বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে অ্যাটাশে নিয়োগ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন দূতাবাসের প্রেস বিজ্ঞপ্তি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

ঢাকায় কর্মরত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, দুই দেশের অংশীদারিত্বকে দৃঢ় করতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যেতে চায়।
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বাড়াতে চলতি বছর ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে দেশটির বাণিজ্য বিভাগ থেকে প্রথমবারের মতো একজন পূর্ণকালীন অ্যাটাশে নিয়োগ দেবে। গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামে দেওয়া বক্তৃতায় রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ তথ্য জানান। গতকাল বুধবার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেন, আমি নিশ্চিত যে, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যিক ও বিনিয়োগ সম্পর্ককে সম্প্রসারণে ইচ্ছুক। আমি বুঝতে পারছি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সকল ক্ষেত্রে; বিশেষ করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলো সবচেয়ে সম্ভাবনাময়। তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বৃদ্ধিতে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছি তার প্রমাণ হিসেবে এই গ্রীষ্মে বাংলাদেশের যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ থেকে প্রথমবারের মতো একজন পূর্ণকালীন অ্যাটাশেকে স্বাগত জানানো হবে। এর ফলে তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে একটি প্রত্যক্ষ যোগাযোগ গড়ে তুলবেন।

রাষ্ট্রদূত জানান, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বাধীন ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদলকে আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চ-স্তরের অর্থনৈতিক ফোরামে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হবে।

পিটার হাস বলেন, আমরা একত্রিতভাবে যে ভিত্তি গড়ে তুলেছি সেখানে আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। তবে সম্পর্কের পরবর্তী ধাপে যাওয়ার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় অবশ্যই ঘটতে হবে। প্রথমত, আমেরিকান কোম্পানি ও বিনিয়োগকারীদের অবশ্যই আরও ভালভাবে জানতে হবে যে তাদের জন্য বাংলাদেশে কী ধরনের সুযোগ রয়েছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশকে অবশ্যই আমেরিকান ব্যবসাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা কেন বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আগ্রহী হবেন তার কারণ ব্যাখ্যা করেন রাষ্ট্রদূত হাস। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলে যোগ দেওয়া ৫০ এর মতো কোম্পানি এখন জানে যে বাজার খুঁজে পাওয়ার সুযোগ নিতে বাংলাদেশের দিকে তাকানোর জোরালো কারণ রয়েছে। গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের দ্রুততম সময়ে বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। তিনি বলেন, এই দেশের জিডিপি এমনকি কোভিড-১৯ লকডাউনের সময়েও বেড়েছে এবং অর্থনীতি এই বছর ৬.৯ শতাংশ এবং পরের বছর ৭.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। দেশের অর্থ খাতের নেতৃবৃন্দ ভালোভাবে ঋণ ব্যবস্থাপনা করতে পারছেন এবং তারা ধাক্কা সামলানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক রিজার্ভ আলাদা করেছেন।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশগুলোর কাতারে থাকা বাংলাদেশের ২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটবে। যে কোনো কোম্পানি এখন বাংলাদেশে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারলে তাদের জন্য প্রজন্মান্তরে বিনিয়োগের লাভ ফেরত পাওয়া নিশ্চিত। বাংলাদেশে কর্মে আগ্রহী ও ইচ্ছুক জনবল রয়েছে। বাংলাদেশ এখন তাদের জনমিতিক সুবিধা নেওয়ার অবস্থানে রয়েছে। এই দেশের জনবল তরুণ-বয়সী এবং এখানে সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে।

এ সময় জিএসপি সুবিধা স্থগিত প্রসঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, যদিও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির কারণ সস্তা শ্রম। কিন্তু কাজের পরিবেশ ও শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে উদ্বেগগুলো আপনারা যখন মধ্যম-আয়ের দেশে পরিণত হবেন তখন বাণিজ্য সিদ্ধান্তের মূল বিষয় হয়ে উঠবে। এই ধরনের উদ্বেগগুলোর কারণে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল বিনিয়োগ পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। শ্রমিকের অধিকার এবং কাজের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগের কারণে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জেনারাইলজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স ট্রেড বেনিফিট বা জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের ডেভেলপমেন্ট ফিনান্স করপোরেশন বা ডিএফসি ৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন নিয়ে কংগ্রেস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ডিএফসি যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে মিলে জ্বালানী, স্বাস্থ্যসেবা, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও প্রযুক্তির মতো খাতগুলোতে প্রকল্প তৈরিতে কাজ করে। ডিএফসি বাংলাদেশের প্রকল্পগুলোর অর্থায়নের জন্য আদর্শ উৎস হতে পারে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত যতোক্ষণ পর্যন্ত বাংলাদেশ জিএসপির জন্য যোগ্যতা অর্জন না করবে ততোক্ষণ পর্যন্ত তারা ডিএফসি-র অর্থায়নের যোগ্যতাও অর্জন করবে না। আমরা আশা করি যে, বাংলাদেশ শিগগিরই শ্রমিকদের অধিকার ও কর্মস্থলে নিরাপত্তার বিষয়ে অগ্রগতি সাধন করবে, ফলে অচিরেই দেশটি ডিএফসি-র বিনিয়োগ পাওয়ার জন্য যোগ্যতা অর্জন করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরো বেশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন