শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সড়কের ওপর পার্কিং বন্ধ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

রাজধানীর যানজটের অন্যতম কারণ সড়কের ওপর যানবাহন পার্কিং করে রাখা। নগরীরর এমন কোনো ব্যস্ত সড়ক নেই যেখানে দূরপাল্লা থেকে শুরু করে আভ্যন্তরীণ যানবাহন পার্ক করে রাখা না হয়। মতিঝিলের অফিস পাড়া, সচিবলয়, বিভিন্ন মার্কেট, বাস টার্মিনালের সামনের সড়ক থেকে শুরু করে প্রায় সর্বত্র সড়ককে পার্কিং এলাকায় পরিণত করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সড়কের অবৈধ দখলদারিত্ব রয়েছে। সড়কের ওপর গাড়ি পার্কিং এবং অবৈধ দখলই বড় বড় সড়কগুলোকে সরু গলিতে পরিণ করে তুলেছে। ফলে সর্বক্ষণই যানজট লেগে থাকে। এ নিয়ে বহু লেখালেখি হলেও ন্যূনতম প্রতিকার মেলেনি। বরং দিন দিন যানজট বেড়েই চলেছে। রাজধানীর ভেতর বড় বড় তিনটি টার্মিনাল থাকায় দূর পাল্লার যানবাহন এখন এগুলোর চারপাশের সড়ক দখল করে পার্কিং করায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রাত ৮টা থেকেই সড়কগুলোতে দুই-তিন সারিতে বাস রেখে সড়কগুলো দখল করে ফেলা হচ্ছে। পুলিশের সামনেই এ ধরনের অবৈধ পার্কিং চললেও তারা কিছুই বলছে না। এর কারণ হিসেবে জানা যায়, পুলিশকে ম্যানেজ করেই এসব পার্কিং করা হয় এবং জনদুর্ভোগ চরমে নিয়ে যাওয়া হয়। সড়ক দখল করে পার্কিংয়ের এমন অরাজক পরিস্থিতি বিশ্বের আর কোনো নগরীতে দেখা যায় না।

একটি আদর্শ শহরে আয়তনের শতকরা ২৫ ভাগ সড়ক থাকতে হয়। রাজধানীতে রয়েছে মাত্র ৭ ভাগের মতো। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই ৭ ভাগ সড়কের অনেক অংশ আবার নানাভাবে অবৈধ দখলের কবলে পড়ে আছে। ফুটপাত দখল শেষে এখন মূল সড়কও দখলের কবলে। গাড়ি পার্কিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে সিংহভাগ সড়ক দখল হয়ে থাকে। অফিস-আদালত, শপিং মল থেকে শুরু করে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে গাড়ি পার্ক করে রাখা হয় না। সিটি করপোরেশন অনেক এলাকায় পার্কিং নিষিদ্ধ করলেও তার কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায় না। বরং কখনো কখনো সিটি করপোরেশন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পার্কিং লিজ দিয়ে থাকে। শুধু রাজধানীতেই নয়, রাজধানীর চারপাশের সড়কেও অবাধে অবৈধ পার্কিং চলছে। আশুলিয়া থেকে আবদুল্লাহ পুর পর্যন্ত সারাদিন সারিবদ্ধভাবে ট্রাক পার্ক করে রাখা হয়। ঢাকার অন্য পাশেও একইভাবে সড়ক দখল করে পার্ক করা হয়। সন্ধ্যা ৭টার পর থেকেই এসব ট্রাক রাজধানীতে প্রবেশ শুরু করে। তখন সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট। রাজধানীতে সড়কের তুলনায় প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখন পার্কিং সমস্যা দেখা দিয়েছে। সড়কই এখন ভরসা হয়ে উঠেছে। যতই দিন যাচ্ছে প্রাইভেট কারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে গাড়ি পার্কিংয়ের আর কোনো জায়গাই থাকবে না। তখন সড়কের উপরই পার্ক করতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি সামাল দিতে হলে প্রাইভেট কারের রেজিস্ট্রেশন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গণপরিবহন ব্যবস্থার উপর জোর দিতে হবে এবং আধুনিক করে সাজাতে হবে। তা নাহলে, যানজট ও সড়কে পার্কিং কোনোভাবেই ঠেকানো যাবে না। সিঙ্গাপুরে সহজে প্রাইভেট কারের রেজিস্ট্রেশন পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তার রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে শুরু করে বিভিন্ন শুল্ক এত বেশি যে একজনের পক্ষে প্রাইভেট কার মেইন্টেইন করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। সরকার এটা করেছে ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে নিরুৎসাহী ও গণপরিবহন ব্যবহারে বাধ্য করার জন্য। সেখানের গণপরিবহনও আধুনিকভাবে সাজানো এবং কোথায় সড়কের ওপর গাড়ি পার্কিং দেখা যায় না। আমাদের দেশে আমরা উন্নয়নের বড় বড় কথা বলি। অথচ যানবহান ও যানজটের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোনো উন্নতি করতে পারিনি। বহু বছর ধরে শোনা যাচ্ছে, রাজধানীর অভ্যন্তরের আন্তঃনগর বাস টার্মিনালগুলো সরিয়ে শহরের বাইরে নেয়া হবে। বিভিন্ন প্রকল্পও নেয়া হয়েছে। আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। বিভিন্ন মহাসড়ক আটলেন, ছয়লেন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, সেগুলোর কোথাও কোথাও ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনের স্ট্যান্ড করে টার্মিনালে পরিণত করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কাঁচপুরসহ বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের স্ট্যান্ড রয়েছে। ফলে সেসব স্থানে যানজট লেগেই থাকে। তাহলে এই আটলেন করে কি লাভ হলো?

সড়কের উন্নয়ন করলেই হয় না, তা রক্ষণাবেক্ষণ করতেহয়। না করলে টেকসই হয় না। সরকার সড়কের উন্নয়ন করছে ঠিকই তবে বিভিন্ন স্থানে সেগুলো নানাভাবে অবৈধ দখলে চলে যাচ্ছে। এতে সড়কের সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি যানজট লেগে যানবাহন চলাচলেও বিঘ্ন ঘাটচ্ছে। সামনে ঈদ। এখন থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছে, করোনা পরবর্তী স্বাভাবিক সময়ে লাখ লাখ মানুষ গ্রামমুখী হবে। এতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হবে। যদি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করা না যায়, তাহলে যাত্রীদের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। রাজধানীতে প্রতিদিন বিভিন্ন সড়ক দখল করে যে অবৈধ পার্কিং চলছে, তা এখনই উচ্ছেদ করতে হবে। কোনোভাবেই সড়কে যানবাহন পার্ক করা যাবে না। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। রাজধানীর অভ্যন্তরের বাস টার্মিনালগুলো বাইরে স্থানান্তরের দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। সড়ক-মহাসড়ক যান চলাচলের জন্য, টার্মিনালের জন্য নয়। অতএব অবিলম্বে অবৈধ টার্মিনাল বন্ধ করতে হবে। যানজট ও জনদুর্ভোগ লাঘবে বিকল্প নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন