শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ভোগান্তি-স্বস্তির মিশেলে রাজধানীতে ফেরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

ভোগান্তি ও স্বস্তির মিশেলে বাসে, লঞ্চে ও ট্রেনে ঢাকায় ফিরছেন কর্মজীবী মানুষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আজ রোববার থেকে পুরোদমে অফিস-আদালত চালু হবে, আর আগামীকাল সোমবার থেকে খুলবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও। সেকারণে গতকাল শনিবার ট্রেন-লঞ্চে যাত্রীর কিছুটা চাপ রয়েছে। তারপরও অন্যান্য বছরের তুলনায় যাত্রা স্বস্তির হয়েছে। তবে কিছু কিছু ট্রেন বিলম্বে ঢাকায় পৌঁছা এবং কিছু বাসে ও লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ারও অভিযোগ করেছেন অনেকে।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে প্রায় এক কোটি মানুষ ঢাকা ছেড়েছিল। তাদের মধ্যে ২০ লাখ মানুষ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনে রাজধানীতে ফিরে আসার তথ্য নিশ্চিত করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। গতকাল মোবাইল অপারেটরদের বরাত দিয়ে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মোস্তাফা জব্বার জানান, ঈদের ছুটি শেষে গত ৫ মে ঢাকায় ফিরেছেন ৬ লাখ ৩২ হাজার ৪৮৫ জন মোবাইল সিম ব্যবহারকারী। আর শুক্রবার এসেছেন ১৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬৮০ জন। সব মিলিয়ে গত দুই দিনে ২০ লাখ ২৯ হাজার ১৬৫ জন সিম ব্যবহারকারী দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা এসেছেন। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী জানান, এ হিসাব সিম ব্যবহারকারীদের। তাদের অনেকের কাছে একাধিক সিম থাকে। আবার অনেক পরিবার ঢাকা ছেড়েছে, যাদের শিশু বা কিশোরদের কাছে মোবাইল নেই।
সরেজমিনে গতকাল ভোরে দেখা যায়, রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল, টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর একটির পর একটি বাস এসে থামছে। আর যাত্রীরা নেমে যাচ্ছেন। একইরকম চিত্র কমলাপুর, এয়ারপোর্ট রেল স্টেশন এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের। পরিবার–পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন শেষে তারা কর্মস্থলে যোগ দিতে ঢাকায় ফিরছেন। তবে ঈদের আগে বাড়িতে ফিরতে না পারা অনেক ঘরমুখীও যাত্রীকেও রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে। রাজধানীতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তা ফাঁকা দেখা গেছে। পল্টন, মৎস্য ভবন, শাহবাগ, কাওরান বাজার, বাড্ডা, মালিবাগ, সায়েন্সল্যাব এলাকায় যানবাহন চলছে একেবারেই কম। এদিন সড়কে ব্যক্তিগত গাড়িও কম দেখা গেছে। তবে রাজধানীর প্রবেশ পথগুলো ও বাস টার্মিনাল এলাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহন বাড়তে দেখা গেছে। গুলিস্তান, মহাখালী, সায়েদাবাদ টার্মিনালে কিছুটা যানজট চোখে পড়েছে। বিকেলের দিকে রামপুরা-বাড্ডা রুটেও বেড়েছে যানবাহন।
বগুড়া থেকে বাসে ঢাকায় আসা যাত্রী লাভলু বলেন, ঈদের ছুটির সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়েছিলাম, আর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি; তাই সবমিলিয়ে এবার ঈদে লম্বা ছুটি পেয়েছিলাম। এর ফলে গ্রামের বাড়িতে বেশি বেড়াতেও পেরেছি। তবে ৯ মে সন্তানদের স্কুল খোলায় এবং রোববার থেকে আমার অফিস শুরু হওয়ায় একদিন আগেই ঢাকায় এসেছি। বাসায় কিছু কাজ আছে, সেগুলো এই একদিনে করবো। রাস্তায় কিছুটা যানজট থাকলেও ঢাকায় আসতে খুব একটা সমস্যা হয়নি বলেও জানান তিনি।
নাবিল পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, ঈদ ছাড়া ঝালকাঠি থেকে ঢাকার সাধারণ ভাড়ার চেয়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি নিয়েছে। নাসিমা নামে এক নারী অভিযোগ করে বলেন, স্বাভাবিক সময় যাত্রীদের টেনে টেনে বাসে তোলে, তখন টিকিটের দামও কম থাকে। এখন দেখি বাস ভাড়া বেশি। এটা কেন হয়? একই গাড়ি, একই পথ, একই যাত্রী; তাহলে ভাড়া বেড়ে যায় কীভাবে?
তবে বাস চালকরা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রাসেল নামে সাকুরা পরিবহনের এক বাসচালক বলেন, সাধারণ সময় নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম নেওয়া হয়। আসলে সেটা নির্ধারিত ভাড়া না। ঈদের সময় সরকার নির্ধারিত ভাড়াই নেওয়া হয়েছে। তাই যাত্রীরা ভাবছে বেশি নেওয়া হয়েছে।
এদিকে রাজধানীর সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সকাল থেকেই ভিড় দেখা গেছে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ফেরা যাত্রীদের। তারা বলছেন, লঞ্চে বেশ ভিড় থাকলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটা স্বস্তিতেই নগরে ফিরতে পারছেন। এদিকে বাসের মতো কিছু কিছু লঞ্চেও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন অনেক যাত্রী।
এদিকে সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসা ট্রেনগুলোতেও যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে লঞ্চ-বাসের তুলনায় এবার ট্রেনের যাত্রা নিয়েও সন্তুষ্ট যাত্রীরা। টাঙ্গাইল থেকে পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফেরা যাত্রী জাকির হোসেন বলেন, ভিড় ছিল। আসলে ঈদ উপলক্ষে এটুকু ভিড়তো থাকেই। তবে এবার ট্রনে বাড়ি আসা যাওয়ায় কোনও সমস্যা হয় নাই। যারা টিকেট পায়নি তারা হয়তো দাঁড়িয়ে এসেছেন। সবারই তো আসার তাড়া আছে।
তবে কিছু কিছু ট্রেন বিলম্বে ঢাকায় ঢুকেছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। পঞ্চগড় থেকে একতা একপ্রেসে করে আসা চাকরিজীবী যাত্রী গোলাম রাব্বী বলেন, ট্রেন লেট ছিল। ঢাকায় আসতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লেগে গেছে। আর অসম্ভব রকমের যাত্রীর চাপ ছিল। টয়লেটের গেটের সামনে পর্যন্ত লোক বসে ছিল। টিকিট পেতেও অনেক সমস্যা হয়েছে।
কমলাপুর রেল স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার মো. মাসুদ সারওয়ার বলেন, ঈদের ছুটি শেষে অনেকে ঢাকায় ফিরছেন। রোববার থেকে অফিস আদালত পুরোদমে চালু হবে। এজন্য আজ একটু চাপ থাকবে স্বাভাবিক। তবে আমরা বাড়তি যাত্রীর কথা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন