শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বুয়েট শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি ঢাবি শিক্ষকের

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের এক শিক্ষক ও সাবেক-বর্তমান দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তা ও ইভটিজিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিভাগের চেয়ারম্যান ও অনুষদের ডিনের নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. আখতারুজ্জামান সিনবাদ, ভাস্কর্য বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী পুলক বাড়ৈ এবং সাবেক শিক্ষার্থী শুভ বাড়ৈ-এর বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে চারুকলা অনুষদে বন্ধুদের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী বসে ছিলেন। এ সময় শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আখতারুজ্জামান সিনবাদ বুয়েটের ওই ছাত্রীকে দেখে ক্রমাগত শিস দিতে থাকেন। বুয়েটের ওই ছাত্রী ঢাবি শিক্ষকের দিকে তাকালে তিনি লম্পটদের মত অশ্লীল মুখভঙ্গি ও চোখটিপ দিতে থাকেন। তবে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে ঢাবি শিক্ষক বিষয়টি অস্বীকার করার চেষ্টা করেন।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, পরবর্তীতে ঢাবি শিক্ষক আখতারুজ্জামান সিনবাদ হুমকি-ধামকি দিয়ে কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেন ও ছাত্রীর সঙ্গে থাকা বন্ধু হলে থাকে কি না- সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাপূর্বক দমনমূলক আচরণ করেন ও তিনি যে শিক্ষক সেটা স্মরণ করিয়ে তার এহেন আচরণের বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এদিকে শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান, অনুষদের ডিনের নিকটে দেওয়া অভিযোগপত্রে বুয়েটের ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী, প্রত্যক্ষদর্শীসহ ১৩ জন শিক্ষার্থী সই করেছেন।

শিক্ষার্থীরা জানান, একজন শিক্ষকের নিকটে এ ধরনের আচরণ কখনই কাম্য নয়। যা শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের জন্য অপ্রীতিকর। তারা এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
এদিকে শোভাযাত্রার প্রস্তুতিকালে গত ১৩ এপ্রিল রাতে জয়নুল শিশুকলা নিকেতন কক্ষে একই অনুষদের প্রথমবর্ষের তিন নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে ঢাবি শিক্ষক আখতারুজ্জামান সিনবাদ বিকৃত ও অপ্রীতিকর আচরণ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ভাস্কর্য বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী পুলক বাড়ৈ ও সাবেক শিক্ষার্থী শুভ বাড়ৈও ওই শিক্ষার্থীদের যৌন হেনস্তা করেছেন বলে অভিযোগপত্রে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চেয়ারপার্সন সঞ্জয় চক্রবর্তী জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টা অনুষদ খতিয়ে দেখছে।
অভিযোগের বিষয়ে ঢাবির সাবেক-বর্তমান ওই দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে অভিযুক্ত শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আখতারুজ্জামান বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, ডিন অফিস থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছে। আমি আমার বক্তব্য রেডি করছি। বক্তব্য জমা দেওয়ার পর তদন্ত কমিটি সিদ্ধান্ত নিবে আমি দোষী নাকি না।

চারুকলা অনুষদের ডিন প্রফেসর নিসার হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আমরা এরকম একটা অভিযোগ পেয়েছি। এরপর ঘটনাটা কী ঘটেছে সেটি জানার জন্য আমরা একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেছি। যে কমিটিতে আমিও আছি। আমরা ইতোমধ্যে পৃথকভাবে অভিযোগকারীদের বক্তব্য নিয়েছি। শুধুই অভিযুক্ত শিক্ষক আখতারুজ্জামানের বক্তব্য এখনো নেওয়া সম্ভব হয়নি। আমরা ওনাকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য চিঠি ইস্যু করেছি। আগামী ৮ মে›র মধ্যে তাকে লিখিত উত্তর দিতে বলা হয়েছে। লিখিত বক্তব্য একবার দিলে আর উইথড্র করা যায় না। তাই ভেবেচিন্তে বক্তব্য দেয়ার জন্য ওই শিক্ষককে বেশি সময় দেয়া হয়েছে।
নিসার হোসেন বলেন, অভিযোগপত্রে শিক্ষক ছাড়াও আরও দুই শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রাক্তন শিক্ষার্থীর বিভাগের শিক্ষকের মাধ্যমে তাকে ডেকে আমরা তার বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করছি। আর রানিং যে শিক্ষার্থী সে বাড়ি চলে যাওয়ায় আজ জুমে তার বক্তব্য নেয়া হয়েছে।

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির সদস্য কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অনুষদে সাধারণত দুটি কমিটি আছে। একটি গ্রিবেঞ্জ কমিটি আরেকটি অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি। দুই কমিটি থেকে চারজনকে নিয়ে একটা কমিটি হয়েছে। এটাতে আমিও আছি। কমিটিতে অন্যদের মধ্যে আছেন অংকন ও চিত্রায়ণ বিভাগের প্রফেসর শিশির কুমার ভট্টাচার্য, ভাষ্কর্য বিভাগের প্রফেসর লালারুখ সেলিম এবং দুটি বিভাগের চেয়ারম্যান।

এদিকে অভিযোগ দেয়ার কিছুদিন পেরিয়ে গেলেও এই ঘটনার কোনো তদন্ত রিপোর্ট জমা না হওয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে একটি প্রতিবাদলিপি ছাপিয়েছেন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদলিপিতে দুই ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হয়েছে।
প্রথম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রার পরবর্তী মুহূর্তে চারুকলা অনুষদের অন্যান্য বন্ধু শিক্ষার্থীর সঙ্গেই অনুষদ প্রাঙ্গণে বসে ছিলেন ভুক্তভোগী বুয়েট শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।

এমন সময় শিক্ষক সিনবাদ বুয়েট শিক্ষার্থীকে দেখে ক্রমাগত শিস দিতে থাকেন। একপর্যায়ে নিপীড়িত শিক্ষার্থী তার দিকে সরাসরি তাকালে তিনি অশ্লীল মুখভঙ্গি ও চোখ দিয়ে আপত্তিকর ইঙ্গিত করতে থাকেন।
উপস্থিত শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তিনি (সিনবাদ) প্রথমে অস্বীকার করার চেষ্টা করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি হুমকি-ধমকি দিয়ে কৃতকর্মের কথা স্বীকার করেন এবং নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে থাকা বন্ধুকে আবাসিক হলে থাকে কি না সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাপূর্বক দমনমূলক আচরণ করেন এবং তিনি যে শিক্ষক সেটা স্মরণ করিয়ে তার এহেন আচরণের বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করেন।

আগের রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি পর্বে অনুষদের জয়নুল শিশুকলা নিকেতন কক্ষে একই শিক্ষক (সিনবাদ) চারুকলা অনুষদের তিন নারী শিক্ষার্থীর সঙ্গে বিকৃত ও অপ্রীতিকর আচরণ করেন। তারা তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। এ ঘটনায় সেই শিক্ষকের সঙ্গে অনুষদের আরও দুই শিক্ষার্থী জড়িত।

প্রতিবাদলিপিতে আরও বলা হয়, তার (আক্তারুজ্জামান সিনবাদ) অনিয়ন্ত্রিত ও বিকৃত যৌন হেনস্তায় শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ ও শঙ্কিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ কখনোই কাম্য নয় এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের জন্য অপ্রীতিকর।
সবশেষে প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এই ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি প্রদান করে দৃষ্টান্ত স্থাপনের দাবি জানাচ্ছেন চারুকলা অনুষদের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন