শক্তিশালী বিরোধী দল পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (১১ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অপজিশন বলতে যারা আছে, তার মধ্যে দুটো পার্টি (বিএনপি ও জাতীয় পার্টি), দুটোই হচ্ছে মিলিটারি ডিক্টেটর— যারা একেবারে সংবিধান লঙ্ঘন করে, আর্মি রুলস ভঙ্গ করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিল, তাদের হাতে গড়া। তিনি বলেন, কাজেই ঠিক ওই মাটি ও মানুষের সঙ্গে যে সম্পর্ক, সেই সম্পর্কটা তাদের মধ্যে নেই। তাদের কাছে ক্ষমতাটা ছিল একটা ভোগের জায়গা। সেই ক্ষেত্রে আসলে অপজিশন তাহলে কোথায়? এখানে একটা পলিটিক্যাল সমস্যা কিন্তু আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই আমরা শক্তিশালী বিরোধী দল পাচ্ছি না। তাদের অবস্থানটা মানুষের কাছে নেই। কারণ তারা তো এসেছেই একটা ভাসমান অবস্থায়। কাজেই তাদের ওই শেকড় তারা গড়তে পারেনি। সেই ক্ষেত্রে আমাদের ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড থেকে যখন শোনায় যে এখানে ডেমোক্রেসি, পার্টিসিপেটরি ডেমোক্রেসি, ইলেকশন, হেনতেন- কিন্তু আসলে এখানে করবটা কী, সেটাও তারা চিন্তা করে না। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলতে গেলে অনেক দল দরকার। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, উন্নত বিশ্ব দেখলে আপনারা দেখবেন— সেখানে কিন্তু মাত্র দুই দল হয়ে গেছে এখন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দুই দলের বেশি শক্তিশালী দল নেই। আবার আমি তো জানি, আমেরিকার প্রায় ২৫ শতাংশ সংগঠন ইলেকশনই করে না। ইলেকশন করার বিষয়ে একটা অনীহা চলে আসে মানুষের। এটাও কিন্তু অনেক দেশে দেখা যাচ্ছে। আমাদের দেশটা ধীরে ধীরে ওরকম হয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পেছন থেকে তাদের উৎসাহ দিয়ে একবার ক্ষমতায় আনতে পেরেছিল, যেটা ২০০১ সালে এনেছিল। কিন্তু তার পরিণতি কী ছিল? বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, বাংলা ভাই সৃষ্টি, জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, ৫০০ জায়গায় একদিনে বোমা হামলা, আমি অপজিশনে থাকতে আমাদের ওপর গ্রেনেড হামলা, অপজিশনের অনেক নেতাকর্মীর ওপর হামলা হলো। তিনি বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ওপর গ্রেনেড হামলা, কামরান মারা গেছে, তার ওপর দুই বার গ্রেনেড হামলা হলো; হেলালের মিটিংয়ের ওপর হামলা, সেখানে ৯ জন মারা গেল। এ রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সেই সময় সারা দেশজুড়ে হয়েছে। রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাটা যদি মানুষকে ঘিরে হয়, মানুষের কল্যাণমুখী হয়, সেই রাজনীতি কিন্তু টিকে থাকে, সেটাই চলে। সরকার প্রধান বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ একটা দল, যে দলটা সেই ১৯৪৯ সালে তৈরি। বিরোধী দল থেকে একেবারে সাধারণ মানুষকে নিয়ে এ দলটা গড়ে তোলা। এ সংগঠনের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারে এলে এ দেশের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হয়। কেন হয়? এই জন্য হয়, মাটি ও মানুষের মধ্য থেকে উঠে এসে মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই আমাদের সংগঠনটা তৈরি করা। কাজেই আমাদের চিন্তা চেতনাটা ওখানেই থাকে।
প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলে এ মতবিনিময় সভা। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, রাষ্ট্রদূত-অ্যাট-লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমম্বয়ক জুয়েনা আজিজ এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিগত তিন বছরের কাজের ওপর একটি তথ্যপত্র উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন