শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

রাজধানীতে ফিরছেন মানুষ

সরগরম হচ্ছে ফাঁকা ঢাকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০২২, ১২:০৩ এএম

স্বস্তির ঈদযাত্রার পর প্রিয়জনের সঙ্গে আনন্দের সময় কাটিয়ে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের ছুটির পর অফিস-আদালত খুলে যাওয়ায় রাজধানীতে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় নিশ্চিন্তে পরিবার নিয়ে গ্রামে ঈদ কাটিয়ে হাসিমুখে মানুষ কর্মস্থলে ফিরছেন। ফাঁকা ঢাকা ফের সরগরম হতে শুরু করেছে। সরকারী সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় রেল, সড়ক ও নৌপথে মানুষের নিরাপদ যাত্রায় ছিল না কোন ভোগান্তি। পথের ক্লান্তি না থাকায় মানুষ যতটুকু সময় পেয়েছে প্রিয়জনের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। সত্যিকার অর্থেই এবার খুশির ঈদ এসেছিল মানুষের জীবনে। ছুটি কাটিয়ে মানুষ এখন ফিরছে জীবন-জীবিকার উদ্দেশ্যে। নির্বিঘ্নে ঈদযাত্রার পর এবার তারা ফিরছে রেল, সড়ক ও নৌপথে। বড় ছুটি মেলাতে যেভাবে মানুষ আস্তে ঢাকা ছেড়েছিল ঠিক একইভাবে প্রথম কার্যদিবসে কাজে যোগও দিয়েছেন। তবে কেউ কেউ নতুন করে ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন ঈদের পরে। ইতোমধ্যে কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এবং বাসস্ট্যান্ড, বিমানের অভ্যন্তরীণ রুটের টার্মিনালেও ঢাকামুখো মানুষের ভিড় দেখা গেছে। ঢাকামুখো মানুষের ভিড়ে আস্তে আস্তে চিরচেনা রাজধানী তার পুরনো চেহারায় ফিরছে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট এবং গাবতলী বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা গেছে, মঙ্গলবার ঈদ-উল-ফিতর পালনের পর বিকেল থেকেই যাত্রীতে সরগরম ছিল। কেউবা ঈদের পর বাড়ি যাচ্ছেন আবার কেউবা ঈদ শেষে ভোগান্তি এড়িয়ে বৃহস্পতিবারের অফিস করতে ঢাকায় এসেছেন। যাত্রীদের অনেকেই একাই চলে এসেছেন কাজে যোগ দিতে। পরিবার-পরিজনদের তারা পরবর্তীতে ভিড় কমলে ঢাকায় আনবেন।

কমলাপুর রেলস্টেশনে দেখা গেছে, ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে রাজধানীতে ফিরছেন হাজারও মানুষ। প্রতিটি ট্রেনই শতভাগ যাত্রী নিয়ে কমলাপুর পৌঁছেছে। বুধবার দুপুর থেকেই রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন অনেকেই। বুধবারই আন্তঃনগর ট্রেনগুলো প্রায় শতভাগ যাত্রী নিয়ে ঢাকা ফিরে এসেছে। কোন কোন ট্রেনে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনও করতে দেখা গেছে। অন্যদিকে যারা বিভিন্ন কারণে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যেতে পারেননি, তারা ঈদের পরে বুধবার ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। তারা বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়ে বাড়ি গেছেন। ঘরমুখো মানুষকে বাড়ি ফেরাতে ঈদ স্পেশাল ট্রেনগুলো ঈদের পরও যাতায়াত করছে। এছাড়া মানুষকে ঢাকায় ফেরাতে সব ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটিও বন্ধ থাকছে আরও এক সপ্তাহ।

বনলতা এক্সপ্রেসে রাজশাহী থেকে ঢাকায় ফিরেছেন মো. মাসুদ মিয়া। তিনি জানান, শনিবার থেকেই অফিসে যোগ দেবেন তিনি। এ কারণে অফিস শুরুর একদিন আগেই চলে এসেছেন যাতে পরে যাতায়াতে কোন সমস্যা না হয়। দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মে কথা হয় সিলেটগামী জয়ন্তিকা এক্সপ্রেসের যাত্রী কোরবান আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার ঈদ ঢাকাতেই করেছি। সে সময়ে বিভিন্ন কারণে যেতে পারিনি। তাই ঈদের পরে যাচ্ছি। আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে মিলিত হব অনেকদিন পর। নাদিম মাহমুদ নামের এক যাত্রী বলেন, ঈদের মধ্যে কোথাও যাওয়া হয়নি, তাই পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে যাচ্ছি। সিলেটের চা বাগানসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যাব।

সড়কপথেও যাত্রীরা ঢাকা আসছেন : ট্রেনের মতো সড়কপথেও ঢাকামুখী মানুষের চাপ বেড়েছে। দীর্ঘ ছুটির পর শুক্রবার বিকেলে প্রচুর মানুষ ঢাকায় ফিরেছেন শুরু করেছে। শনিবার ঢাকামুখী মানুষের চাপ বাড়বে এমন আশঙ্কায় অনেকেই আগাম ঢাকা আসছেন। রাজধানীর টিটিপাড়া, সায়েদাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে এমটানটাই দেখা গেছে। গতকাল সকালেও ঢাকাতে পৌঁছা সব বাসই ছিল যাত্রীতে পরিপূর্ণ। দূরপাল্লার বাসের সঙ্গে অনেকে লোকাল বাস ভাড়া করেও রাজধানীতে ফিরছেন। আবার কেউবা ফিরছেন মোটরসাইকেলে। ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে সব মহাসড়কেই আগের তুলনায় যান চলাচল বেড়েছে। তবে কোথাও তীব্র যানজট নেই। বিশেষ করে আশঙ্কার ঢাকা-টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের নলকা ব্রিজের কাছে যানজট ছিল না। তবে গাড়ি স্বাভাবিকের তুলনায় কম গতিতে চলেছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমে গাড়ির কিছুটা ধীরগতি ছিল। কিন্তু তা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে ঢাকামুখী ফেরিঘাটগুলোতে যাত্রীবাহী বাস এবং সাধারণ যাত্রীর চাপ বেশি ছিল। বিশেষ করে দৌলতদিয়া, পাটুরিয়া, শিমুলিয়া ও বাংলাবাজারে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় বেশি। আগামী দুই-তিনদিনেও চাপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে নৌপথের যাত্রীরা : গতকাল রাজধানীর সদরঘাট নৌ টার্মিনালে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে ফিরতি মানুষের। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে নৌপথে ঢাকা ফিরতে শুরু করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের কর্মজীবী মানুষ। সরেজমিনে সদরঘাট এলাকায় দেখা যায়, সকাল থেকেই বরিশাল, পটুয়াখালী, চাঁদপুরসহ সব নৌরুটের লঞ্চ একে একে যাত্রী নিয়ে ঘাটে ভিড়ছে। কালবৈশাখী নিয়ে আতঙ্ক থাকলেও তেমন পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় নিরাপদে ফিরতে পেরে আনন্দিত যাত্রীরা। তবে সড়কপথে এবার কম দুর্ভোগ হওয়ায় অন্যান্য বছরের ঈদের সময়ের তুলনায় যাত্রী কম বলে জানিয়েছেন লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর উত্তরা থেকে এসেছেন চাঁদপুরগামী ফয়েজুর রহমান, তিনি বলেন, দোকানে কাজ করি, মালিক ছুটি দেয়নি, তাই ঈদের দুই দিন পর বাড়ি যাচ্ছি। প্রতি ঈদেই এমন সময় যাওয়া হয়, এসময় যাত্রীর চাপ কম থাকে, সুন্দরভাবে যাওয়া যায়।

বাংলাবাজারে মানুষের চাপ বাড়ছে : গতকাল সকাল থেকে মাদারীপুরের বাংলাবাজার লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিঘাটে যাত্রী ও গাড়ির অতিরিক্ত চাপ দেখা গেছে। অপরদিকে, ঈদের আগে বাড়ি ফিরতে না পারা অনেক যাত্রী ফিরছেন বাড়িতে। এতে বাংলাবাজার ঘাটে উভয়মুখী যাত্রীদের চাপ রয়েছে। বাংলাবাজার ফেরিঘাটে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, মাহিন্দ্র, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, ইজিবাইক ও মোটরসাইকেলে বাংলাবাজার ঘাটে আসছেন যাত্রীরা। শিমুলিয়া ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ফেরি ও লঞ্চে গাদাগাদি করে পদ্মা পার হচ্ছেন তারা। বাংলাবাজার লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিঘাটে যাত্রী ও গাড়ির অতিরিক্ত চাপ দেখা গেছে।

ঘাট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ৮৭টি লঞ্চ চলাচল করছে। যাত্রীদের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে লঞ্চের পাশাপাশি ফেরি কুমিল্লা, কুঞ্জলতা, ক্যামেলিয়া, মিনি রো রো সুফিয়া কামাল, বেগম রোকেয়া ও রো রো ফেরি এনায়েতপুরী চলাচল করছে। দুটি ডাম্প ফেরিসহ চারটি শুধু দিনেরবেলা চলাচল করছে।

চাপ বাড়ছে দৌলতদিয়া ঘাটে : রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীদের ঢল নেমেছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে মানুষের চাপ বেশি থাকলেও গতকাল তা চরম আকার ধারণ করেছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ঈদের আগে থেকেই ২১টি লঞ্চ ও ২১টি ফেরিতে চলছে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার। বর্তমানে লঞ্চ ও ফেরিতে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ঢাকায় ফিরছেন মানুষ। ঈদ যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে এ নৌরুটে ১১টি রো রো ফেরি, সাতটি ইউটিলিটি ফেরি, দুটি ড্রাম ফেরি, একটি ছোট ফেরিসহ মোট ২১টি ফেরি চলাচল করছে। পাশাপাশি যাত্রী পারাপারে ২১টি লঞ্চ চলছে। তবে আগামীকাল ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা ঘাট সংশ্লিষ্টদের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন