বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

সড়ক-মহাসড়ক দখলমুক্ত ও নির্বিঘ্ন করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত ও স্বাচ্ছন্দ যাতায়াত নিশ্চিত করতে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শহরের উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও যানজটের তীব্রতা ও জনদুর্ভোগ মোটেও কমেনি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, ফুটপাতসহ সড়কে অবৈধ দখলদারিত্ব, গাড়ি পার্কিং ও ট্রাফিক সিস্টেমে অব্যবস্থাপনা। শহরের প্রতিটি ফুটপাতে হাজার হাজার হকার পণ্যের পসরা নিয়ে বসে থাকে। ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণীর নেতাকর্মী এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। তাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি, ফুটপাতও দখলমুক্ত হয়নি। শুধু তাই নয়, আন্তঃজেলা বাস সার্ভিসের গাড়িও সড়ক দখল করে পার্ক করে রাখছে। এমনিতেই ঢাকা শহরে জনসংখ্যা ও অবকাঠামোর তুলনায় রাস্তার অংশ খুবই অপ্রতুল। দুই কোটি মানুষের মেগা শহরে যে পরিমান প্রশ্বস্ত রাস্তা থাকার কথা তার সিকিভাগও ঢাকায় নেই। এহেন বাস্তবতায় ঢাকার ট্রাফিক সিস্টেম, রাস্তা ও নগরপরিবহন ব্যবস্থাপনায় যে ধরণের শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা থাকার কথা তা নেই। একদিকে সংকীর্ণ রাস্তায় দোকানপাট বসিয়ে চাঁদাবাজি, অন্যদিকে গণপরিবহণের যত্রতত্র স্টপেজ, পার্কিং ও মেয়াদোত্তীর্ণ মানহীন লক্করঝক্কর মার্কা গাড়ীর কারণে রাস্তায় যানজট ও জনদুর্ভোগ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ব্যক্তিগত গাড়ীর যত্রতত্র পার্কিং ও ট্রাফিক আইন অমান্য ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে রাজধানীর যাতায়াত ব্যবস্থা সংকীর্ণ করে তুলেছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে ভেঙ্গে দুইভাগ করাসহ গত দুই দশকে ঢাকার যানজট ও নাগরিক বিড়ম্বনা নিরসনে নানা ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও রাস্তা বেদখল, চাঁদাবাজি ও ট্রাফিক শৃঙ্খলায় তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।

অপ্রতুল ও সংকীর্ণ রাস্তাগুলো দখল ও বেআইনী পার্কিংয়ের কারণে ঢাকা ও আশপাশের সংযোগ সড়কগুলো সরু হয়ে যাচ্ছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, কোনো কোনো চারলেন সড়কের অর্ধেক অংশ জুড়ে অবৈধ পার্কিং, ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে অস্থায়ী বাজার বসানো হয়েছে। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এবং স্থানীয় প্রভাবশালীরা মোটা অংকের চাঁদার বিনিময়ে এসব বাজার ও পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তুললেও ট্রাফিক পুলিশসহ সড়ক বিভাগ কোনো ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অভিযোগ আছে, চাঁদাবাজির একটি অংশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পকেটে যায়। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর উপর বিভিন্ন গণপরিবহন কোম্পানির দূরপাল্লার গাড়ীর স্ট্যান্ড বসিয়ে অর্ধেক রাস্তা দখলে রাখার কারণে এসব রাস্তায় যানজট লেগে থাকে। সড়কের পাশে টিকিট কাউন্টার বসিয়ে রাস্তা দখল করে গাড়ী রেখে যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী বাস কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বিশ্বের কোথাও রাজধানীর সড়কে এমন অরাজকতা দেখা যায় না। ঢাকার যানজট নিরসন ও যাতায়াত ব্যবস্থা কিছুটা হলেও মসৃণ করার জন্য সড়ক ও ফুটপাতের অবৈধ দখলমুক্ত করা জরুরি। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া যাবে না। ছাড় দিতে দিতে রাজধানী এখন চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।

পরিবেশগত নিরাপত্তাহীনতা, নানামাত্রিক দূষণের কারণে ঢাকা শহর বিশ্বের অন্যতম বসবাসের অযোগ্য বা নিকৃষ্ট শহরের তালিকায় স্থান পাচ্ছে। একদিকে দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে পরিত্যক্ত শহরে পরিণত হচ্ছে। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পরিবেশ দূষণ থেকে শুরু করে চারপাশের নদীর পানি বিষাক্ত ও ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ায় নগরবাসী স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে যানজট চিরস্থায়ী রূপ লাভ করেছে। শুধু রাজধানীর সড়কই নয়, মহাসড়কগুলোতেও অবৈধ বাজার, ট্রাকস্ট্যান্ড স্থাপন করে দখলের কবলে পড়ে সরু হয়ে যাচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ বাজার, বাসস্ট্যান্ড বসিয়ে নির্বিঘ্ন যান চলাচলের ব্যবস্থাকে সংকীর্ণ করে তোলা হয়েছে। সাধারণত মহাসড়ক হতে হয় নির্বিঘ্ন ও মসৃণ। একে বলা হয় দ্রুতগামী সড়ক, যে সড়কে যানবাহন বাধাহীনভাবে চলবে। দেখা যাচ্ছে, একদিকে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে মহাসড়ক সংস্কার ও প্রশস্থ করা হচ্ছে, আরেক দিকে অবৈধ দখলে পড়ে সরু হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, ব্যাটারি চালিত থ্রি হুইলারসহ ধীরগতির ছোট ছোট যানবাহন চলার কারণে দুর্ঘটনাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে সড়ক দখলের এ অরাজকতা চললেও তার সমাধানের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। এ দায় এককভাবে সড়ক বিভাগের। তাদের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে রাজধানীর সড়কসহ মহাসড়ক অবৈধ দখলের কবলে চলে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি আর চলতে দেয়া যায় না। রাজধানীসহ মহাসড়কে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সড়ককে নির্বিঘ্ন চলাচলের উপযোগী করে তুলতে হবে। ট্রাফিক সিস্টেমে বিশৃঙ্খলা দূর করে আধুনিক, সুশৃঙ্খল, ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
আকিব ১১ মে, ২০২২, ১:৩৪ এএম says : 0
রাজধানী থেকে যানজট কমাতে হলে প্রথমেই ফুটপাত দখল মুক্ত করতে হবে।
Total Reply(0)
আকিব ১১ মে, ২০২২, ১:৩৪ এএম says : 0
রিকশা তুলে দিতে হবে। তাদের কারণে বেশি জ্যাম লাগে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন