ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন অত্যাসন্ন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সর্বত্রই ক্ষমতাসীনদের মিথ্যার বেসাতি। মিথ্যার বাড়াবাড়ি কখনোই কোন সুসংহত বিজয় আনতে পারে না। এদের জারক-রস ফুরিয়ে এসেছে। কোন চক্রান্ত দিয়ে সংগ্রামী জনগণকে নতি স্বীকার করানো যাবে না। এই সরকারের পতন অত্যাসন্ন। এই সরকারের পতনের মাধ্যমেই বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের জন্য একটি নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ স্থান হিসেবে গড়ে তোলা যাবে। গতকাল সোমবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটি গোষ্ঠী সরকার উৎখাত করতে চায়, আমাদের অপরাধটা কী? কোথায় ব্যর্থ হয়েছি? অনেকে বিদেশে দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করে, বিদেশ থেকে যেন তাদের ক্ষমতায় বসাবে। জনগণকে ধন্যবাদ-তারা বারবার ভোট দিয়েছে, টানা ৩ বার ক্ষমতায় রেখেছে। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে মনে হবে তিনি যেন ভুতের সঙ্গে কথা বলেছেন। দেশের মানুষ যে তাঁর এ কথা শুনে চাপাহাসি হাসবে তা তিনি ভাল করেই জানেন। কেন যে নোবেল কমিটি প্রধানমন্ত্রীর নাম নোবেল কমিটিতে তুলছে না তা বুঝতে পারছি না। বার বার জণগণের ভোট ডাকাতি দিনের ভোট রাতে করে বলছেন- জনগণ আপনাদের বারবার ক্ষমতায় বসিয়েছে। লাখ লাখ ডলার খরচ করে লবিষ্ট নিয়োগ দিয়ে, অন্য দেশের কাছে নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব বন্ধক রাখার শর্তে ক্ষমতায় টিকে থেকে অন্যকে সবক দিচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি কি মনে করেন না যে, দিনের ভোট রাতে করেছেন? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো একের পর এক কালো আইন করে মানুষের বাকস্বাধীনতা ও রাজনৈতিক অধিকার হরণ করেছেন? নির্দোষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটকিয়ে রেখে রাতের অন্ধকারে ব্যালট বাক্স ভর্তি করেছেন? দেশকে বিরোধী দল শুন্য করতে ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, জাকির, সুমন, জনিসহ হাজার নেতা-কর্মীকে গুম, খুন করিয়েছেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে লাখ লাখ কর্মীকে বন্দি করে রেখেছেন। উন্নয়নের নামে দলীয় নেতাকর্মীদের লুটপাটের সুযোগ করে দিয়ে দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচারের ব্যবস্থা করে দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, ব্যাংক, বীমা ও শেয়ার বাজার ধ্বংস করেছেন, সরকারী দলের সিন্ডিকেটকে লুটের সুযোগ করে দিতে নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীন করার সুযোগ দিয়েছেন।
ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী নির্বাচন ফেয়ার ও সুষ্ঠু হবে। বিএনপিসহ সব দলকে নিয়েই ভোট করতে চাই। নিশ্চয়তা দিচ্ছি নির্বাচন ফেয়ার হবে। ইভিএমে ভোট হবে, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকবে। তিনি আরও বলেছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে, তাদের (বিএনপি) অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই নির্বাচনে আসতে হবে।
রিজভী বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবের কথা শুনে মনে হয়েছে তিনি শুধু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নন, বিএনপি’রও বোধ হয় উপদেষ্টা। তিনি সর্বদা বিএনপিকে নিয়ে যে চিন্তায় থাকেন তাতে মনে হয় তিনি আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়বেন। তিনি ফেয়ার নির্বাচন বলতে ‘ফেয়ার এন্ড লাভলী’র কথা বুঝিয়েছেন কি না তা বোধগম্য নয়। ফেয়ার নির্বাচনের একটি আওয়ামী ভার্সন রয়েছে যা ১৪ বছরে দেশের মানুষ দিব্যচোখে অবলোকন করেছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিনা ভোটের নির্বাচন এবং ২০১৮ সালের নিশিরাতের নির্বাচন ফেয়ার ভোটের নমুনা। আগামী নির্বাচন ইভিএমে হবে এবং নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকার যে কথা আপনারা বলেছেন তাতেই আপনার আগাম বার্তা জনগণ ষ্পষ্ট বুঝতে পেরেছে আগামী নির্বাচন হবে মহাজালিয়াতির ও দস্যুবৃত্তির।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন