বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১, ১১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

জাকাত : শোষণমুক্ত সমাজ গড়ার হাতিয়ার

মো. সাইফুল মিয়া | প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ইসলাম একটি পূনাঙ্গ ও প্রগতিশীল জীবনব্যবস্থা। ইসলাম সর্বকালে জন্য কল্যাণকর ও আধুনিক জীবনব্যবস্থাও বটে। আমাদের জীবনের সাথে জড়িত সকল দিক সর্ম্পকে ইসলামের নির্দেশনা আছে। ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম যাকাত। ইসলামি জীবনব্যবস্থায় নামাজের মতো যাকাতের গুরুত্বও অপরিসীম। মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের যেসব স্থানেই নামাজ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে, সেসব স্থানে যাকাত প্রদানের কথাও বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমার সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ প্রদান করো। (সূরা মুজাম্মিল : ২৬) এছাড়া পবিত্র কুরআনের বহু জায়গায় নামাজ কায়েমের পাশাপাশি যাকাত প্রদানের হুকুম করা হয়েছে। যাকাত একটি আরবি শব্দ যার আভিধানিক অর্থ হলো বৃদ্বি পাওয়া, পবিত্র করা, পরিশুদ্ধিকরণ ইত্যাদি। ইসলামি শরিয়তের ভাষ্য মতে, কোনো মুসলিম নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে প্রতি বছর তার সম্পদের শতকরা ২.৫০ হারে নিদিষ্ট খাতে ব্যয় করাকে যাকাত বলে।
যে পরিমাণ সম্পদের উপর যাকাত ফরজ হয়, তাকে নিসাব বলে। আর যে এ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়, তাকে সাহেবে নিসাব বলে। ইসলামিক ফাউণ্ডেশন বাংলাদেশের হিসাব অনুসারে, নিসাবের পরিমাণ হচ্ছে ৭.৫ তোলা স্বর্ণ কিংবা ৫২.৫ রৌপ্য বা সমপরিমাণ অর্থ। আর অবশ্যই নিসাব পরিমাণ অর্থের উপর পূর্ণ এক বছর অভিবাহিত হলে যাকাত দিতে হয়। নিসাব পরিমাণ অর্থ এক বছর অভিবাহিত হওয়ার আগে যাকাত ফরজ হয় না। যাকাত সম্পদকে পবিত্র করে, মানুষের পবিত্র ও উন্নত দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে এবং মিত্যব্যয়ী হতে শেখায়। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, (হে রাসূল) আপনি তাদের ধন-সম্পদ থেকে যাকাত গ্রহণ করুন আর এর মাধ্যমে আপনি তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করবেন। (সূরা তাওবা: ১০৩)। যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা যে সুদ দিয়ে থাক, যা মানুষের সাথে মিশে তা বেড়ে যায়, আল্লাহর কাছে তা মোটেই বাড়ে না। কিন্তু তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য যাকাত দিয়ে থাক, তারাই সফলকাম। ( সূরা রূম-৩০:৩৯)
বেকারত্ব হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় সমস্যা। সাধারণত বেকার বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল যুবকেরা সন্ত্রাস ও মাদকাসক্তির মতো ঘৃণিত কাজে নিজেকে জড়িয়ে নেয়। যার ফলে দেশে অস্থিতিশীলতা, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা ধনী গরীবের মাঝে আর্থিক সমন্বয়ের জন্য যাকাতের বিধান দিয়েছেন। যাকাত জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, বেকারত্ব হ্রাস করে এবং দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে সচল রাখে। যাকাত সমাজ থেকে অস্থিতিশীলতা ও বিশৃঙ্খলা দূর করে,শান্তি প্রতিষ্ঠা করে। যাকাত মানে সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়া আর রমজান মাসে প্রতি ইবাদতের সওয়াব আল্লাহ তায়ালা বহুগুণ বৃদ্ধি করে দেন। তাই যাকাত প্রদানের সর্বোত্তম সময় রমজান মাস। অনেকে মনে করতে পারে, যাকাত হচ্ছে গরীরদের প্রতি ধনীদের দয়া। এ ধারণাটি সম্পূর্ণ ভূল, যাকাত হচ্ছে ধনীদের সম্পদের উপর গরীবদের অধিকার। আবার অনেকে মনে করতে পারে, যাকাত ধনীদের উপর আল্লাহ তায়ালা প্রদত্ত কোনো প্রকার ট্যাক্স বা জরিমানা। যাকাত কোনো ট্যাক্স বা জরিমানা নয়, যাকাত সম্পদশালী উপর আল্লাহ প্রদত্ত নির্ধারিত দ্বায়িত্ব।
যারা যাকাতের ব্যাপারে কার্পণ্য করে, তাদের ব্যাপারে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ আছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,”যারা যাকাত আদায় করে না, তারাই আখিরাত অস্বীকার করে।” (সূরা হামীম আস সাজদাহ: ৪১) হযরত আবু হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ যাকে ধন-সম্পদ দিয়েছেন কিন্তু যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে একটি ন্যাড়া সাপে পরিণত করা হবে। তার থাকবে দুটি কালো দাগ। এই সাপে সেই ব্যক্তির গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে। অতঃপর সাপ উক্ত ব্যক্তির গলায় ঝুলে তার দুগালে কামড়াতে থাকবে এবং বলবে আমি-ই তোমার সেই সঞ্চিত সম্পদ যার যাকাত তুমি দুনিয়াতে দিতে না। অতঃপর রাসূলল্লাহ (সা.) সূরা আল ইমরানের ১৮০ নং আয়াত তেলাওয়াত করলেন।” (বুখারি, বাবু ইসমি মানিয়িয যাকাকি,১৩১৫)। এবার চিন্তা করুন, যাকাত না দেওয়ার শাস্তি কত ভয়াবহ হবে। ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা) এর খেলাফত আমলে কিছু মুনাফিক যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল। তখন হয়রত আবু বকর (রা) বলেছিল, আল্লাহ শপথ! যারা নামাজ ও যাকাতের মধ্যে পার্থক সৃষ্টি করবে আমি অব্যশই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব। কেননা যাকাত হচ্ছে মালের হক। আল্লাহ শপথ! রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সময়ে যাকাত দিত এমন একটি উটের বাচ্চাও যদি আমার খেলাফত আমলে দেওয়া বন্ধ করে দেয়, তবে অবশ্যই আমি উহা দেয়া বন্ধ করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব। তাহলে চিন্তা করুন, যাকাত ইসলামে কতটা গুরুত্বপূর্ণ! তাই একজন মুমিনের কখনো যাকাত প্রদানের ব্যাপারে কার্পণ্য করা উচিত নয়। সর্বোপরি, মানুষের আত্মিক প্রশান্তি, নৈতিক উন্নতি, সম্পদের পবিত্রতা ও পরিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে আমাদের নিয়মিত যাকাত আদায় করা উচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন