বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মেধাবীদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০২২, ১২:০২ এএম

বিশ্বের সব দেশেই মেধাবীদের গুরুত্ব দেওয়া হয়। এটা যে দেশে যত বেশি দেয়া হয়, সে দেশে তত উন্নতি হয়। যেখানে মেধাবীদের অবজ্ঞা করা হয়, সেখানে চরম ক্ষতি হয়। তবুও দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ মেধাবীদের যথোচিত মূল্যায়ন না করে কম মেধাবীদের গুরুত্ব দেয়া হয়। যেমন: সরকারি চাকরিতে বিশেষায়িত ক্যাডারের (ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রযুক্তিবিদ, কৃষিবিদ ইত্যাদি) চেয়ে সাধারণ ক্যাডারের বেতন, পদোন্নতি, মর্যাদা ও প্রভাব বেশি। তাই বিশেষায়িত শিক্ষার্থীরা স্বীয় পেশার পরিবর্তে সাধারণ ক্যাডারের চাকরির দিকে ঝুঁকে পড়ে। খবরে প্রকাশ, ‘৪০তম বিসিএসে প্রশাসন, পররাষ্ট্র ও পুলিশ ক্যাডারে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী প্রথম স্থান অর্জন করেছে। ৩৮তম বিসিএসে ১২০ জন ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার ও কৃষিবিদ প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছে। ৩৬তম বিসিএসে শতাধিক চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও কৃষিবিদ প্রশাসন, পররাষ্ট্র ও পুলিশ ক্যাডারে যোগ দিয়েছে। ৩৭তম বিসিএসে বিশেষায়িত শিক্ষার ৮০ জন অন্য ক্যাডারে নিয়োগ পেয়েছে’। অর্থাৎ বিশেষায়িত শিক্ষার্থীরা দলে দলে সাধারণ ক্যাডারের চাকরিতে নিযুক্ত হচ্ছে। কিন্তু এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে নানাবিধ। যেমন: কাজের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে, মেধা ও অর্থের অপচয় হচ্ছে এবং বিশেষায়িত খাতে দক্ষ লোকের ঘাটতি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিস্তারিত বিশ্লেষণ হচ্ছে, বিশেষায়িত শিক্ষার্থীরা নবম শ্রেণী থেকেই বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। সর্বোচ্চ মেধাবীরাই বিজ্ঞানে পড়ার সুযোগ পায়। তার মধ্যে সেরা শিক্ষার্থীরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, প্রযুক্তিবিদ হয়। আবার এদের মধ্যে যারা সর্বোচ্চ মেধাবী, তারা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পায় (কমার্স ও আর্টসের সর্বোচ্চ মেধাবীরাও)। বাকীগুলো সাধারণ পেশায় যুক্ত হয়। অপরদিকে, যারা বিজ্ঞানে পড়ার সুযোগ পায় না, তাদের প্রথম ধাপেরগুলো কমার্সে পড়ে আর দ্বিতীয় ধাপেরগুলো আর্টসে পড়ে। এই শিক্ষার মধ্যে কর্মাসের শিক্ষা কিছুটা কঠিন। শিক্ষার মধ্যে সবচেয়ে সহজতর হচ্ছে আর্টসের শিক্ষা। এরাই মূলত: সাধারণ ক্যাডারের চাকরি করে। অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা হচ্ছে প্রথম স্তরের মেধাবী, কমার্সের শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় স্তরের মেধাবী আর আর্টসের শিক্ষার্থীরা তৃতীয় স্তরের মেধাবী। বিজ্ঞানের পড়া খুবই কঠিন।তাই প্রচণ্ড পরিশ্রম করতে হয়। কারণ, এটা প্র্যাকটিকালভিত্তিক শিক্ষা। এ শিক্ষায় শুধু মুখস্থ করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যায় না। নিয়মিত অনেক পড়াশুনা করতে হয়। বিশেষায়িত শিক্ষার ব্যয় সর্বাধিক। ইউজিসির সর্বশেষ তথ্য মতে, শিক্ষার্থীপ্রতি বছরে ব্যয় হয়- ঢাবিতে ১.৮০ লাখ টাকা, চবিতে ১.২০ লাখ টাকা, বুয়েটে ২.৩০ লাখ টাকা ও বাকৃবিতে ৩.৭৫ লাখ টাকা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় হয় সরকারিতে ১৫ লাখ টাকা আর বেসরকারিতে ১৮-২০ লাখ টাকা। অর্থাৎ সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীপ্রতি ব্যয় প্রায় দ্বিগুণ। তাই বিশেষায়িত শিক্ষার্থীরা সাধারণ ক্যাডারের চাকরিতে নিযুক্ত হলে অর্থের ব্যাপক অপচয় হয়। কর্মজীবনেও সাধারণ ক্যাডারের লোকের চেয়ে বিশেষায়িত ক্যাডারের লোকের পরিশ্রম বেশি। কারণ, তাদের সার্বক্ষণিক লেখাপড়া, গবেষণা, আবিষ্কার, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি করতে হয়। কারণ, পেশার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই নতুনত্ব সৃষ্টি হয়। এসব না জানলে ও কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ না করলে সফলতা আসে না। অপরদিকে, সাধারণ ক্যাডারের লোকদের পেশাগত উৎকর্ষের জন্য শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ দরকার হয়। অর্থাৎ সার্বিকভাবে বিশেষায়িত শিক্ষা ও কর্মজীবনে মেধা, আর্থিক ব্যয় ও পরিশ্রম সাধারণ শিক্ষা ও কর্মজীবনের চেয়ে অনেক বেশি। তবুও এ দেশের সরকারি চাকরিতে বিশেষায়িত ক্যাডারের চেয়ে সাধারণ ক্যাডারের বেতন-সুবিধাদি ও মর্যাদা-প্রভাব বেশি। যাকে বলে ঘিয়ের চেয়ে তেলের দাম বেশি। তাই বাধ্য হয়েই বিশেষায়িত শিক্ষার্থীদের অনেকেই স্বীয় পেশা ছেড়ে সাধারণ ক্যাডারের চাকরিতে নিযুক্ত হচ্ছে! অনেকেই আবার দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও এই অবস্থা চলছে। বিবিসিতে ঢাবির এক শিক্ষক বলেন, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে বেতন পান, তার অর্ধেক বেতন পান ঢাবির শিক্ষকরা।তাই সংসার চলে না।ফলে অনেক শিক্ষক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কনসালটেন্সি করেন।অনেকেই লিয়েন নিয়ে বিদেশে যান, আর ফেরত আসেন না। অন্যদিকে, বিশেষায়িত ক্যাডারের লোকদের অবমূল্যায়ন করার কারণে দেশে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। বিএসবি’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে মাধ্যমিকে বিজ্ঞানে শিক্ষার্থী ছিল দেশের মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৩১%, যা ২০০১ সালে ছিল ৩২.৮৫%। অর্থাৎ ১৮ বছরে ১.৮৬% কমেছে। এটা বিজ্ঞান-প্রযুক্তির যুগে দেশের জন্য চরম ক্ষতিকর!

দেশের শিক্ষার মান খুবই খারাপ।শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও তথৈবচ! এর প্রধান কারণ, শিক্ষকের মান খারাপ। শিক্ষকের বেতন, মর্যাদা ও প্রভাব খুব কম। তাই মেধাবীরা শিক্ষকতায় তেমন আসছে না। কিছু এলেও অধিকাংশই সুযোগ পেলে সাধারণ ক্যাডারে চলে যাচ্ছে। আমার এক বন্ধুর ছোট ভাই একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক ছিল। পরবর্তীতে সে বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশের সহকারী কমিশনার হয়েছে। এটা কেন করেছে, সে প্রশ্নোত্তরে বলেছে, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও পুলিশের সহকারী কমিশনারের বেতন একই গ্রেডের। কিন্তু মর্যাদা ও প্রভাবে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। যেমন: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আজকাল কেউ শ্রদ্ধা করে না তেমন। চলাফেরা করতে হয় হেঁটে অথবা রিকশায়। এছাড়া, সামাজিক মর্যাদা-প্রভাবও নেই। অথচ একজন পুলিশের সহকারী কমিশনারের নিরাপত্তা ও মর্যাদা ব্যাপক। তার চলাফেরার সময় যে পরিমাণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকে, সে পরিমাণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা মন্ত্রী-এমপিরও থাকে কি-না সন্দেহ রয়েছে। উপরন্তু তার ফোনের গুরুত্ব অপরিসীম। পদোন্নতিও হয় ঘন ঘন। আর শিক্ষকদের পদোন্নতি পাওয়া সোনার হরিণের মতো। এ ক্ষেত্রে মাউশি’র মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের বক্তব্যও প্রণিধানযোগ্য। তিনি গত ২৫ এপ্রিল বলেন, ‘আমার কয়েকজন সরাসরি ছাত্র এখন যুগ্ম-সচিব হয়েছে। অতিরিক্ত সচিবেরা আমাদের জুনিয়র। কিন্তু আমরা চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তাই আছি। একেই বলে ঘিয়ের চেয়ে তেলের দাম বেশি। কারণ, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের নিয়োগের যোগ্যতা হচ্ছে সব পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ। উপরন্তু স্ট্যান্ড করা প্রার্থীরা অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত। অর্থাৎ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হচ্ছে সর্বোচ্চ মেধাবী। আর সাধারণ ক্যাডারের নিয়োগের যোগ্যতা হচ্ছে সব পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ হলেই চলে। বিসিএস ও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিই যার প্রমাণ। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকপ্রার্থী ইচ্ছা করলেই সাধারণ ক্যাডারের চাকরিতে নিযুক্ত হতে পারবে। কিন্তু সাধারণ ক্যাডারের প্রার্থী শত চেষ্টা করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পারবে না। কারণ, শিক্ষাগত যোগ্যতা এলাউ করবে না। তেমনি একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ইচ্ছা করলেই সাধারণ ক্যাডারের চাকরিতে নিযুক্ত হতে পারবে। কিন্তু সাধারণ ক্যাডারের একজন শত চেষ্টা করেও ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে না। সে মেধা নেই তার।

অর্থাৎ দেশের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য চলছে! অনেকেই অসন্তুষ্ট, যা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির অন্তরায়। তাই আন্তঃক্যাডারের মধ্যে সৃষ্ট বৈষম্য দূর করে সমতা আনতে হবে। পেশাভিত্তিক প্রশাসন গড়ে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে বিশ্বখ্যাত পানিবিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত এবং আরো কিছু পণ্ডিত ব্যক্তিরা বলছেন, অনেকদিন থেকেই। সর্বোপরি বেতন-সুবিধাদি ও মর্যাদা সর্বাধিক করতে হবে বিশেষায়িত ক্যাডারের লোকদের। এসব যত তাড়াতাড়ি হয় ততই মঙ্গল। নতুবা ডিজিটাল কান্ট্রি বলে খ্যাত দেশে রেলের মতো এনালগ ডিজিটাল হবে সবক্ষেত্রেই। উল্লেখ্য যে, এবার রোজার ঈদের সময় ট্রেনের টিকেট প্রদানের নিয়ম করা হয়েছিল প্রথমে অনলাইনে বুকিং দিয়ে তার প্রিন্ট কপি নিয়ে স্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকেট নিতে হবে। আর এবার কাউন্টারে ভিড় হয়েছে সর্বকালের সর্বাধিক। তাই অনেকেই রাতদিন পালা করে লাইনে থেকে টিকেট নিয়েছে। ফলে ট্রেনযাত্রীদের বহুমুখী হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। তাই মানুষ একে এনালগ ডিজিটাল নাম দিয়েছে। অথচ নিয়ম মোতাবেক শুধুমাত্র অনলাইনের মাধ্যমে টিকেট দেওয়া হলেই মানুষের এতো ভোগান্তি হতো না। তাই এ ব্যাপারে কঠোর সমালোচনা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় এটা হয়েছে। এ ধরনের অবস্থা দেশের প্রায় সব ক্ষেত্রেই চলছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের সব ওয়েবসাইট দেখলেই তার প্রমাণ পাওয়া যাবে। দেখা যাবে অধিকাংশই হালনাগাদ নয়। কর্তৃপক্ষের ও বেশিরভাগ জনবলের প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় এবং কাজের জবাবদিহি না থাকায় এটা হয়েছে। তাই দেশকে বাস্তবিকভাবে ডিজিটাল কান্ট্রিতে পরিণত করতে হলে সরকারি সব জনবলকে প্রযুক্তিতে দক্ষ এবং সকলের জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

কতিপয় শিক্ষাবিদের অভিমত, সরকারি জনবলের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন-সুবিধাদি ও মর্যাদা সবচেয়ে সর্বাধিক করতে হবে। যেমন: ভিসিদের মর্যাদা সিনিয়র সচিবের উপরে এবং অধ্যাপকদের মর্যাদা সিনিয়র সচিব, সহযোগী অধ্যাপকদের মর্যাদা সচিব ও সহকারী অধ্যাপকদের মর্যাদা অতিরিক্ত সচিবের সমান করতে হবে। উপরন্তু সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। জানা মতে, মাত্র ৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসন রয়েছে। বাকীগুলোতে নেই। সেখানে চলছে সরকারি শাসন। ফলে দলীয়করণ ও হরিলুটের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এছাড়া, বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির শতভাগ আইন বাস্তবায়ন হয়নি। তাই বেশিরভাগ সনদ বেচার কারখানায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে দেশের উচ্চ শিক্ষার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়ন হচ্ছে না। তাই সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন প্রদান এবং সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ইউজিসির শতভাগ আইন পালনে বাধ্য এবং অনার্স ও মাস্টার্সের ফাইনাল পরীক্ষা ইউজিসির মাধ্যমে করতে হবে। তবেই উচ্চ শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়ন হবে (পাশাপাশি নিম্নস্তরের শিক্ষারও মানোন্নয়ন করতে হবে)। এসব না হলে দেশের শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানোন্নয়ন হবে না। বিশ্বায়ন প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ও এলডিসি উত্তরণের সংকট মোকাবেলা করার মতো দক্ষ লোক তৈরি হবে না দেশে। সিঙ্গাপুরের সমান উন্নতি করার যে স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে, তা বাস্তবায়ন হবে না। কারণ, সিঙ্গাপুরের সমান উন্নতি করতে হলে সে দেশের শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মানের সমান করতে হবে আমাদের দেশের শিক্ষার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান। বর্তমানে সেটা ধারে কাছেও নেই। কিউএস এশিয়া ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং-২০২২ মতে, শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই (২০১৯ সালের পর থেকে এই তালিকার সেরা ১০০তে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই)। এবার এশিয়ার সেরা ৬৮৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১৪২তম। এটা ছাড়া তালিকার শীর্ষ ২০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও নেই দেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। অথচ এ তালিকায় প্রথম ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুরের বিশ্ববিদ্যালয়। আর তালিকায় সর্বাধিক স্থান পেয়েছে ক্রমান্বয়ে চীন, ভারত ও জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়। উল্লেখ্য যে, অনেকেই প্রায়ই বলেন, আমরা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি উন্নতি করেছি। কিন্তু কীভাবে? ঐ দু’টি দেশের সমান কি আমাদের দেশের শিক্ষা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান হয়েছে? হয়নি। যার প্রমাণ, কিউএস এর ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং-২০২১ মতে, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়েরও নাম নেই। অথচ ঐ তালিকায় পাকিস্তানের ১৬টি ও ভারতের ৬৬টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বর্তমানে উন্নতির মাপকাঠি হচ্ছে আধুনিক তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার হার এবং তার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান। এসব ক্ষেত্রে যে দেশ যত উন্নতি করছে, সে দেশের উন্নতি তত বেশি ও টেকসই হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি, যার খেসারত চলছে প্রতিটি ক্ষেত্রেই। তাই আধুনিক যুগে দেশের উন্নতির স্বপ্ন দেখলেই শুধু চলবে না, সেটা বাস্তবায়ন করার জন্য বিশ্বমানের আধুনিক শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দরকার। আর সে জন্য প্রয়োজন সর্বোচ্চ মেধাবীদের শিক্ষকতায় নিয়োগ করা।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
sardarsiraj1955@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন