শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

সদকায়ে ফিতরের পরিমাণ ও কিছু কথা

মাওলানা মুহাম্মাদ ইয়াহইয়া | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৯ এএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২২

ইসলাম মানবতার ধর্ম। সহমর্মিতার ধর্ম। সাম্যবাদের ধর্ম। এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদুল ফিতর। মুসলমানদের অন্যতম প্রধান উৎসব। ধনী-গরিব সকলে যেন ঈদ উৎসবে সমানভাবে আনন্দ উপভোগ করতে পারে সেজন্য ইসলাম সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) সদকায়ে ফিতর নির্ধারণ করেছেন রোজাকে অনর্থক কথা ও অশ্লীল কাজ হতে পবিত্র করার এবং গরিবের মুখে খাবার দেওয়ার জন্য। (মেশকাত, আবু দাউদ)। ওয়াকি ইবনুল জাররাহরা বলেন, সিজদায়ে সাহু যেমন নামাজের ক্ষতিপূরণ, তেমনি সাদাকাতুল ফিতর রোজার ক্ষতিপূরণ।

সদাকায়ে ফিতর খাদ্য সামগ্রী দ্বারা দিতে হয়। এ সম্পর্কিত হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে মোট পাঁচ প্রকার খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়- যব, খেজুর, পনির, কিশমিশ ও গম। এ পাঁচ প্রকারের মধ্যে যব, খেজুর, পনির ও কিশমিশ দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক ‘সা’ দিতে হবে। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা ‘সা’ দিতে হবে। এটা হলো ওজনের দিক দিয়ে তফাত।

আর মূল্যের দিক থেকে তো পার্থক্য রয়েছেই। যেমন- (ক) আজওয়া (উন্নতমানের) খেজুরের মূল্যে ফিতরা আদায় করলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় তিন হাজার দুইশ’ ছাপ্পান্ন টাকা। (খ) মধ্যম ধরনের খেজুরের মূল্যে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ১৬৫০ টাকা। (গ) কিসমিসের বা এর বর্তমান বাজার মূল্যে ফিতরা আদায় করলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ১৪২০ টাকা। (ঘ) পনিরের বর্তমান বাজার মূল্যে ফিতরা আদায় করলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ২৩১০ টাকা। (ঙ) গম দিয়ে আদায় করলে একজনের সদকায়ে ফিতর দাঁড়ায় ৭৫ টাকা। (এসব মূল্য নিজ নিজ এলাকার বাজার দর অনুযায়ী প্রাক্কলিত। স্থান ও সময়ভেদে এসব পরিবর্তনযোগ্য। মূল্যটি মুখ্য নয়, বরং পরিমাপের সাথে মিলে যায় এমন পরিমাণ মূল্য যেন ফিতরায় দেয়া হয়।)
হাদিসে এ ৫টি দ্রব্যের যে কোনোটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেয়া হয়েছে যেন মুসলমানগণ নিজ নিজ সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী এর যেকোনো ১টি দ্বারা তা আদায় করতে পারে। এখন লক্ষণীয় বিষয় হলো, সকল শ্রেণির লোক যদি সবচেয়ে নিম্ন মূল্যমানের দ্রব্য দিয়েই নিয়মিত সদকা ফিতর আদায় করে তবে হাদিসে বর্ণিত অন্য চারটি দ্রব্যের হিসেবে ফিতরা আদায়ের ওপর আমল করবে কে? আসলে এ ক্ষেত্রে হওয়া উচিত ছিল এমন যে, যে ব্যক্তি উন্নতমানের আজওয়া খেজুরের হিসাবে সদকা ফিতর আদায় করার সামর্থ্য রাখে সে তা দিয়েই আদায় করবে। যার সাধ্য পনিরের হিসাবে দেয়ার সে তাই দেবে।

এর চেয়ে কম আয়ের লোকেরা খেজুর বা কিশমিশের হিসাব গ্রহণ করতে পারে। আর যার জন্য এগুলোর হিসাবে দেয়া কঠিন সে আদায় করবে গম দ্বারা। এটিই উত্তম নিয়ম। এ নিয়মই ছিল নবী, সাহাবা-তাবেইন ও তাবে তাবেইনের স্বর্ণযুগে। এ পর্যন্ত কোথাও দুর্বল সূত্রে একটি প্রমাণ মেলেনি যে, স্বর্ণযুগের কোনো সময়ে সব শ্রেণির সম্পদশালী সর্বনিম্ন মূল্যের দ্রব্য দ্বারা সদকা ফিতর আদায় করেছেন। এখানে এ সংক্রান্ত কিছু বরাত পেশ করা হচ্ছে।

হাদিস : নবী করিম (সা.) কে সর্বোত্তম দান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি ইরশাদ করেন- ‘দাতার নিকট যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি।’ -সহিহ বুখারী : ৩/১৮৮)।
সাহাবায়ে কেরামের আমল : (ক) হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘আমরা সদকা ফিতর আদায় করতাম এক ‘সা’ খাদ্য দ্বারা অথবা এক ‘সা’ যব অথবা এক ‘সা’ খেজুর কিংবা এক ‘সা’ পনির বা এক ‘সা’ কিশমিশ দ্বারা। আর এক ‘সা’-এর ওজন ছিল নবী করিম (সা.) এর ‘সা’ অনুযায়ী। (মুয়াত্তা মালেক পৃ.১২৪; আল ইসতিযকার : ৫৮৯, ৯/৩৪৮)। এ হাদিসে রাসূলের যুগে এবং সাহাবাদের আমলে সদকা ফিতর কোন কোন বস্তু দ্বারা আদায় করা হতো তার সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।

(খ) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. সারা জীবন খেজুর দ্বারাই সদকা ফিতর আদায় করেছেন। তিনি একবার মাত্র যব দ্বারা আদায় করেছেন। (আল ইসতিযকার : ৫৯০, ৯/৩৫৪)। ইবনে কুদামা (রা.) আবু মিজলাযের বর্ণনা উল্লেখ করে বলেন, এ বর্ণনা দ্বারা বোঝা যায় যে, সাহাবায়ে কেরাম অধিকাংশই যেহেতু খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করতেন তাই ইবনে ওমর (রা.) সাহাবাদের তরিকা অবলম্বন করতে সারা জীবন খেজুর দ্বারাই আদায় করেছেন। এ প্রসঙ্গে ইবনে ওমরের ভাষ্য হলো- ‘সাহাবিগণ যে পথে চলেছেন আমিও সে পথেই চলতে আগ্রহী।’

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
Anisul Haque Chowdhury ২৫ এপ্রিল, ২০২২, ৯:০০ এএম says : 0
রোজা ও ঈদের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো সদকাতুল ফিতর। হতদরিদ্র মানুষও যেন ঈদের আনন্দে শামিল হতে পারেন, তার জন্য আল্লাহ ফিতরা বা সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যা ঈদের নামাজের আগে প্রদান করতে হয়।
Total Reply(0)
Badal Sikdar ২৫ এপ্রিল, ২০২২, ৯:০১ এএম says : 0
যেহেতু ফিতরা একটি ইবাদত, তাই যাঁরা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নন, তাঁদেরও ফিতরা আদায় করা সুন্নত ও নফল।
Total Reply(0)
Yasin Khan ২৫ এপ্রিল, ২০২২, ৯:০১ এএম says : 0
বিভিন্ন দামের খাদ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যের খেজুর বা উন্নত মানের চাল অথবা তৎমূল্যে ফিতরা আদায় করা উত্তম। ধনীরা সর্বোচ্চ এবং সাধারণেরা মাঝামাঝি মূল্যে আদায় করাই শ্রেয়।
Total Reply(0)
Jashim Uddin ২৫ এপ্রিল, ২০২২, ৯:০১ এএম says : 0
ইনসাফ হলো, যাঁরা যে চালের ভাত খান বা যাঁরা যে খেজুর দ্বারা ইফতার করেন, তাঁরা সে সমমানের বা সমমূল্যে ফিতরা আদায় করবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তা-ই উত্তম, দাতার নিকট যা সর্বোৎকৃষ্ট এবং যার মূল্যমান সবচেয়ে বেশি’
Total Reply(0)
Ghum Kutum ২৫ এপ্রিল, ২০২২, ৯:০২ এএম says : 0
মাতাপিতা ও ঊর্ধ্বতন এবং ছেলেমেয়ে ও অধস্তন এবং যাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব রয়েছে (যেমন স্ত্রী ও পোষ্য), তাদের ওয়াজিব ফিতরা ও জাকাত প্রদান করা যায় না।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন