাথকে এখনো পথচারীবান্ধব করা যায়নি। পথচারীরা রাস্তায় না হেঁটে ফুটপাথে হাঁটবে। ফুটওভারব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে কিন্তু চলার মতো করতে পারি নাই। রাজধানীর ১৫ শতাংশ লোক প্রাইভেটকার ব্যবহার করে। কিন্তু ৭৭ শতাংশ রাস্তা দখল করে রাখে প্রাইভেটকার। গণপরিবহনকে উৎসাহ দেয়ার জন্য আমরা কিছুই করিনি। প্রাইভেটকারের সংখ্যা বেড়েছে, যানজটও বেড়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন