আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ প্রায় সময় জানতে চায় রোজা রাখা অবস্থায় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা যাবে কিনা? রোজা রাখা অবস্থায় টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা যাবে না। কারণ টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে রোজা মাকরুহ হয়ে যাবে। মাকরুহ আরবি শব্দ যার অর্থ হলো ক্রুটিপূর্ণ আমল। টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করার সময় টুথপেস্ট এর স্বাদ গৃহীত হয় বলে রোজা মাকরুহ হয়ে যাবে। তবে দিনের বেলায় কেউ চাইলে নবীর সুন্নত পালনের পাশাপাশি নিমের ডাল বা জয়তুনের ডাল দিয়ে দাঁত মেসওয়াক করতে পারবেন। ইফতারের পর যথারীতি টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত ব্রাশ করবেন। এছাড়া সেহেরীর পর আপনারা অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করবেন। আবার অনেকেই প্রশ্ন করেন রোজা রাখা অবস্থায় মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা যাবে কিনা? যাদের শুস্ক মুখ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এলকোহলযুক্ত মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা নিষেধ। আমরা জানি এলকোহল ইসলাম ধর্মে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মাউথ ওয়াশের একটি স্বাদ এবং গন্ধ আছে। তাই একান্ত জীবন রক্ষাকারী না হলে রোজা রাখা অবস্থায় মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করবেন না।
রোজা রাখা অবস্থায় দাঁত ও মুখের চিকিৎসা এবং শরীরের অন্যান্য চিকিৎসায় লোকাল এনসথেসিয়া গ্রহণ করা যাবে। এটি শরীরে ঔষধ হিসাবে গৃহীত হয়। তাই এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।
রোজা রাখা অবস্থায় চোখের ড্রপ ব্যবহার করা যাবে। কৃত্রিম চোখের পানি ব্যবহার করা যাবে। রোজা রেখে পায়ু পথে সাপোজিটরি ব্যবহার করা যাবে। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।
সাম্প্রতিক সময়ে বুকে ব্যথা বা হার্ট এ্যাটাক করা রোগীদের জন্য রোজা রাখা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। হার্টের রোগীরা রোজা রাখা অবস্থায় বুকে ব্যথা হলে প্রয়োজনে নাইট্রোগ্লিসারিন স্প্রে ব্যবহার করতে পারবেন। এতে রোজার বিন্দুমাত্র ক্ষতি হবে না।
রোজা রাখা অবস্থায় আপনার শ্বাস কষ্ট হলে আপনি ইনহেলার ব্যবহার করতে পারবেন। কারণ এটি ঔষধ। দাঁত ও মুখের ব্যথায় অথবা শরীরের যে কোনো ব্যথায় রোজা রাখা অবস্থায় আপনি চাইলে ব্যথানাশক ইনজেকশন ব্যবহার করতে পারবেন। কারণ এটি শরীরে ঔষধ হিসেবে গৃহীত হয়ে থাকে। তাই রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে রোজা রাখা অবস্থায় আপনি ভিটামিন এবং স্যালাইন জাতীয় ইনজেকশন গ্রহণ করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। কারণ ভিটামিন এবং স্যালাইন শরীরে খাদ্য হিসাবে গৃহীত হয়। বিশেষ করে বর্তমানে ডায়রিয়ার কারণে স্যালাইন ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হয়। এক্ষেত্রে রোগী সারাদিন কিছু না খেয়ে থাকলেও তার রোজা হবে না। কারণ স্যালাইন এর মাধ্যমে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাচ্ছে।
ডায়াবেটিস রোগীরা দিনের শেষ ভাগে সুগার মনিটর করবেন। যদি হাইপোগ্লাইসেমিয়ার মত কোনো লক্ষণ দেখা যায় তবে সেক্ষেত্রে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রোজা রাখা অবস্থায় বার বার সুগার মনিটর করার প্রয়োজন হলে রোজা ভেঙ্গে যাবে না। দাঁতের চিকিৎসা, রুট ক্যানেল চিকিৎসা এবং মুখের চিকিৎসায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। রোজা রেখে আপনি দাঁতের স্কেলিং করতে পারবেন। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। তবে স্কেলিং করার সময় যদি মেশিনের পানি অথবা রক্ত গলার অভ্যন্তরে চলে যায় তবে সেক্ষেত্রে আপনার রোজা ভেঙ্গে যাবে। কারণ স্কেলিং করার সময় পানি এবং রক্ত গলার অভ্যন্তরে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এক্ষেত্রে হাই সাকশন মেশিন ব্যবহার করা যেতে পারে। রোজারত অবস্থায় লোকাল এনেসথেসিয়া প্রদানের মাধ্যমে রুট ক্যানেল চিকিৎসা করা যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনো পানি বা ঔষধ গলার অভ্যন্তরে না যায়। শুস্ক মুখের রোগীদের সেহেরীর পর ঔষধ সেবন করতে হবে। হার্টের রোগীরা তৈলাক্ত এবং চর্বি সমৃদ্ধ খাবার মোটেই খাবেন না। এছাড়া ট্রান্স ফ্যাট এর কারণে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে। হার্টের রোগী এবং উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের ইফতার এবং সেহেরীর পর নিয়ম করে ঔষধ সেবন করতে হবে। সেহেরীর পর কোনো ঔষধ সেবন করতে যেন ভুল না হয়।
রোজা রেখে অয়েনমেন্ট এবং ক্রীম ব্যবহার করা যাবে। এতে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না। পায়ু পথে কোনো মলম ব্যবহার করার প্রয়োজন হলে অবশ্যই তা ব্যবহার করা যাবে। অসুখের কারণে যোনি পথে ঔষধ প্রয়োগের কারণে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।
ইফতারের সময় অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার গ্রহণ থেকে ডায়াবেটিস রোগীদের বিরত থাকতে হবে। যাদের হার্টের পাম্প করার ক্ষমতা কমে গেছে সেক্ষেত্রে রোগীর বুঝতে হবে রোগীর হার্ট আগের মত পাম্প করে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত পৌছাতে পারে না। আর যদি রক্ত ঠিকভাবে শরীরে বিভিন্ন অঙ্গে না পৌছে তাহলে সেই অঙ্গ কিভাবে অতিরিক্ত কাজ করবে? পাকস্থলির কথা ধরা যাক। যেহেতু রক্ত প্রবাহ আগের মত পৌছাতে পারে না তাই আপনি ইফতারের পর বা অন্য যে কোনো সময় অতিরিক্ত পরিমানে খাবার গ্রহণ করলে তা আপনার হার্টের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে। কারণ খাবার হজমের জন্য পাকস্থলি হার্টের কাছে রক্ত চায়। হার্ট তখন ক্ষমতার বাইরে যেয়ে রক্ত পাম্প করতে গেলে বিপত্তি ঘটে। এর ফলে আপনার হার্ট এ্যাটাক, হার্ট ফেইলিউর সহ বিভিন্ন ধরনের হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই হার্টের রোগীরা অল্প অল্প করে ইফতার এবং অন্যান্য খাবার খাবেন। আপনার ডাক্তারের নির্দেশনা অনুযায়ী খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। সেহেরীর সময় পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করবেন। সেহেরীর পর কোনো অবস্থাতেই কোমল পানীয়, চা, কফি, এনার্জি ড্রিংক পান করবেন না। এতে করে আপনার শরীরে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। দিনের বেলায় অতিরিক্ত পানি শরীর থেকে বের হয়ে যাবে। ফলে আপনি সারাদিন তৃষ্ণা অনুভব করবেন। রোজা রাখতে কষ্ট হবে। বরং সেহেরীর শেষ সময় পর্যন্ত একটু একটু করে পানি পান করার চেষ্টা করুন। কিডনির রোগীরা একটি কলা এবং একটু চিড়া পরিস্কার পানিতে ধুয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনার শরীর অনেক ভালো থাকবে। কিডনি রোগীদের মধ্যে যাদের কিডনিতে অক্সালেট জাতীয় পাথর পাওয়া গেছে তাদের বেগুনি খাওয়া নিষেধ। শুধু তাই নয় বেগুনের কোনো তরকারি তাদের খাওয়া উচিত নয়। এছাড়া যাদের বেগুনে এলার্জি রয়েছে তাদের বেগুন খাওয়া উচিত নয়।
ক্রনিক কিডনি রোগীদের মধ্যে যাদের অবস্থা খুব খারাপ তারা জীবন বিপন্ন করে রোজা রাখতে যাবেন না। ইসলাম একটি বিজ্ঞান সম্মত ধর্ম। কেউ রোজা রাখতে না পারলে মহান আল্লাহ বিকল্প ব্যবস্থা রেখে দিয়েছেন। তাই একদম জীবন বিপন্ন করে রোজা রাখার কোনো দরকার নাই। তবে যাদের ঔষধ খেয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তাদের অবশ্যই রোজা রাখতে হবে।
ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাবার খাবেন না। সামান্য একটু ইফতার করে নামাজ পড়তে যাবেন। ক্ষুধা থাকলে আবার সামান্য কিছু খেয়ে নিবেন। এখন যেহেতু গরম তাই ডাবের পানি, বিশুদ্ধ পানি, টক দই, ফল একটু একটু করে খাবেন। সহজপাচ্য এবং ফাইবার যুক্ত খাবার গ্রহণের চেষ্টা করবেন। সেহেরীতে ভালো কিছু না থাকলে নবীর সুন্নত পালন করে কিছু খেজুর এবং পানি দ্বারা রোজা রাখলে আল্লাহ তার মধ্যে বরকত দিয়ে দিবেন। নবীর আদর্শ মেনে চলুন। খাবার পর পাকস্থলির একটু অংশ খালি রাখুন। ভালো থাকবেন।
ডাঃ মোঃ ফারুক হোসেন
ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার
বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ dr.faruqu@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন