বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিনোদন প্রতিদিন

জামালপুরে ‘গলুই’র প্রদর্শনী বন্ধ : তারকাদের প্রতিবাদ

বিনোদন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২২, ১০:০৫ এএম

ঈদুল ফিতরে মুক্তি পায় এস এ হক অলিক পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘গলুই’। শাকিব খান ও পূজা চেরি অভিনীত এই সিনেমাটি সারা দেশের ২৮ টি সিনেমা হলে মুক্তি পায়। এদিকে সিনেমাটির শুটিং হয়েছিল জামালপুরের বিভিন্ন এলাকায়। শুটিং দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন লাখো মানুষ। স্বাভাবিকভাবেই সিনেমাটি দেখার জন্য উদ্‌গ্রীব ছিলেন জামালপুরের সিনেমাপ্রেমীরা।

কিন্তু জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার আশা সিনেমা হল ব্যতীত অন্য কোথাও কোনো হল না থাকায় ছবিটির পরিচালক এস এ হক অলিক বিভিন্ন অডিটোরিয়ামে সিনেমাটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। এর মধ্যে ছিল জামালপুর শিল্পকলা একাডেমির নতুন অডিটোরিয়াম, জামালপুরের মাদারগঞ্জে নুরুন্নাহার মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়াম ও ইসলামপুরের ফরিদুল হক খান দুলাল অডিটোরিয়াম। সিনেমাটি দেখতে জামালপুরের সর্বস্তরের মানুষ যখন ভিড় জমাচ্ছিলেন তখনই শোনা গেল অডিটরিয়ামগুলোতে সিনেমাটির প্রদর্শনী বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন জামালপুরের ডিসি মোরশেদা জামান।

রবিবার (৮ মে) থেকেই বন্ধ রয়েছে ইসলামপুরের ফরিদুল হক খান দুলাল অডিটোরিয়ামে সিনেমাটির প্রদর্শনী। অপরদিকে সোমবার (৯ মে) জানিয়ে দেয়া হয় মাদারগঞ্জের নুরুন্নাহার মাল্টিপারপাস অডিটোরিয়ামে ও জামালপুর শিল্পকলা একাডেমি একাডেমির অডিটোরিয়ামেও সিনেমাটি আরা চলবে না। শত বছরের পুরোনো একটি আইনের দোহাই দিয়ে এই প্রদর্শনী বন্ধ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে সিনেমাটির পরিচালক এস এ হক অলিক বলেন, ‘১৯১৮ সালের একটি পুরোনো আইনের দোহাই দিয়ে জামালপুরের ডিসি সিনেমাটির প্রদর্শনী বন্ধ করে দিচ্ছেন। ওই আইনে আছে, সিনেমা হল ব্যতীত অন্য কোথাও বাণিজ্যিকভাবে সিনেমা প্রদর্শন করা যাবে না। এখন দেখেন একমাত্র মেলান্দহ ছাড়া জামালপুরের আর কোথাও কোনো সিনেমা হল নেই। সিনেমাটি দেখানোর বিকল্প পথ হিসেবে আমরা অডিটরিয়ামগুলোকে বেছে নিয়েছিলাম। যেখানে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত সিনেমা শিল্পকে সহায়তা করতে বলেছেন সেখানে জামালপুরের ডিসির এমন নির্দেশনায় আমরা সত্যিই হতবাক হয়েছি। ডিসির এমন অসহযোগিতা কাম্য নয়।’

এদিকে গলুই সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়। সিনে পাড়ার অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অনেক নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলী সামিল হয়েছেন প্রতিবাদে।

অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রওনক দেশের ৬৪ জেলার শিল্পকলার মিলনায়তনে সিনেমা চালানোর দাবি তুলেছেন। রওনক বলছেন, ‘আসুন আমরা এইভাবে শুরু করি। যেহেতু এখন বাংলাদেশে সিনেমা হল নেই বললেই চলে, সেহেতু আমরা সকলে মিলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যাই। গিয়ে বলি যে মাননীয়, অন্তত সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমাগুলো ৬৪ জেলার ৬৪ শিল্পকলা একাডেমির হলে অন্তত এক সপ্তাহ প্রদর্শনের অনুমতি প্রদান করুন। সাধারণত সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত সিনেমা ব্যাবসায়িকভাবে সফল হয় না (ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে) বলে হল মালিকরা সেসব ছবি চালাতে চান না। তাই সিনেমাগুলো বৃহত্তর দর্শক হতে বঞ্চিত হয়। ’

খ্যাতিমান নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দেখেন আমাদের এটাই প্রাপ্য। কারো সিনেমা আটকানো হলে আমরা বাকিরা যখন সেটা উপভোগ করি, রসালো গল্প তৈরি করে অনলাইনে ছাড়ি, তখন নানারকম বিধি নিষেধের গিলোটিন আমাদের ওপর নাজিল হবে না কাদের ওপর হবে? আমরা যখন এইসব করে বেড়াবো, ঠিক ঐ অবসরেই আইন করা হবে যে, ডিসি চাইলে এমন কি সেন্সর পাওয়া ছবিও আটকে দেয়া যাবে। বাই দ্য ওয়ে, জামালপুরের সিনেমার প্রদর্শনী কিন্তু কনটেন্টের জন্য বন্ধ করা হয় নাই। করা হইছে সিনেমা হলের বাইরে দর্শনীর বিনিময়ে সিনেমা দেখানোর অপরাধে। কিন্তু ডিসি চাইলে কনটেন্টের জন্যও সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ করতে পারেন, এমনকি সেন্সর হওয়ার পরও। নতুন নীতিমালাতে এটা ছাড়াও আরও ভয়াবহ আইন আছে।’

কিংবদন্তী চিত্রপরিচালক কাজী হায়াত বলেন, ‘খবর নিয়েছি জামালপুরে খুব ভালো চলছে গলুই। মানুষ যেহেতু আনন্দের সঙ্গে গলুই দেখছে তাই বন্ধ করে দেয়া উচিত হয়নি। ১৯১৮ সালের আইনে যদি গলুই এর প্রদর্শনী বন্ধ করা হয়, তাহলে সেই সময়ের আইনে কি বলা আছে এখন যে মোবাইলে ছবি দেখা যাচ্ছে সেই বিষয়টি? আমি পরিষ্কারভাবে বলছি এটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ঈর্ষা কাতর হয়ে করা হয়েছে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, প্রয়োজনে এই আইন সংশোধন করুন, ভালো সিনেমা প্রদর্শনে সহায়তা করুন।’

নির্মাতা দীপঙ্কর দীপন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘গলুই’-এর প্রদর্শনী বন্ধ করেছেন জামালপুরের ডিসি মহোদয়! করতেই পারেন সেটা তার নীতিমালার মধ্যে পড়লে। আমার ব্যক্তিগত কথা হলো- ঈদের চলচ্চিত্রগুলো যেখানে এই দুঃসময়ে কাটিয়ে চলচ্চিত্র শিল্প বাঁচানোর চেষ্টা করছে, সেখানে এই সামান্য অজুহাতে (শিল্পকলা একাডেমিতে সিনেমা প্রদর্শনী করা যাবে না) প্রদর্শনী বন্ধ করা উচিত হয়েছে? প্রথমত এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমি যতটুকু জানি, শিল্পকলা একাডেমির অনুমতি নিয়েই চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনের আয়োজন করেছিল প্রযোজনা সংস্থা। দ্বিতীয়ত শিল্পকলা একাডেমি কার জন্য? বিনোদন শিল্পের সর্বোচ্চ শিল্প যেখানে চলচ্চিত্র সেখানে একটি সরকারি অনুদান পাওয়া সম্পূর্ণ পারিবারিক চলচ্চিত্র ‘গলুই’-এর রানিং শো বন্ধ করে দেয়া কতটা যৌক্তিক? আমার মনে হয় চলচ্চিত্রপ্রেমী সকল মানুষের এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো উচিত।’

এক সময়কার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও সেন্সর বোর্ডের সদস্য অঞ্জনা রহমান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প রক্ষায় শিল্পী পরিবারের সবাইকে এক হওয়া উচিত। গলুই চলচ্চিত্র দিয়ে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। ১০৩ বছর আগের আইনের সামান্য একটি নজীর দেখিয়ে সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধ করা অবশ্যই অপরাধ, যাদের মধ্যে চলচ্চিত্র শিল্প সত্তা বিদ্যমান, যারা বাংলা চলচ্চিত্রকে মনেপ্রাণে লালন করেন, তাদের সবাইকে এর তীব্র প্রতিবাদ করা উচিত।’

নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক লিখেছেন, ‘হল সংকটের এই সময়ে, ‘সিনেমা হল ব্যতীত অন্য কোথাও বাণিজ্যিকভাবে সিনেমা প্রদর্শন করা যাবে না’- এই আইন রহিত করা হোক। জামালপুরের অডিটোরিয়ামগুলোতে, ‘গলুই’ প্রদর্শন বন্ধ করার প্রতিবাদ জানাই।’

তারা ছাড়াও নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিক, নির্মাতা ও অভিনেতা খিজির হায়াত খান, নির্মাতা অপূর্ব রানা, চিত্রনায়ক আদর আজাদ, সহ সিনেমা অঙ্গনের আরও অনেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পাশাপাশি ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপে সাধারণ দর্শক-ভক্তরাও প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেছেন।

উল্লেখ্য, গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে নির্মিত হয়েছে ‘গলুই’। এতে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন অনুষঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে। সেই সঙ্গে একটি সহজ-সরল প্রেম কাহিনি। সিনেমাটি ২০২০-২১ অর্থবছরে অনুদান পেয়েছিল। পাশাপাশি এটি প্রযোজনা করেছেন খোরশেদ আলম খসরু। এতে শাকিব অভিনয় করেছেন লালু চরিত্রে, আর পূজা আছেন মালার ভূমিকায়। তাদের সঙ্গে আরও অভিনয় করেছেন আজিজুল হাকিম, সুচরিতা, আলী রাজ, সমু চৌধুরী প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন