শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

শঙ্কা ১৩ কিমি পথ

ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার মহাসড়ক প্রস্তুত চার লেন ঢাকা টু টাঙ্গাইল সড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গুবন্ধু সেতু দুই লেনের সড়ক সিরাজগঞ্জের নলকা সেতু ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ফ্লাইওভার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঢাকা থেকে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় সড়কে যোগাযোগ বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল চার লেনের সড়ক। বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল চার লেন। হাটিকুমরুল থেকে এক সড়ক পাবনার নগরবাড়ি, এক অংশ নাটোর-রাজশাহী ও একাংশ বগুড়া-রংপুর-দিনাজপুর গেছে। কিন্তু টাঙ্গাইলের এলেঙ্কা থেকে মঙ্গবন্ধু সেতু ১৩ কিলোমিটার টু লেন। চার লেন থেকে শত শত গণপরিবহণ দুই লেনে এলেই শুরু হয় যানজট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এবারের ঈদে এই ১৩ কিলোমিটার পথ ও বঙ্গবন্ধু সেতুই যানজটে সৃষ্টি করবে।

জানতে চাইলে সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী দিদারুল আলম তরফদার বলেন, এবারের ঈদযাত্রায় মহাসড়কে তিন থেকে চার গুণ যানবাহন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য ২৫ এপ্রিল নবনির্মিত নলকা সেতুর একটি লেন খুলে দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পুরোনো নলকা সেতুটিও সচল রাখা হবে। বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী জানান, স্বাভাবিক সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৬ থেকে ৭টি লেনে টোল আদায় করা হয়। ঈদের আগে যানজট নিরসনে সেতুর উভয় পাশে ১৮টি লেনে টোল আদায় করা হবে।

ঢাকা টু টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের টাঙ্গাইল অংশে চার লেন সড়কের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। তবে গোড়াইয়ে নির্মানাধীন ফ্লাইওভার চলাচলের জন্য আজ সোমবার খুলে দেওয়া হবে। নবনির্মিত নলকা সেতুর একটি লেন খুলে দেওয়ার পাশাপাশি পুরোনো নলকা সেতুটিও সচল রাখা হবে। ঢাকা টু টাঙ্গাইল চার লেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক অমিত চক্রবর্তী জানান, মির্জাপুরের ফ্লাইওভারটি ২৫ এপ্রিল যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তাই এই সড়কে এলেঙ্গা পর্যন্ত আর কোনো সমস্যা থাকবে না। এরপরও যানজটের শঙ্কা রয়েছে। ঢাকা টু টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার দুই লেন বাড়াতে পারে ঢাকা টু টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের যানজট। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব পার পর্যন্ত দুই লেন হওয়ায় ভয়াবহ যানজট হওয়ার আশঙ্কায় করেছে চালকসহ সংশ্লিষ্টরা। ফলে এই ঈদে ঘরমুখো মানুষরা চরম ভোগান্তির শিকার হতে পারেন।

সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, যানজটের বড় কারণ নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানো। এ জন্য গাড়িচালকদের নিয়ম মেনে এক লেনে গাড়ি চালানোর অনুরোধ করা হচ্ছে। হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানায় বর্তমানে পুলিশ ৫২ জন সদস্য আছেন। তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে হয় ১০৫ কিলোমিটার মহাসড়কে। সে জন্য অতিরিক্ত আরও ২৫০ জন পুলিশ সদস্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। তাঁদের পেলে ২৬ এপ্রিল থেকে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কে কাজ শুরু হবে।

গতকাল কয়েকজন সাংবাদিক সরেজমিনে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মহাসড়কের কড্ডার মোড় এলাকায় অবস্থান করে মহাসড়কটি অনেকটাই ফাঁকা দেখেন। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ না থাকায় মহাসড়কটিতে যানজট নেই। তবে আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে মহাসড়কটিতে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ বেড়ে যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

পুলিশ, পরিবহনের চালক এবং সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা টু টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে উত্তরবঙ্গসহ ২৪ জেলার যানবাহন চলাচল করে। এতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো মহাসড়কের এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন সুবিধা নিয়ে দ্রুত চলে আসতে পারে। তবে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়কটি দুই লেনের। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু সেতুটিও দুই লেনের। এতে যানবাহন চার লেনের সুবিধায় দ্রুত এলেঙ্গা পর্যন্ত এসে আটকে যায় দুই লেনের মুখে। সেখান থেকেই যানবাহনগুলো ধীর গতিতে চলে, ফলে যানজটের শুরু হয়। এছাড়াও সিরাজগঞ্জ অংশে চার লেনের কাজ চলমান থাকায় গাড়ির চাপ বাড়লেই যানজটের সৃষ্টি হয়। সেই জট কখনো কখনো টাঙ্গাইল পর্যন্ত পৌঁছায়। আবার সেতুতে টোল দিয়ে গিয়েও যানজট লেগে যায়।

ঈদ সামনে রেখে মহাসড়কে নানা কারণে যানজটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর ঈদে ঢাকা টু বঙ্গবন্ধসেতু মহাসড়কে সৃষ্ট যানজটে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় দূরপাল্লার লাখ লাখ যাত্রীকে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে যানজটে ঘণ্টার পর ঘন্টা আটকে থাকে যানবাহন। মহাসড়কে গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটারে চার লেন সড়কের কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। ফলে ধরে নেওয়া যায় এবার ঈদে নির্বিঘ্নে যান চলাচল করতে পারবে। কিন্তু তারপরেও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার দুই লেন সড়কটুকু। চার লেনের সুবিধায় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহন এলেঙ্গা পর্যন্ত পৌঁছে আটকে যায় দুই লেনের মুখে। আর এখান থেকেই শুরু হয় যানজটের।

বঙ্গবন্ধু সেতু টোল প্লাজা সূত্র জানিয়েছে, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ হাজার যানবাহন সেতু পারাপার হয়। ইদের আগে ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার যানবাহন পারাপার হয়ে থাকে। স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক যানবাহন পারাপার হওয়ায় দুই লেনের সড়কে যানজট লেগে যায়। সিরাজগঞ্জ অংশে দুই লেনের সড়ক। এছাড়া সেখানে কয়েকটি সরু সেতু রয়েছে। এ কারণে পশ্চিম প্রান্তে যানজট লেগে সেতু অতিক্রম করে টাঙ্গাইল অংশ পর্যন্ত চলে আসে। এদিকে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ হাজার যানবাহন বঙ্গবন্ধুসেতু পারাপার হলেও ঈদের আগে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ থেকে ৩২ হাজারে। ফলে টোল দিতে গিয়েও যানজট লেগে যায়।

সরেজমিন মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, চার লেন সড়কের কাজ প্রায় শেষের দিকে। সড়কের দু’পাশের সার্ভিস লেন চালু আছে। যানবাহন দ্রুত গতিতে চলাচল করছে। মির্জাপুরের গোড়াই ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। বগুড়ার বাস চালক মো. কামাল হোসেন জানান, এলেঙ্গা থেকে ঢাকা দিকে ফোর লেন। অপর দিকে এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত দুই লেন। এ কারণে ফোর লেনের যানবাহন যখন দুই লেনে যাতায়াত করে তখনই যানজট সৃষ্টি হয়। ঈদের মধ্যে স্বাভাবিক তুলনার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি যানবাহন চলাচল করলে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হবে।

টাঙ্গাইল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) কাজী নুসরাত এদ্বীপ লুনা জানান, জয়দেবপুর হতে এলেঙ্গা পযর্ন্ত চারলেন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হলেও এলেঙ্গার পর থেকে এই ১৩ কিলোমিটার দুই লেনের রাস্তাই ভোগান্তির কারণ হতে পারে। তবে যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জেলা পুলিশ। ঈদে ঘরফেরা মানুষের ভোগান্তি লাঘবে মহাসড়কে যানবহনে থাকা রোজাদারদের ইফতারের ব্যবস্থা রেখেছে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ। এছাড়া দীর্ঘ সময় ভ্রমণে মহাসড়কে বৃদ্ধ, রোগী ও শিশুসহ সকলের জন্য প্রয়োজন অনুসারে মোবাইল টয়লেটের ব্যবস্থাও রয়েছে।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার জানান, ঢাকা টু টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গসহ ২৪টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। তবে ঈদ আসলেই যানজটের কবলে পড়তে হয়। এ বছর যানজট নিরসনে অন্য বছরের তুলনায় এবার ব্যতিক্রম কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের পাশাপাশি মহাসড়কে দুইশ এপিপিএনের সদস্য যানজট নিরসনে কাজ করবে। সব মিলিয়ে ইদের ছুটির সময় মহাসড়ক যানজট মুক্ত রাখতে ৮ শতাধিক পুলিশ কাজ করবে। তবে দুই লেনের ১৩ কিলোমিলো রাস্তায় যেন যানজট শুরু না হয় সেজন্য ভুঞাপুর থেকে এলেঙ্গা লিংক রোড পর্যন্ত ডাইভার্ড করে বিকল্প রাস্তার ব্যবহার করা হবে। রাস্তার দুপাশের দোকানে যেন গাড়ি অহরহ থামাতে না পারে সে ব্যাপারেও পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া আছে

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
jack ali ২৫ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০৩ পিএম says : 0
Shameless people they said that our country is better than Singapore and Canada.
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন