বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাজেটে ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

আগামী অর্থবছরের বাজেটে গরিব ও প্রান্তিক মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিতে হবে। ব্যক্তিশ্রেণির ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য আয়কর মুক্ত সীমা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। আর এসব করতে গিয়ে বাজেট ঘাটতি বাড়লে অসুবিধা নেই। নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি কম আয়ের মানুষসহ মধ্যবিত্তদেরও কষ্টকর অবস্থায় ফেলেছে।

গতকাল সংস্থাটির ধানমন্ডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আগামী অর্থবছরের জন্য সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়। সুপারিশ তুলে ধরেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এ সময় সিপিডি’র ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খানসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। ফাহমিদা খাতুন বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট আসছে এমন সময়ে যখন নিত্যপণ্যের মূল্য ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে, বহিঃখাত প্রচন্ড চাপে রয়েছে, বিদেশি উৎস থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণ বেড়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে রাজস্ব সংগ্রহ নির্দিষ্ট পদ্ধতির মধ্যে না রেখে বাস্তবসম্মত হওয়া উচিত। সিপিডি কোনো কোনো ক্ষেত্রে কর হার বাড়ানো আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রণোদনা পুনর্বিবেচনা করার প্রস্তাব করেছে। অর্থপাচার রোধে ট্রান্সফার প্রাইসিং জোরদারের উদ্যোগ নেয়ার সুপারিশ করেছে সিপিডি।

বেসরকারি সংস্থাটি বলছে, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য চলতি অর্থবছরের বাকি সময়ে অব্যাহত থাকতে পারে এবং জুলাই মাস থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন অর্থবছরের প্রথমদিকেও থাকতে পারে। এসব বিবেচনায় সিপিডি অত্যাবশকীয় পণ্যের ওপর আরোপিত আমদানি শুল্কসহ অন্যান্য কর কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। সেইসঙ্গে স্বল্প আয়ের মানুষকে একটু স্বস্তি দিতে আগামী অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার পরামর্শ দিয়েছে তারা।

ফাহমিদা খাতুন বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে এমন সব উদ্যোগ দরকার যাতে মানুষের কাজের সুযোগ বাড়ে। কৃষি উৎপাদন খরচ কম হয়। এজন্য তিনি সার ও জ্বালানিতে ভর্তুকি ও শিক্ষাখাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় কঠোর হওয়ার সুপারিশ করেছেন। তিনি বলেন, বাজারে প্রতিযোগিতার অভাব ও পরিবহনে চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়। সরকারকে কঠোর হাতে এসব বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা রাখার জন্য তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের বাজারে ডলার সরবরাহ করার সুপারিশ করেন। পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বরাদ্দ বাড়ানো, শ্রমিকদের স্বাস্থ্য বীমা চালু করা, লোকসানি প্রতিষ্ঠান ইপিজেড অথবা অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করা, এ খাতে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো, জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তন নবায়নযোগ্য জ্বালানি উদ্বুদ্ধকরণের সুপারিশও করেন। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, গত ১৩ বছরে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ ১ শতাংশ কমে গেছে। অথচ অন্য এলডিসির ৩০টি দেশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ১ শতাংশ বেড়েছে। স্বাস্থ্যখাতের অনেক পণ্য আছে যেগুলোর ব্যবহার ক্ষতিকর। সেগুলোর কর বাড়াতে হবে। বিশেষ করে সিগারেট। সিগারেটের ক্ষেত্রে আড়াই শতাংশ সারচার্জসহ ৫০ শতাংশ ট্রাক্স বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি সফট ড্রিংক স্বাস্থ্যখাতের কোন উপকার আসে না বরং ক্ষতি করে। ফলে এই খাতে ট্যাক্স বাড়ানো এবং স্যানিটারি ন্যাপকিন যেগুলো মেয়েরা ব্যবহার করে থাকে। এটার ট্যাক্স কমিয়ে আনতে হবে। এসময় তিনি সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা বলেন। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতির হিসাবটি সঠিকভাবে করতে হবে। সঠিক তথ্যগুলো যাতে সবাই সহজে পেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। বড়বড় মেগাপ্রকল্পগুলোর মেয়াদ বাড়ার কারণে দুর্নীতি ও ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে ব্যয় বাড়লে ভবিষ্যতে এই প্রকল্পগুলো লাভজনক নাও হতে পারে। তিনি বলেন, আমাদের কর, জিডিপির রেশিও বাড়ার পরিবর্তে তা কমছে। এটা কোভিডের আগে কর জিডিপি রেশিও ১০ শতাংশ ছুঁই ছুঁই হলেও বর্তমানে তা ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। জিডিপি’র আকার বাড়লেও কর আদায় কমছে। এটা অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে। আমাদের রফতানি আয় বাড়লেও আমদানি তার চেয়েও বেশি বাড়ছে। এতে করে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হতে পারে।

ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যতিক্রম সময়ে বাজেট আসছে। এ রকম ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নিতে হবে। কীভাবে নিম্ন আয়ের ও দরিদ্র মানুষকে স্বস্তি দেয়া যায় সেজন্য বাজেটে পদক্ষেপ থাকতে হবে। আমদানি পর্যায়ে কর ছাড় দিতে হবে। বাজেট ঘাটতি বাড়ে সেটা মেনে নিতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।
ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেটে নতুন ইকোনমিক সোশ্যাল অর্ডার প্রয়োজন। এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রস্তুতি শেষ করতে হবে। সরকারের ঋণ ও দায়, বাজার, সুশাসন, প্রতিষ্ঠান সংস্কার রাজস্ব, আদায় কাঠামো বিষয়ে বিশেষ নজর দরকার। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনী ইশতিহারে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও দীর্ঘস্থায়ী প্রবৃদ্ধি, সামাজিক কল্যাণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলের অঙ্গীকার থাকা প্রয়োজন। তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনের আগে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কিছু প্রকল্প নেওয়া হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। এ ধরনের প্রকল্প নেয়ার ক্ষেত্রে এখন সতর্ক থাকা দরকার। অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেয়া ঠিক হবে না। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন