শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

দেশে দীর্ঘদিন ধরে এক ধরনের অপসংস্কৃতি চালু হয়ে আছে। ঈদের সময় ঘনিয়ে এলেই সড়ক মেরামত ও সংস্কারের ধুম পড়ে যায়। সারাবছর কোনো খোঁজ থাকে না। এর কারণ হচ্ছে, এ সময় যেনতেনভাবে কাজ দেখিয়ে অর্থ বরাদ্দ এবং তা লুটপাটের সুযোগ সৃষ্টি করা। এবারের ঈদকে সামনে রেখেও এ ধরনের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। ঈদের আরও পনের দিন বাকি থাকলেও এখন থেকেই ঘরমুখী মানুষের প্রস্তুতি চলছে। গত তিন বছর করোনা এবং লকডাউনের কারণে মানুষ স্বাভাবিকভাবে বাড়ি যেতে পারেনি। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার চিরায়ত বিষয়টি প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এবার করোনা পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক এবং মৃত্যুহার কখনো কখনো শূন্যের কোঠায় ও আক্রান্তের হার এক শতাংশের নিচে হওয়ায় ঘরমুখী মানুষের যে ঢল নামবে, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। এক রাজধানী থেকে অর্ধ কোটি বা তারও বেশি মানুষ গ্রামে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, যে পথে তারা বাড়ি যাবে তা কতটা মসৃণ ও ঝুঁকিমুক্ত, সে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। এখন থেকেই আশঙ্কা করা হচ্ছে, ঈদযাত্রায় যাত্রীদের ভোগান্তির অন্ত থাকবে না।

যাত্রীদের পথে পথে ভোগান্তিতে পড়তে হবে মূলত সড়ক-মহাসড়কের বেহালদশা ও বিশৃঙ্খলার কারণে। পত্রিকান্তরে প্রকাশ, রাজধানী থেকে বের হওয়ার পরই অনেক সড়ক-মহাসড়কে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হবে। যানজটে পড়ে গরমে নাকাল হতে হবে। অনেক সড়ক-মহাসড়ক সংস্কার ও মেরামতের কাজ চলছে। এতে সড়ক সরু হয়ে পড়ছে। এ সড়কে দুই দিক থেকে যানবাহন যাওয়া আসার গতি অত্যন্ত ধীর হয়ে পড়বে। ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হবে। এখনই বলে দেয়া যায়, এ জট ৪০-৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। ঈদের সময় অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে পরিবহন মালিকরাও গাড়ির সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। এই বাড়তি গড়ির চাপের কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়। যাত্রীদের চাহিদার কারণে চালকদের মধ্যেও তাড়াহুড়ো থাকে। এক ট্রিপ নামিয়েই বিরতি ছাড়াই ফিরতি পথ ধরে। এর মধ্যে সড়ক যদি মসৃণ না হয়, খানাখন্দ এবং ভাঙাচোরা থাকে, তাহলে বিড়ম্বনার শেষ থাকে না। সড়কের বেহাল দশায় গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে রয়েছে সড়ক-মহাসড়কে থ্রি হুইলার, নছিমন, করিমন নামক হালকা যানবাহন। এসব যানবাহনের কারণে স্বাভাবিক সময়েই দ্রুতগামী যানবাহনের যাতায়াত বিঘ্ন ঘটে। কখনো কখনো মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। ঈদের সময়ে যদি এসব যানবাহন অবাধে চলাচল করতে থাকে, তাহলে দুর্ঘটনাসহ ভয়াবহ যানজট আরও বেড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। ধারণা করা হচ্ছে, এবার সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে লাখ লাখ মানুষ ঈদ করতে বাড়ি যাবে। ইতোমধ্যে আকাশ পথের সব টিকেট শেষ হয়ে গেছে। গত শুক্রবার থেকে বাসের অগ্রিম টিকেট দেয়া শুরু হয়েছে। আগামী সপ্তাহ থেকে রেলের টিকেট ছাড়া হবে। নৌপথেও অগ্রিম টিকেট দেয়া শুরু হয়েছে। এ চিত্র থেকে ঘরমুখী মানুষের প্রবল আগ্রহের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তাদের যাত্রাপথ নিরাপদ করতে সরকার কতটা প্রস্তুত? ইতোমধ্যে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে প্রস্তুতিতে যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে সড়ক পথ পুরোপুরি প্রস্তুত নয়। সড়ক ও সেতুমন্ত্রী সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিলেও ঈদের আগে তা বাস্তবায়ন হবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। দেখা যায়, সড়ক সংস্কারের বিষয়টি ঈদের আগে আগে শুরু হয়। অত্যন্ত অল্প সময় নিয়ে কোনো রকমে সংস্কার করা হয়, যার স্থায়িত্ব বলে কিছু থাকে না। এতে অর্থের যেমন অপচয় হয়, তেমনি মানুষের ভোগান্তিও চরমে উঠে। অথচ ঈদের দুই তিন মাস আগে থেকেই সুষ্ঠু ও মজবুতভাবে সড়কগুলোর সংস্কার ও প্রস্তুত এবং সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুশৃঙ্খল করলে ঈদযাত্রা অনেকটাই আনন্দদায়ক ও স্বস্তিকর করে তোলা সম্ভব। ঈদের আগে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়ার অর্থ হচ্ছে, লুটপাটের উপলক্ষ সৃষ্টি করা।

নতুন প্রেক্ষাপটে এবার ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রার বিষয়টি সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। তারা যাতে স্থল, নৌ ও আকাশপথে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারে, তার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কগুলোর সংস্কার কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে। এমন যাতে না হয়, কোনো রকমে সংস্কার করা হলো এবং বৃষ্টির সময় তা আবার ভেঙ্গে আগের অবস্থায় চলে গেল। টেকসইভাবে সড়ক সংস্কার করতে হবে। সড়ক-মহাসড়কের যেখানে যেখানে যানজট লাগা ও দুর্ঘটনার প্রবণতা রয়েছে সেসব স্থানে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঈদের আগে নামকাওয়াস্তে সংস্কার করার অপসংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ঈদের আগেই সব ধরনের যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন ও অবাধ রাখতে হবে। ঈদের সময় যাত্রীবাহী বাসের চালকদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। তাড়াহুড়ো করে অতিরিক্ত ট্রিপ মারতে গিয়ে নিজের ও যাত্রীদের জীবন বিপন্ন করা যাবে না। সরকারকে সড়ক-মহাসড়ক থেকে থ্রি হুইলার জাতীয় যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। সড়কের পাশে বসা বাজার উঠিয়ে দিতে হবে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ১৭ এপ্রিল, ২০২২, ১১:৩১ এএম says : 0
স্বাধীনতার পরেই বুঝতে পারলাম আমরা কাদের জন্য দেশ স্বাধীন করেছি এরা আজকে পঞ্চাশ বছর ধরে দেশটাকে লুটপাট করে খাচ্ছে
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন