শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

দুর্ঘটনার প্রায় চার মাস পরে পিএস মাহসুদ-এর মেরামত কাজ শুরু

প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : দুর্ঘটনার প্রায় ৪ মাসের কাছাকাছি সময়ে বিআইডব্লিউটিসি’র ‘পিএস মাহসুদ’ জাহাজটির মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। ঈদ উল ফিতরের বিপুল সংখ্যক যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে চাঁদপুর হয়ে বরিশাল আসার পথে গত ৪ জুলাই নদী বন্দরের অদূরে বিপরীত দিক থেকে আসা ‘এমভি সুরভী-৭’ নৌযনটির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে মাহসুদ-এর ৬ যাত্রী নিহত ও ৩০জন আহত হয়। দুর্ঘটনায় পিএস মাহসুদ-এর পোর্ট সাইডের প্যাডেলসহ এর লোয়ার ডেক ও আপার ডেকসহ উপরি কাঠামোর ব্যপক ক্ষতি হয়। দুর্ঘটনার পর পরই সংস্থাটির চেয়ারম্যান ছাড়াও বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যাান নৌযানটি পরিদর্শন করেন। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনার জন্য ‘এমভি সুরভীÑ৭’কে দায়ী করে নৌযানটির সার্ভে সনদ ও রুট পারমিট বাতিল করলেও কোনো প্রকার তদন্ত শুরুর আগেই তিন দিনের মাথায় তা পুণর্বহাল করে। তবে সুরভীর মাস্টার ও দ্বিতীয় মাস্টারের সনদ স্থগিত রাখা হয়েছে।
দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ পরে বিআইব্লিউটিসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতর এবং বিআইডব্লিউটিএ’ও ভিন্ন ভিন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ ছাড়া নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ও দর্ঘুটনার ২০ দিন পরে একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। সে কমিটিও দুর্ঘটনার ৩৬ দিন পরে দুর্ঘটনাস্থল ও নৌযানটি পরিদর্শন করে। কমিটি এ মাসের শুরুতে মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট দাখিল করেছে বলে জানা গেছে। যতদূর জানা গেছে, সবগুলো কমিটিই সুরভী লঞ্চের চালকের অসতর্কতা ও বেপরোয়া পরিচালন ব্যবস্থাকে ঐ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করলেও পাশাপাশি পিএস মাহসুদ-এর চালক ও মাস্টার কর্মকর্তার কিছুটা অসতর্কতাও দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মন্ত্রণালয় এ ব্যপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
এদিকে দুর্ঘটনার পরে দীর্ঘদিন অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণভাবে পিএস মাহসুদ’কে বরিশাল বন্দরে ফেলে রেখে গত ৮অক্টোবর নারায়নগঞ্জে বিআইডব্লিউটিসি’র ১নম্বর ডকইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এমভি সুরভীÑ৭-এর স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান ক্রিসেন্ট শিপিং লাইন্স পিএস মাহসুদ-এর মেরামতে সম্পূর্ণ ব্যায়ভার বহনের শর্তে মন্ত্রণালয় এ ব্যপারে কিছুটা নমনীয় মনোভাব পোষণ করছে বলে জানা গেছে। অতি সম্প্রতি এ ব্যপারে বিআইডিব্লিউটিসির সাথে ক্রিসেন্ট শিপিং লাইন্স-এর একটি সমঝোতাপত্র স্বক্ষরের পরে মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। চুক্তির শর্তনুযায়ী বিআইডব্লিউটিসির প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে সংস্থাটির ১ নম্বর ডকইয়ার্ডে মাহসুদ-এর মেরামত সম্পন্ন হবে। তবে এর সম্পূর্ণ ব্যায়ভার বহন করবে সুরভী কতৃপক্ষ।
চুক্তি অনুযায়ী মাহসুদ-এর মেরামত কাজ চলছে বলে বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক-কারিগরি গতকাল জানিয়েছেন। পুরো বিষয়টি তদারক ও সমন্বয় করছেন সংস্থাটির ডিজিএম ও অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি আশিকুজ্জামান। আগামী মাসখানেকের মধ্যেই পিএস মাহসুদ-এর মেরামতির কাজটি সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে বলে গতকাল ডিজিএম আশিকুজ্জামান জানিয়েছেন।
তবে পিএস মাহসুদ সচল হয়ে সংস্থার বাণিজ্যিক নৌবহরে ফিরলেও তা যাত্রী পরিবহনের কাজে লাগানো হবে কি না সে বিষয়ে কেউ কোনো মন্তব্য করনে নি। গত দু বছরে প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ব্যায়ে অধিক পরিচালন ব্যায় বহুল ‘এমভি মধুমতি’ ও ‘এমভি বাঙালী’ নামের দুটি যাত্রীবাহী নৌযান সংস্থাটির নৌবহরে যুক্ত হবার পরে জ্বালানী সাশ্রয়ী প্যাডেল জাহাজগুলোকে অনেকটাই বসিয়ে রাখা হচ্ছে। এর ফলে সংস্থাটির যাত্রীবাহী সেক্টরে লোকসানের বোঝা ক্রমে স্ফিত হলেও এতদিন কতিপয় কর্মকর্তা ব্যায়বহুল নৌযান পরিচালনেই অধিকতর আগ্রহী ছিলেন।
উল্লেখ্য, প্রায় ৫৭ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত এমভি বাঙালি ও এমভি মধুমতি নৌযান দুটিতে প্রতিঘণ্টায় জ্বালানী ব্যায় প্রায় ২শ লিটার। অথচ ‘পিএস মাহসুদ’ ও ‘পিএস অস্ট্রিচ’এ জ্বালানী ব্যায় প্রতি ঘণ্টায় মাত্র ৯২ লিটার। পিএস টার্ন-এ জ্বালানী ব্যায় ঘণ্টায় ৮৬ লিটার এবং পিএস লেপচাতে ৯৬ লিটার। অথচ নব নির্মিত দুটি নৌযান ও পুরনো প্যাডেল জাহাজগুলোর যাত্রী ধারণ ক্ষমতা প্রায় সমান।
পিএস মাহসুদ জাহাজটি মেরামতে বিআইডব্লিউটিসির প্রকৌশল বিভাগ ব্যায় ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকার প্রাক্কলন তৈরি করলেও সুরভী নৌযান কর্তৃপক্ষ তার অর্ধেকেরও কম ব্যয়ে প্যাডেল জাহাজটি মেরামতের ব্যাপারে আশাবাদী বলে জানা গেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন