চলছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। অন্য সময়ের চেয়ে রোজায় অল্প সময়ে বেশি খাওয়া হয়ে থাকে। আমাদের ধারণা যে খালি পেটে থাকলে অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়ে। তাই পেপটিক আলসার বা গ্যাস্ট্রিকের রোগীরা রমজান এলে উদ্বিগ্ন হন। আসলে শুধু রোজার কারণে অ্যাসিডিটি বা অম্লতা বাড়ে না। নিয়মিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করলে তেমন সমস্যা হওয়ার কথা নয়; বরং শৃঙ্খলা ও নিয়মের মধ্যে এ সময় অ্যাসিডিটি ও আলসারের সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। তবে খেয়াল রাখুন, ভাজাপোড়া ও গুরুপাক খাবার যেন বেশি না হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে যথেষ্ট পানি ও আঁশজাতীয় খাবার রাখবেন। তাই প্রতিদিন ভাজাপোড়া খাওয়ার চেয়ে খাবারে আনতে পারেন ভিন্নতা। বিশেষ করে যারা গ্যাস্ট্রিকের রোগী তাদের জন্য খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। কারণ ইফতারে গ্যাস্ট্রিকের রোগীরা যা ইচ্ছা তাই খেতে পারবেন না। কারণ নিয়ম মেনে না খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যাবে। যা আপনার জন্য ডেকে আনতে পারে ভয়াবহ বিপদ। তাই যারা শারীরিকভাবে অসুস্থ তাদের রোজার সময় একটু বেশি সতর্ক থাকা উচিৎ।
জেনে নিন গ্যাস্ট্রিক ও আলসারের রোগীরা রমজান মাসে কীভাবে সুস্থ থাকতে পারবেন, সেই বিষয়ে কিছু পরামর্শ।
যা করা যাবে নাঃ তৈলাক্ত খাবার, ভাজা-পোড়া, বেশি মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। চা-কফি একদমই পরিহার করতে হবে। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবারও এড়াতে হবে ইফতারে। ইফতারে অতিরিক্ত খাওয়া যাবে না কোনো ভাবেই। বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে পুরোপুরি। সেহরিতে বিরিয়ানি, কাবাব কিংবা ফাস্টফুড জাতীয় কোনো ভারি খাবার খাওয়া যাবে না। যা করতে হবে ইফতারের পর থেকে সেহরি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। কমপক্ষে আড়াই লিটার পানি পান করা উচিত এ সময়ের মধ্যে। ইফতারে সেদ্ধ, ঝোল, সালাদ, স্যুপ, ভাত এ ধরনের খাবার খেতে হবে। একবারে বেশি ইফতার না খেয়ে প্রয়োজনে কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তারাবীর পর অল্প হলেও খেতে হবে। খাবার মেন্যু সুষম রাখতে হবে। রাতের খাবার বাদ দেওয়া যাবে না। ঘুমানোর দেড় ঘণ্টা আগেই খেয়ে নিতে হবে। খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লে বুক জ্বালাপোড়া করতে পারে। সেহরির মেন্যুতে কম মশলার ঝোলযুক্ত খাবার রাখুন। সহজে হজম হয় এমন খাবার বেছে নিন সেহরির জন্য।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যাটা বাংলাদেশে অতি পরিচিত পেটব্যথা, বুকব্যথা যাই হক আর যে কারণই হোক আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি মানুষ একটা গ্যাসের বড়ি খেয়ে থাকেন। অনেকে বছরের পর বছর ধরে এই বড়ি খেয়ে সুস্থ আছেন বলে দাবী করেন। কিন্তু এর সুদূর প্রসারী সমস্যা গুলো একবারও চিন্তা করে না। আসলে গ্যাস্ট্রিক কী তা আমারা সকলে জানি। এর ফলে পেটে থাকা অতিরিক্ত এসিড পাকস্থলি, খাদ্য নালী ও অন্ত্রে ক্ষত তৈরী করে। কারো কারো গলার কাছে জ্বালা পোড়া করে। কারো কারো চুকা ঢেক উঠে। অনেকে বমি করে গ্যাস্ট্রিক থেকে বা গলার কাছের জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তি পান।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণাবলী: বুক জ্বালা, বদহজম বা অজীর্নতা, পেটে বেদনা, রক্তবমি বা রক্তস্রাব, টক ঢেকুর, বমির রক্ত টকটকে লাল, পেট বেদনা হঠাৎ করে প্রচন্ড আকারে দেখা দেয়, পেটের খাদ্য বমি হয়ে গেলে ব্যথার উপশম হয়। শরীরে পানি স্বল্পতা থাকে এবং জ্বর থাকে।
ভাবী ফল: নতুন অবস্থায় রোগী সহজে আরোগ্য হয় কিন্তু পুরাতন অবস্থায় ক্যান্সারের পরিণত হতে পারে বা ছিদ্র হয়ে গেলে পেরিটোনাইটিস হতে পারে।
ডিওডেনাল আলসার: খাদ্য পাকস্থলী হতে নিচের দিকে অপেক্ষাকৃত সরু যে নালিতে প্রবেশ করে সেই বাকা অংশটিকে ডিওডেনাম বলে। সেই ডিওডেনামের মিওকাস মেমব্রেন ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হলে তাহাকে ডিওডেনাল আলসার বলে। সাধারণত ৩০-৪০ বছর বয়সের মানুষ এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয়। বিশেষ করে যে সকল পুরুষ মানুষের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। রোগের মূল কারণ এবং আনুষঙ্গিক কারণ: গ্যাস্ট্রিক আলসারের ন্যায় ডিওডেনাল আলসারের লক্ষণগুলো: খাবার গ্রহণের ১-৩ ঘণ্টা পর পেটে ব্যথা শুরু হয়। রক্ত বমি খুব একটা হয় না, কখনও হলেও রক্তের বর্ণ কালো দেখায়। পায়খানার সহিত কালো বণের রক্ত যায় বা রক্ত পায়খানা। জ্বালা যুক্ত ব্যথা। এই রোগীদের পেটে ক্ষিদে পেলেই ব্যথা বৃদ্ধি হয়। পেটে ব্যথার সময় মুখে পানি আসে বুক জ্বালা করে।
হোমিও সমাধানঃ রোগ নয় রোগিকে চিকিৎসা করা হয়, এই জন্য পেপটিক বা গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর প্রাথমিক ও মারত্মক লক্ষণের কোনোটি দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞ হোমিও চিকিৎসক গন প্রাথমিক ভাবে যেসব মেডিসিন নির্বাচন করে থাকেন, আর্সেনিকাম এলবাম, এনার্কাডিয়াম, আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম,আর্জেন্টাম নাইট্রিকাম, ক্যাডমিয়াম সালফ, ক্রিয়োজোটাম, সিকেলিকর, ইপিকাক , হাইড্রাসটিস, হেমামেলিস, মিলিফোলিয়াম, নাক্সভম সহ আরো অনেক মেডিসিন লক্ষণের উপর আসতে পারে তাই ঔষধ নিজে নিজে ব্যবহার না করে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রতিষ্ঠাতা,জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি
ইমেইল: drmazed96@gmail.com
মোবাইলঃ ০১৮২২৮৬৯৩৮৯।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন