বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিদেশিদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করবেন না

দেশের শ্রমিক নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী মে দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

দেশের শ্রমিক নেতাদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশিদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি না করে আপনাদের যদি সমস্যা থাকে আমার কাছে আসবেন। আমি শুনব। মালিকদের কাছ থেকে যদি কিছু আদায় করতে হয়, আমি আদায় করে দেবো, আমি পারব। এ কথা আমি বলতে পারি। বিদেশীদের কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করবেন না। গতকাল রোববার মহান মে দিবস উপলক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।

শেখ হাসিনা বলেন, শ্রমিক-মালিকের মধ্যে যদি সৌহাদ্যপূর্ণ সম্পর্ক না থাকে তাহলে উন্নয়ন সম্ভব হয় না। আমরা আমাদের দেশের মানুষের কথা ভাবী, মানুষের কথা চিন্তা করি এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করি।
শিশুশ্রম বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। এ বিষয়ে তাঁতের শাড়ি বানানোর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কিছু কিছু ট্রাডিশনাল কাজ থাকে। সেগুলো যদি ছোটবেলা থেকে রপ্ত না করে, তাহলে তাদের যে পৈতিৃক কাজ বা ব্যবসা; সেগুলো চালু থাকবে না। কারণ এটা হাতে কলমের শিক্ষা। কিন্তু সেটা ঝুঁকিপূর্ণ না। ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজে কোনো শিশুকে ব্যবহার করা যাবে না। সেটা আমরা বন্ধ করেছি। কিন্তু ট্রাডিশনাল ট্রেনিংগুলো বাবা-মায়ের সঙ্গে বসে তারা করতে পারে।
শ্রমিক-মালিক সকলকে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শ্রমিকদের জন্য এত কাজ করেছি, তারপরও দেখি আমাদের দেশে কিছু শ্রমিক নেতারা আছেন, তারা কোন বিদেশি বা সাদা চামড়া দেখলেই তাদের কাছে নালিশ করতে খুব পছন্দ করেন। আমি জানি না এই মানসিক দৈন্যতাটা কেন বা এর সঙ্গে কি অন্য কোনো স্বার্থ জড়িত আছে? কোনো দেনা-পাওনার ব্যবস্থা আছে? সেটা আমি জানি না! তিনি বলেন, তবে আমাদের দেশে কোনো সমস্যা হলে অন্তত আওয়ামী লীগ সরকার যতক্ষণ ক্ষমতায় আছে, আমি যতক্ষণ ক্ষমতায় আছি, অন্তত এই নিশ্চয়তা দিতে পারি যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে পারি আমরা নিজেরাই। আমি এটা বিশ্বাস করি-কোন সমস্যা হলে আমাদের দেশের মালিক এবং শ্রমিকরা একসঙ্গে বসে সেটা সমাধান করতে পারেন। কাজেই কেন নিজের দেশের বিরুদ্ধে অন্যের কাছে বলতে বা কাঁদতে যাব। আমরাতো এটা চাই না। কেননা, বাংলাদেশ তার আত্মমর্যাদা নিয়েই চলবে।
শ্রমিকদের কয়েক দফায় মজুরি বৃদ্ধি এবং মালিক-শ্রমিক কল্যাণে গৃহীত তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত শ্রমিক ও তাঁদের সন্তানদের উচ্চশিক্ষা, কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনাজনিত কারণে স্থায়ীভাবে অক্ষম হলে অথবা মৃত্যুবরণ করলে এবং জরুরি ও দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদানে ‘বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল’ গঠন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিলে অনেক মালিকের টাকা না দেওয়াকে দুঃখজনক বলেও উল্লেখ করেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, মালিকদের যেটা এখানে নির্দিষ্ট রয়েছে তারা তা এখানে জমা দেবেন। কিন্তু অনেকে তা দেন না। এটা খুব দুঃখজনক। আমি মনে করি, এটা যথাযথভাবে দেওয়া উচিত। একজন যখন বিপদে পড়ে তখন তার পাশে দাঁড়াতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার আদর্শই তার সরকারের আদর্শ এবং এই আদর্শ নিয়েই তারা কাজ করে যাচ্ছেন এবং জাতির পিতার স্বপ্নের সেই সোনার বাংলাদেশও একদিন ইনশাল্লাহ গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। আজকে আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৯০ ভাগ আমরা নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছে পদ্মাসেতু। আমরা নিজেদের অর্থায়নে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ সরকারের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করেছি। যদি এটা করতে পারি, তাহলে বাংলাদেশ কেন পারবে না?
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুল হক এবং বাংলাদেশে আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পটিয়ানেন বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। জাতীয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে এবং বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি আর্দাশির কবির মালিক পক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এহছানে এলাহী স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ডের ওপর একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ১০ শ্রমিক পরিবারের মধ্যে শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তার চেকও বিতরণ করেন। ##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন