বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

গ্রীষ্মকালীন মন্দায় পড়তে পারে ব্রিটিশ অর্থনীতি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৫ এএম

রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে মূল্যস্ফীতি। জীবনযাত্রার ব্যয় ঊর্ধ্বমুখী থাকায় কমেছে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা। লকডাউন পরবর্তী সময়ে মন্থর হয়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এ অবস্থায় চলতি বছরের মাঝামাঝিতে ব্রিটিশ অর্থনীতি গ্রীষ্মকালীন মন্দায় পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি এবং ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের কারণে পরপর দুই প্রান্তিকে যুক্তরাজ্যের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) সংকুচিত হতে পারে। দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, উচ্চমূল্যস্ফীতি ব্রিটিশ ভোক্তাদের ব্যয় করার ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। ১৯৫০-এর দশকের পর থেকে দেশের পারিবারিক আয় সবচেয়ে বড় চাপের মুখোমুখি হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে প্রত্যাশার চেয়েও দুর্বল ছিল অর্থনৈতিক কার্যক্রম। মার্চে মূল্যস্ফীতির হার ১৯৯২ সালের পর সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ অবস্থায় সিটি ব্যাংকের বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের জিডিপি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) প্রায় ১ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রান্তিকে সংকুচিত হতে পারে। বিশ্লেষকরা বলেছেন, আগামী জুনে ব্রিটিশ রানীর দায়িত্ব গ্রহণের প্লাটিনাম জয়ন্তীর জন্য একটি অতিরিক্ত ব্যাংক ছুটি রয়েছে। এ সময়ে দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রম সংকুচিত হবে। কারণ সরকারি ছুটি সাধারণত সামগ্রিক অর্থনৈতিক উৎপাদন কমিয়ে দেয়। মহামারীর মোকাবেলায় জনগণকে টিকা দেয়ার জন্য শীতকালীন ছুটির পর স্বাস্থ্য খাতের কার্যক্রম কমে গেছে। সেই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের কারণে পরিবারগুলো তাদের ব্যয়ে লাগাম টেনেছে। এটিও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডাচ ব্যাংক আইএনজির অর্থনীতিবিদ জেমস স্মিথ বলেন, এপ্রিল-জুন সময়ে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্যাংকটির পূর্বাভাস অনুসারে, এ সময়ে ব্রিটিশ অর্থনীতি দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। এরপর জুলাই-সেপ্টেম্বর মাত্র দশমিক ২ শতাংশ বাড়বে। তৃতীয় প্রান্তিকের এ বৃদ্ধিকেও প্রযুক্তিগত মন্দা হিসেবে অভিহিত করেন স্মিথ। তিনি বলেন, দুই প্রান্তিকের কোনো একটি সংকোচন এড়ানো গেলেও আমরা সামান্য প্রবৃদ্ধির সংখ্যা দেখতে পাব। তিনি বলেন, লোকদের যদি জ্বালানির পেছনে আরো বেশি ব্যয় করতে হয়, তবে নিশ্চিতভাবেই অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন পণ্যে ভোক্তা ব্যয় পতন হবে। দুই মাস ধরে নিম্নমুখী রয়েছে যুক্তরাজ্যের ভোক্তা ব্যয়। মার্চে দেশটির খুচরা বিক্রি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। ফেব্রুয়ারিতে এ পতনের হার ছিল দশমিক ৫ শতাংশ। যদিও শিল্পসংশ্লিষ্টরা জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের মধ্যে খুচরা বিক্রিতে মন্দা নিয়ে আগে থেকেই সতর্ক করে আসছিলেন। খুচরা বিক্রির পাশাপাশি ব্রিটিশ অর্থনীতির অন্যান্য সূচকও নিম্নমুখী হয়েছে। চলতি মাসে পরিষেবা খাতের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) মার্চে ১০ মাসের সর্বোচ্চ ৬১ পয়েন্ট থেকে পতন হয়েছে। যেখানে পরিষেবা খাতে নতুন ক্রয়াদেশের সূচক কমে ৫৪ দশমিক ৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ফেব্রুয়ারিতেও এ সূচক ৬০ দশমিক ৪ পয়েন্টে ছিল। এ ধীরগতির প্রভাব পড়েছে কর্মী নিয়োগেও। চলতি মাসে নতুন কর্মসংস্থানের সূচক ৫৫ দশমিক ৮ পয়েন্টে নেমেছে। এ হার গত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। মার্চেও এ সূচক ৫৮ দশমিক ৪ পয়েন্টে ছিল। মার্চে শিল্পোৎপাদন খাতের পিএমআই পতনের পর চলতি মাসে অপরিবর্তিত রয়েছে। এ খাতে নতুন ক্রয়াদেশ কমে ৫১ দশমিক ২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ২০২০ সালের জুনের পর এ হার সর্বনিম্ন। অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ নিল শিয়ারিং বলেন, চলতি বছর যুক্তরাজ্যের পারিবারিক আয় প্রায় ১ দশমিক ৯ শতাংশ কমে যাবে। এ হার পঞ্চাশের দশকে আধুনিক রেকর্ড শুরু হওয়ার পর সবচেয়ে বড় পতন। যেখানে বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর ২০১১ সালে প্রকৃত আয় মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছিল। তিনি বলেন, অর্থনীতি এরই মধ্যে হ্রাস-বৃদ্ধির মাঝামাঝি পৌঁছেছে। সুতরাং জিডিপি সংকুচিত হতে এক বা দুই মাসের বেশি সময় লাগবে না। গার্ডিয়ান।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন