শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কক্সবাজারে বাঁকখালী নদী-প্যারাবন দখল

জাকের উল্লাহ চকোরী,কক্সবাজার থেকে | প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

কক্সবাজার শহরে সদর মডেল থানা থেকে মাত্র ৫০০ মিটার উত্তরে বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকা। নদীর অপর পাশে খুরুশকুল। মাঝখানে বাঁকখালী নদীর ওপর তৈরি হচ্ছে ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতু। কিন্তু সেতু নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই শুরু হয়েছে নদী ও তীরের প্যারাবন দখল। প্রথমে প্যারাবনের গাছপালা নিধন, পরে বালু ফেলে নদী ভরাট করে প্লট বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে সংযোগ সড়কের পাশে প্রায় ৬০০ হেক্টর এলাকার প্যারাবন উজাড় করে তৈরি হচ্ছে শতাধিক ঘরবাড়িসহ নানা স্থাপনা।

গত শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আমিন আল পারভেজ বলেন, নদী দখল ও প্যারাবন নিধনের অভিযোগ পেয়ে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সরেজমিন পরিদর্শন করতে এসেছি। পরিদর্শনকরে নদী দখল করে ভরাট ও প্যারাবনের গাছ নিধন অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। নদী দখলদারদের উচ্ছেদ করতে হাইকোর্টের নিদের্শনা রয়েছে। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে নদী দখলকারী ও প্যারাবনের গাছ নিধন করে স্থাপনা নির্মাণকারী এবং প্লট বাণিজ্যে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উচ্ছেদ করা হবে নির্মিত ও নির্মাণাধীন সব স্থাপনা।

পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রণমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় গত দুই মাসে প্রায় ৬০০ হেক্টর এলাকায় নদী দখল ও ভরাট করে ৪০ হাজার কেওড়া ও বাইনগাছ কেটে শতাধিক টিনের ঘর ও পাকা ভবন তৈরি হয়েছে এবং হচ্ছে। গাছপালা উজাড় হওয়ায় ২০৫ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া নদীর অন্যান্য এলাকায়ও দখল ও ভরাটের কারণে নদীর গতিপথ সংকোচিত হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট দিয়ে একসময় চট্টগ্রামের সঙ্গে জাহাজ চলাচল ছিল। পৌরসভার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল কস্তুরাঘাট। এখান থেকে খুরুশকুল পর্যন্ত নদীর প্রস্থ ছিল দেড় কিলোমিটার। এই দেড় কিলোমিটারজুড়েই পানির প্রবাহ ছিল। দখল, দূষণ এবং ভরাটের কারণে এখন নদীতে পানির প্রবাহ আছে কোথাও ৪০০ মিটার, কোথাও ২০০ মিটার। ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সংযোগ সেতুর কাজ শুরুর পর থেকে নদীর বুকে সৃষ্ট প্যারাবন ও জলাভূমি ধ্বংস করা হচ্ছে। তাই পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
জানা যায়, বাঁকখালী হচ্ছে কক্সবাজার জেলার প্রধান নদী। এই নদীর উপর অন্তত ৭ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। এছাড়া বিভিন্নভাবে আরো কয়েক লাখ মানুষ নির্ভরশীল। তাই সাধারণ জনগণের স্বার্থে যে কোনোভাবে এই নদীটি রক্ষা করা প্রয়োজন। অথচ জনগুরুত্বপূর্ণ এই নদীটি অবৈধভাবে দখল করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলছে প্রভাবশালীরা। আবার অনেকেই নদী ভরাট করে আবাসন প্লট তৈরি করে বিক্রিও করছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) এক রিট মামলার প্রেক্ষিতে জানা যায় ২০১৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বাঁকখালী নদী দখলদারদের তালিকা তৈরী করে তাদের উচ্ছেদ ও দূষণের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি যে কোনো উদ্দেশ্যে নদী ইজারা থেকে বিরত থাকতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ ১০ সরকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

আদালত বাঁকখালী নদীকে কেন প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করতে নির্দেশ প্রদান করা হবে না বা কেন প্রাথমিক প্রবাহ ও সিএস জরিফ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণপূর্বক তা রক্ষা করার নির্দেশ প্রদান করা হবে না, কেন নদীর উভয় তীরের উপকূলীয় বন ফিরিয়ে আনার নির্দেশ প্রদান করা হবে না তা জানতে রুল জারি করেন।
পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, বাঁকখালী নদীর প্যারাবন দখল ও ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে দুইটি মামলা হয়েছে পরিবেশ অধিদফতরের পক্ষ থেকে। তবুও প্যারাবন দখল ও দূষণ বন্ধ করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, নিয়মিত অভিযান চালানোর মতো পর্যাপ্ত লোকবল নেই আমাদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন