বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

টিকিটের জন্য হাহাকার

চট্টগ্রাম থেকে ঘরে ফেরা মানুষের দুর্ভোগ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০১ এএম

চট্টগ্রাম স্টেশনে গভীর রাত থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন আব্দুস সালাম। বেলা ১১টায় জানা গেল টিকিট শেষ। তার মতো আরো শত শত যাত্রী তখন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে। কাউন্টার থেকে বলা হয় টিকিট ফুরিয়ে গেছে। ছয় থেকে সাত ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে আব্দুস সালামসহ অনেক যাত্রীকে ফিরতে হয়েছে খালি হাতে।
ট্রেনের মতো দূরপাল্লার বাসেও টিকিট মিলছে না। কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে আগাম টিকিট বিক্রি শেষ। এখন বাস পাওয়া সাপেক্ষে নতুন করে টিকিট বিক্রি করা হবে। কোন কোন বাস সার্ভিসের টিকিট পাওয়া গেলেও ভাড়া গলাকাটা।

লক্কর-ঝক্কর বাসে যাত্রী পরিবহনের আয়োজন চলছে। নৌপথেও বেহাল অবস্থা। নেই পর্যাপ্ত লঞ্চ। এতে চট্টগ্রাম থেকে ঘরমুখো লাখো মানুষকে চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তার উপর রয়েছে সড়ক মহাসড়কে তীব্র যানজট।

পবিত্র ঈদ উল ফিতরে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রশাসনের তরফে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে কোন সুফল মিলছে না। পথে পথে দুর্ভোগ, বিড়ম্বনায় ঈদের আনন্দ যাত্রা ম্লান হয়ে যাচ্ছে।
প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে এবার বিপুল সংখ্যক মানুষ চট্টগ্রাম মহানগরী ছেড়ে যাচ্ছে। করোনালকডাউনের কারণে বিগত দ্ইু বছর অনেকে বাড়ি যেতে পারেননি। তারা এবার বাড়ি যাচ্ছেন। আবার ঈদের আগে পরে লম্বা ছুটি হওয়ায় ঘরমুখো মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সরকারি ছুটির সাথে মিলিয়ে এবার ইপিজেডসহ কলকারানায়ও দীর্ঘ ছুটি দেয়া হচ্ছে।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই মহানগরীর লোক সংখ্যা এখন প্রায় পৌনে এক কোটি। এর বিরাট অংশ চাকুরি, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কারণে এই মহানগরীতে বসবাস করেন। ঈদে তারা নিজেদের বাড়ি ঘরে যান। এবার শুরু থেকে ঘরমুখো মানুষের স্রোত দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে দূরপাল্লার যাত্রীদের সংখ্যা বেশি। ঈদের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। আগামীকাল বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবস। ওইদিন থেকে ঘরমুখো মানুষের ঢল নামবে।

ট্রেনের আগাম টিকিট পেতে প্রতিদিনই স্টেশনে মানুষের ভিড়। তবে গতকাল ভিড় ছিল সবচেয়ে বেশি। গতকাল বিক্রি করা হয়েছে ৩০ এপ্রিলের টিকিট। ওইদিনের টিকিট পেতে মানুষ রীতিমত হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অনেকে সেহেরির আগেই স্টেশনে এসে লাইনে বসে যান। তবে বেশিরভাগ যাত্রী টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। সকাল ৮টায় টিকিট বিক্রি শুরু হয়। ১১টায় শেষ হয়ে যায় টিকিট। ময়মনসিংহগামী বিজয় এক্সপ্রেস ও ঢাকাগামী তূর্ণার চাহিদা বেশি থাকায় কয়েক ঘণ্টায় এসব ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস, গোধূলী, চট্টলা, সিলেটগামী পাহাড়িকা ও উদয়ন এক্সপ্রেস এবং চাঁদপুরগামী স্পেশাল দুটিসহ সব ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে যায়।

চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন ১০টি আন্তঃনগর ট্রেন ছেড়ে যায়। এসব ট্রেনে মোট সাত হাজার সিট রয়েছে। কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে অর্ধেক তথা সাড়ে তিন হাজার টিকিট। বাকিটা অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া গতকাল চাঁদপুরগামী দুটি বিশেষ ট্রেনের এক হাজার ২৮ আসনের টিকিট বিক্রি হয়েছে।
স্টেশনের কর্মকর্তারা জানান, ৩০ এপ্রিলের টিকিটের চাহিদা বেশি থাকায় যাত্রীদের ভিড় ছিল বেশি। তবে সে অনুপাতে টিকিট না থাকায় অনেকে খালি হাতে ফিরে গেছেন। আজ বুধবারও স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় থাকবে। আজ দেওয়া হবে ১ মের টিকিট। ঘরমুখো যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটে দুই জোড়া বিশেষ ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে। ঈদের আগে ২৯ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত এসব ট্রেন চলাচল করবে। ঈদের পরেও ৫ থেকে ৮ মে পর্যন্ত এসব বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে।

চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার বাসের টিকিট শেষ হয়ে গেছে। চট্টগ্রাম থেকে বৃহত্তর বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, ফরিদপুরসহ দূরের যাত্রীদের জন্য বাসের সংখ্যা সীমিত। ঈদের সময় এসব রুটে যাত্রীর সংখ্যা প্রায় দশগুণ বাড়লেও সে তুলনায় বাসের সংখ্যা বাড়ানো যায় না। ফলে চরম পরিবহন সঙ্কট দেখা দেয়। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে তাই অনেক বাস সার্ভিস সড়কে লক্কর-ঝক্কর বাস নামিয়ে দেয়। আবার পরিবহন সঙ্কটের অজুহাতে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়াও আদায় করা হয়। এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা।

চট্টগ্রাম থেকে বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লা ও বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন রুটেও বাসের সঙ্কট রয়েছে। বাস সঙ্কটের অজুহাতে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট ও কক্সবাজার রুটে বিলাসবহুল বাসেও টিকিট নেই। বাসে টিকিট সঙ্কটের কারণে ভাড়ায় চালিত প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাসের ভাড়াও বেড়েছে। জ¦ালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এমনিতেই বাস ভাড়া বাড়তি। তার ওপর ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী চাপে কিছু কিছু বাস সার্ভিস গলাকাটা হারে ভাড়া আদায় করছে।

চট্টগ্রাম থেকে নৌপথেও যাত্রীদের জন্য নেই কোন সুসংবাদ। সন্দ্বীপ রুটে নিরাপদ নৌযানের দাবিতে চলছে আন্দোলন। সম্প্রতি সেখানে স্পিডবোট ডুবে চার শিশুর মৃত্যুর পর বেশ কয়েকটি সংগঠন আন্দোলনে নামে। ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রাম-হাতিয়া ও সন্দ্বীপ নৌরুটে যাত্রী পরিবহনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিআইডব্লিউটিসি। চট্টগ্রাম থেকে হাতিয়া রুটে প্রতিদিন দুটি জাহাজে এবং সন্দ্বীপ রুটেও ডাবলট্রিপে যাত্রী পরিবহন করা হবে। হাতিয়া রুটে শনিবার থেকে প্রতিদিন এমবি বারো আউলিয়া এবং এমভি তাজউদ্দিন যাত্রী পরিবহন করবে। এই দুটি জাহাজে ধারণ ক্ষমতা এক হাজার করে দ্ইু হাজার হলেও ঈদে আরো এক হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে, এই অঞ্চলের বেশিরভাগ সড়ক, মহাসড় ও আঞ্চলিক সড়কের অবস্থা এখন বেহাল। এসব বেহাল সড়কে তীব্র যানজটে আটকা পড়ছে যানবাহন। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে মহাসড়কে কোন যানবাহনে তল্লাশি, কিংবা রাস্তায় দাঁড় না করাতে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চাঁদাবাজি রোধেও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন