মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিএনপির টার্গেট নিরপেক্ষ ইসি

প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪০ পিএম, ১৬ নভেম্বর, ২০১৬

আন্দোলনবিহীন কাটবে শীত মৌসুম
আফজাল বারী : বিএনপির ধ্যান-জ্ঞান এখন নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্য সকল দাবির চেয়ে মুখ্য দাবি হিসেবে দেখছে সাংবিধানিক এই পদটিকে ‘তল্পিবাহকমুক্ত’ করা।
এই দলটির বোদ্ধাদের মতে, এই নির্বাচন কমিশনবিএনপির চলার গতিতে বিনিসুতায় লাগাম দিয়েছে। রাজনীতির পিচ্ছিল পথে ‘মবিল’ ঢালছে নির্বাচন কমিশন। যে কারণে ক্ষমতার বাইরে টানা ৯ বছর। নতুন সিদ্ধান্ত উপনিত হয়েছেন দলীয় প্রধান। তিনি অতীত ও বিদ্যমান রাজনৈতিক ইস্যুতে উপস্থিত থাকতে চান তবে শক্তি ক্ষয় করতে চান না। ‘নিরপেক্ষ ইসি’-একদফা দাবিতেই স্থির থাকতে চান। প্রথমে প্রস্তাব, পরে বাস্তবায়নের দাবি এবং সর্বশেষ এই ইস্যুতেই রাজপথ গরম রাখতে চায় বিএনপি ও তার মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো। তবে সেটি হবে নতুন বছরের প্রথমভাগে।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট জাতিকে জানাতে চায়, ক্ষমতাসীনদের অব্যাহত নির্যাতন, নিপীড়নে বিপর্যস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের মাধ্যমেই গণতন্ত্র চর্চা, ক্ষমতার পালা বদল চায়। তার আগে মেরুদ-যুক্ত শক্তিশালী কমিশন অত্যাবশ্যক। আগামীকাল শুক্রবার দল এবং দলীয় জোটের তরফ থেকে নিরপেক্ষ কমিশন গঠনের প্রস্তাবনা তুলে ধরবেন জোটপ্রধান ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এ প্রস্তাব শুধু ক্ষমতাসীনদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য নয়। দাতাগোষ্ঠী কিংবা বিশ্বমোড়লদের নজর কাড়তেও।
দলীয় সূত্রমতে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া যে প্রস্তাব দিবেন, তা বাস্তবে রূপ পেলে অবশ্যই নিরপেক্ষ হবে। নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণের পথ সুগম হবে।
তার প্রস্তাবে থাকছে, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব অথবা প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিবদের মধ্য থেকে একজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করার। এছাড়া নাগরিক সমাজ, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, এবং আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি- এ চার স্তর থেকে একজন করে কমিশনার নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব রয়েছে তার খসড়ায়। রূপরেখায় নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া তুলে ধরা হলেও পদগুলোর বিপরীতে কোনো নামের তালিকা দেয়া হবে না।
আলাপকালে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা ইনকিলাবকে জানান, বিগত দিনে বিএনপি তাদের মিত্রদের নিয়ে যে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে তার দৃশ্যত কোনো ফল পাওয়া যায়নি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী আন্দোলন হয়েছে। কথিত ক্রসফায়ারে শত নেতার মৃত্যু হয়েছে। গুম-খুনের শিকার হয়েছে অনেক। শীর্ষ নেতাকে ৯৩ দিন নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধদশায় কাটাতে হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র দাখিলও করতে পারেনি। হাতেগোনা কয়েকটিতে বিজয়ী হলেও শেষ পর্যন্ত তা টেকেনি। নির্বাচিতদের বহিষ্কার এবং অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে অর্জন গেছে রসাতলে। সংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়াতেও ধাক্কা লেগেছে। এসবের মূলে নির্বাচন কমিশনে নিরপেক্ষতার অনুপস্থিতি। শুধু বিএনপিই নয় সুশীল সমাজও একই অভিযোগ করেছে।
এদিকে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কবরস্থ হয়েছে’ Ñএমন মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। প্রথমদিকে বিএনপি এই দাবিতে অনড় থাকলেও এখন একে পর্দার আড়ালে ঠেলে দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আগামী নির্বাচন যাতে সব দলের অংশগ্রহণে হয়, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এজন্য স্বাধীন কমিশনের পাশাপাশি নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়েও একটি সমাধানে আসতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে দলের চেয়ারপার্সন বিএনপির অবস্থান তুলে ধরবেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, দেশের গণতন্ত্র উদ্ধারের পথগুলোর মধ্যে প্রধানতম পথ মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা। সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে। আর কমিশন নিরপেক্ষ হলে রাজনীতিক দলের রাজনীতি করার পথ থাকবে।
বিএনপির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রস্তাবনার কথা গণমাধ্যমে দেখছি, শুনছি। তা-ই যদি হয় এবং দাবির বাস্তবায়ন ঘটাতে পারলে বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানোর পথ সুগম হবে।
দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেছেন, বিএনপি সকল ইস্যুতেই সোচ্চার ছিলো এবং আছে। ভবিষ্যতেও দেশ ও দেশের মানুষের মুক্তির জন্য যেসকল ইস্যু নিয়ে রাজপথে নামতে হয় তাই নিবে।
উল্লেখ্য, সংবিধান অনুযায়ী কমিশনের মেয়াদ পাঁচ বছর। এ হিসাবে আগামী বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে।
বর্তমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাবেক সচিব কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদ এবং চার কমিশনার মোঃ শাহ নেওয়াজ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) মোঃ জাবেদ আলী, মোহাম্মদ আবু হাফিজ এবং মোহাম্মদ আবদুল মোবারাক ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। পরে আরও একজন যুক্ত হন। বর্তমান কমিশনের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট অংশ নেয়নি। ওই নির্বাচনে ১৫৩ জন সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের ভূমিকা নিয়েও বিতর্ক আছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন