নীলফামারীর সৈয়দপুরে শ্রমিকরা ইরি-বোরো ধান কাটতে ছুটছেন অন্য জেলায়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে সাধারণত অলস সময় কাটান এ অঞ্চলের কৃষি শ্রমিকেরা। হাতে তেমন কাজ না থাকায় তারা কাজের জন্য পাড়ি দিচ্ছেন দক্ষিনাঞ্চলের জেলাগুলোতে। নীলফামারীসহ পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, দিনাজপুরের খানসামা ও চিরিরবন্দর এবং রংপুরের তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলার দিনমজুরেরা ভিড় করছেন রেলস্টেশনে। এখন প্রতিদিন সকালেই এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
গতকাল সকালে দেখা যায়, সৈয়দপুর রেল স্টেশন ও বাস টার্মিনালে শ্রমিকদের জটলা। স্টেশনে শ্রমিকরা সকালের চিলাহাটি-খুলনাগামী আন্তনগর ট্রেন রূপসা ও রকেট মেইল ধরার অপেক্ষায় বসে আছেন। যারা ট্রেনে যেতে পারেনি তারা বাসটার্মিনালে দরদাম করছেন গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য। তারা সবাই শ্রমিক। হাতে রয়েছে কাস্তে, বোঝা বাঁধার রশি ও প্রয়োজনীয় বস্ত্রসহ ব্যাগ।
এদিকে ট্রেনের টিকিট কাটার নতুন নিয়ম না জানার কারণে টিকিট না পেয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে অনেক শ্রমিককে। এর মধ্যে রয়েছেন তারাগঞ্জের আলমপুর ইউনিয়নের আলতাফ হোসেন ও তার দলবল। তারা জানান, টিকিট কাটতে আইডিকার্ড লাগে এটা জানতেন না। বিনা টিকিটে ট্রেনে উঠবেন না। তারা বলেন, মোবাইলে গৃহস্থকে জানিয়ে দিয়েছি, একদিন পর আমরা আসতেছি।
আবু বকর নামে এক শ্রমিক বলেন, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে মাঠে কাজ না থাকায় ধার দেনা করে চলতে হয় তাদের। এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য দিনে দিনে বাড়ে ঋণের বোঝা। ইরি-বোরো ধান পাকতে এখনো ২০-২৫ দিন বাকি। তাই আগাম জাতের ধান কাটতে দক্ষিণের উদ্দেশে যাচ্ছি।
কৃষি শ্রমিকের সংকট দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে পাঁচবিবি, জয়পুরহাট, আক্কেলপুর, তিলকপুর, সান্তাহার, আদমদীঘি, আত্রাই, নওগাঁ, নাটোর, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় উত্তরবঙ্গের এই শ্রমিকেরাই ভরসা। এই কৃষি শ্রমিকেরা প্রতিবছরই ধান কাটা-মাড়াইয়ের সময়টা ট্রেনে ও বাসে চেপে ওই এলাকায় যান।
সৈয়দপুর রেল স্টেশনে কথা হয় শ্রমিকের আরেক দলনেতা উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা জমুদ্দি মামুদ ও দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ডাঙ্গারহাটের কৃষি শ্রমিক হেলাল উদ্দিনের (৫০) সঙ্গে। তারা বলেন, গ্রামের মানুষ ভালো নেই। সেই সঙ্গে গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ এনজিও’র ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। তাই বাড়তি আয় করার জন্য আমরা সকলেই ধান কাটার জন্য বগুড়ার শান্তাহারে যাচ্ছি। ওই এলাকায় প্রতি বছর ধান কাটতে যাই। এজন্য এই এলাকার গৃহস্থদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ থাকে। ধান পাকলেই তারা ফোনে যোগাযোগ করেন।
সৈয়দপুর রেল স্টেশন মাস্টার শওকত আলী জানান, দক্ষিণাঞ্চলে যাওয়ার জন্য কৃষি শ্রমিকদের যাতায়াতের সহজ মাধ্যম রেলপথ। তবে সৈয়দপুর ও চিলাহাটি স্টেশনে আইডিকার্ড ছাড়া যাত্রীকে টিকিট দিতে পারবে না স্টেশন কর্তৃপক্ষ। অনেকে ট্রেনের টিকিট না পেয়ে দলগতভাবে ট্রাক-পিকআপ ভাড়া নিয়ে সড়কপথে কাছের জেলা ও উপজেলাগুলোতে চলে যাচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন