শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

নিউ মার্কেটের ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৮ এএম

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের সাথে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে পুলিশ এখন বেশ তৎপর হয়ে উঠেছে। সংঘর্ষ চলাকালে তাদের নিষ্ক্রিয় থাকা বা সংঘর্ষ নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া সমালোচিত হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর এখন সক্রিয়। ঘটনায় ইতোমধ্যে ৪টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা রয়েছে। তিন মামলায় ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে ১৪০০ জন। এরই মধ্যে গত শুক্রবার মামলার এক নম্বর আসামী বিএনপির নিউমার্কেট থানার সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ঘটনার সময় হেলমেট পরিহিত বেশ কয়েকজন যুবককে হামলায় অংশ নিতে দেখা যায়। ইতোপূর্বে বিভিন্ন সংঘর্ষের সময় হেলমেট বাহিনীর উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও হেলমেট বাহিনী শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারপিট করে। তখন অভিযোগ উঠেছিল এরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা-কর্মী। নিউমার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, এরা ঢাকা কলেজের ছাত্র। দেখা যাচ্ছে, যেকোনো সংঘাত-সংঘর্ষে তৃতীয় কোনো গোষ্ঠী সুযোগ নিয়ে পরিস্থিতিকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যায় কিংবা আরও ভয়াবহ রূপ দেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর দায় গিয়ে পড়ে বিরোধীদল, বিশেষ করে বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের ওপর।

বিগত প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই তার দায় বিরোধীদলের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়। কোনো ঘটনা ঘটলে তদন্তের আগেই সরকারি দলের পক্ষ থেকে সরাসরি অভিযোগের আঙুল তুলে বলা হয়, এ ঘটনা বিরোধীদল ঘটিয়েছে। বিরোধীদলের পক্ষ থেকেও সরকারি দলকে অভিযুক্ত করা হয়। এক ধরনের ব্লেমগেম বা পারস্পরিক দোষারোপের রাজনীতি শুরু হয়। এই অপসংস্কৃতি বহুকাল ধরেই চলছে। এর ফলে ঘটনার মূল হোতা ও কুশিলবরা পার পেয়ে যায়। সরকারি দল থেকে তদন্তের আগেই যদি বলা হয়, বিরোধীদল ঘটনার সাথে জড়িত, তখন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাধ্য থাকে না এর বাইরে যাওয়ার। বিগত বছরগুলোতে বিরোধীদলকে ঘায়েল করার জন্য সরকারি দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের অপকৌশল বেশি নেয়া হয়েছে। পুলিশের অতি উৎসাহী কিছু সদস্যও আগ বাড়িয়ে বিরোধীদলের ওপর চড়াও হয়। কার্যত বিএনপি হয়ে পড়েছে নন্দঘোষ। যেখানে যা কিছু ঘটুক না কেন, তার সব দায় গিয়ে পড়ে বিএনপি’র ওপর। ঘটনাকে উপলক্ষ করে পুলিশ বিভিন্ন মামলা দায়ের করতে থাকে। আসামী করা হয় শত থেকে হাজার পর্যন্ত। বেশির ভাগই অজ্ঞাত। এই অজ্ঞাত আসামীর তালিকা দিয়ে বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের ওপর গ্রেফতার অভিযান চালানো হয়। অনেক সময় গায়েবী মামলাও করা হয়। অজ্ঞাত আসামী ও গায়েবী মামলা নিয়ে বিশ্লেষকরা ইতোমধ্যে নানা সমালোচনা করেছেন। তারা বলেছেন, এগুলো করাই হয় বিরোধীদলকে দমন-পীড়ন করার জন্য। বিএনপির পক্ষ থেকে প্রায়ই অভিযোগ করা হয়, দলটির ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সংখ্যাটি নেহায়েত কম নয়। এ থেকে বিরোধীদলের প্রতি সরকারের আচরণের একটি চিত্র পাওয়া যায়। অপরাধ যেই করুক এবং সে যে দলেরই হোক না কেন, সুষ্ঠু ও যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। প্রশ্নবিদ্ধ ও গায়েবী মামলায় বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করার বিষয়টি তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। নিউমার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনায়ও বরাবরের মতো বিএনপি’র ওপরই দায় চাপানো হচ্ছে।

যেকোনো সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনার শুরুতেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিৎ নিবৃত্ত করার প্রচেষ্টা চালানো। অনেক সময় দেখা যায়, পুলিশের সামনে ঘটনা ঘটলেও তার তৎপরতা দেখা যায় না। নিউমার্কেটের সংঘাতের ক্ষেত্রেও পুলিশের এই ভূমিকা দেখা গেছে। সংঘর্ষ শেষে এখন পুলিশ মামলা-মোকদ্দমা ও গ্রেফতার অভিযানে অতি তৎপর। এটার দুইটি দিক রয়েছে। এক. বিরোধীদল দমন করা। দুই. গ্রেফতার বাণিজ্য। এ ধরনের অপসংস্কৃতির কারণে ঘটনা চাপা পড়ে যায়। অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। আমরা দেখেছি, সংঘাতের সময় হেলমেটধারী যে সন্ত্রাসীরা হামলায় অংশগ্রহণ করে তাদের পুলিশ গ্রেফতার করতে পারে না। তারা কারা এবং কেনইবা তাদের ধরা যায় না, তার উত্তর পাওয়া যায় না। অন্যায়, অপরাধ ও সংঘর্ষে যারা জড়িত তাদের কারোই ছাড়া পাওয়ার কোনো কারণ নেই। যদি বিষয়টি একপেশে হয়, উদ্দেশ্যমূলক হয়, সেক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। বিরোধীদলের নেতা-কর্মীরা যে সংঘাত-সংঘর্ষে লিপ্ত হতে পারে না, তা নয়, তবে যেকোনো ঘটনার তদন্তের আগেই তাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা কাম্য হতে পারে না। আমরা আশা করব, নিউ মার্কেটের সংঘর্ষের ঘটনার নির্মোহ ও সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আসল হোতাদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হবে। এতে যে দলের লোকজন জড়িত থাকুক না কেন তাদের ছাড় দেয়া যাবে না। এটিও খেয়াল রাখতে হবে, অজ্ঞাতনামা আসামীর নামে নিরীহ-নির্দোষ কেউ যেন হয়রানি ও গ্রেফতারের শিকার না হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন