বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রীর যথার্থ উপলব্ধি

| প্রকাশের সময় : ১৪ মে, ২০২২, ১২:৩৫ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার ২০১৩-২১ প্রদান অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমাদের শিশুরা এখন সব ফ্ল্যাটে বাস করে। ফ্ল্যাটে বাসবাস করে তারা ফার্মের মুরগীর মতোই হয়ে যাচ্ছে। তারা সারাক্ষণ মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাব, আইপ্যাড নিয়ে পড়ে থাকে। এটা মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থতার লক্ষণ নয়। তিনি অভিভাবকদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, শিশুদের যেন বাইরে খেলাধুলা করতে উৎসাহী করে তোলেন। এতে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটবে। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বাস্তবসম্মত এবং উদ্দীপনামূলক কথা বলেছেন। তার এ বক্তব্য সময়োপযোগী এবং আগামী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য প্রেরণাদায়ক। আমরা তাঁর এ আহ্বানকে সাধুবাদ ও স্বাগত জানাই। বলার অপেক্ষা রাখে না, নগরজীবনে শিশুরা অনেকটাই ঘরবন্দী জীবনযাপন করে। মাঠে বা খোলা জায়গায় বিচরণ ও খেলাধুলার সুযোগ কমে যাওয়ায় তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে তারা মোবাইল, ট্যাব, ল্যাপটপ, আইপ্যাড ইত্যাদিতে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। এই প্রবণতা যে অত্যন্ত ক্ষতিকর তা চিকিৎসাবিদ থেকে শুরু করে সচেতন মহলও বিভিন্নভাবে বলেছেন।

এক সময় রাজধানীর পাড়া-মহল্লা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংগঠনের অসংখ্য খেলার মাঠ ও পুকুর ছিল। সরকারি কলোনিগুলো বিশাল মাঠ, পার্ক, পুকুর ইত্যাদি রেখে গড়ে তোলা হয়েছিল। খেলার মাঠ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কল্পনাই করা যেত না। খেলার মাঠ নেই, এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি অভিভাবকদেরও আগ্রহ কম ছিল। এখন সড়কের পাশে বদ্ধ ভবনেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে, যেখানে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার কোনো সুযোগ নেই। অথচ পর্যাপ্ত মাঠ ও খোলা জায়গা থাকায় একসময় তরুণ প্রজন্ম নিয়মিত খেলাধুলাসহ সুস্থ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করত। পাড়া-মহল্লাভিত্তিক ফুটবল-ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হতো। এতে যুবসমাজ যেমন শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থভাবে বেড়ে উঠত, তেমনি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকেও বিরত থাকত। কালক্রমে রাজধানী থেকে এসব খেলার মাঠ, পার্ক, পুকুর ইত্যাদির বেশিরভাগ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সেসব মাঠে কিংবা পুকুর ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল ভবন। রাজধানীকে পরিণত করা হয়েছে কংক্রিটের স্তুপে। বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো সুযোগ কমে গেছে। এক সময় সরকারি কলোনিগুলো পরিকল্পিতভাবে পর্যাপ্ত খোলা জায়গা, খেলার মাঠ, পুকুর, পার্ক ইত্যাদি রেখে গড়ে তোলা হয়েছিল। এখন সেখানেই কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়া বহুতল ভবন গড়ে তোলা হয়েছে এবং হচ্ছে। শুধু সরকারি কলোনিই নয়, বিভিন্ন এলাকার মাঠ বিলুপ্ত করে ভবন নির্মিত হচ্ছে। এতে তরুণ প্রজন্মের খেলাধুলা এবং প্রবীণদের মুক্তভাবে হাঁটাচলার পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। নবীণ-প্রবীণ উভয়েই শারীরিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, খোলা জায়গা কমে যাওয়ায় ভূমিকম্পের ক্ষয়-ক্ষতির ঝুঁকিও বাড়ছে। রাজধানী ভূমিকম্পনপ্রবণ অঞ্চলে থাকায় এর আশঙ্কা সবসময়ই রয়েছে। ইতোমধ্যে নগরবিদরা বলেছেন, মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প হলে রাজধানীর হাজার হাজার ভবন ধসে পড়বে। অসংখ্য মানুষ হতাহত হবে। ভূমিকম্প থেকে আত্মরক্ষার জন্য খোলা জায়গা ও মাঠ অত্যন্ত জরুরি। এ সময় মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে খোলা জায়গায় আশ্রয় নেয়। সে সুযোগ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও অপরিনামদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে মাঠ ও খোলা জায়গা বিলুপ্তির এই প্রবণতা আত্মঘাতী ছাড়া কিছু নয়। আগামী প্রজন্মের ঘরবন্দী হওয়ার এটা অন্যতম বড় কারণ। তাদের বিনোদনের মূল মাধ্যম হয়ে উঠেছে ঘরে বসে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, আইপ্যাডে ব্যস্ত থাকা। ঘর থেকে বের হলেও তাদের বিনোদনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে বিভিন্ন ফাস্টফুডের দোকান ও রেস্টুরেন্টে বসে আড্ডা দেয়া। এতে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যথার্থভাবেই আগামী প্রজন্মের এ অবস্থাকে ফার্মের মুরগির সাথে তুলনা করেছেন।

আগামী প্রজন্ম ও নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাঠ ও খোলা জায়গা রাখার বিকল্প নেই। যেভাবে একের পর এক মাঠ ও খোলা জায়গায় ভবন-স্থাপনা গড়ে উঠছে, তা রোধ করা উচিৎ। আর যাতে একটি মাঠও বিলুপ্ত না হয়, এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সচেতন হওয়া জরুরি। সিটি করপোরেশন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে মাঠ ও খোলা জায়গা রক্ষা করতে হবে। যেসব মাঠ ও পার্ক পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে, সেগুলো সংস্কার করে আগামী প্রজন্মের খেলাধুলার জন্য উপযুক্ত করে তুলতে হবে। একটা সময় ঢাকা গাছ-গাছালিতে বাগিচার শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে তা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যত প্রজন্মের সুষ্ঠু বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যাবে। রাজধানীর কোথায় কোন মাঠ অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। মাঠ সংস্কার ও সংরক্ষণ করে যেভাবে আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়, সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। এলাকার কাউন্সিলররা এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। আমাদের একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে এমন প্রবণতা রয়েছে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার চারপাশে অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনা গড়ে তোলে। পদ্মাসেতুকে কেন্দ্র করে তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ধরনের প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। রাজধানীর মাঠ ও খোলা জায়গা সংরক্ষণে নগরবাসীকে সচেতন হতে হবে। সম্প্রতি কলাবাগান তেঁতুলতলা মাঠ সংরক্ষণ নিয়ে এলাকাবাসীর প্রতিরোধের কারণেই এটি রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। এভাবে রাজধানীর মাঠ রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হতে হবে। সরকারি আবাসনের ক্ষেত্রে খেলার মাঠসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা রেখেই পরিকল্পনা করা হয়। তবে তা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে। বাস্তবে দেখা যায় না। এ ধরনের অপরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
আহমদ ১৪ মে, ২০২২, ১১:৪৩ এএম says : 0
সুন্দর কলাম লেখেছেন ভাই, ধন্যবাদ আপনাকে
Total Reply(0)
আহমদ ১৪ মে, ২০২২, ১১:৪৪ এএম says : 0
আসলেই শহরের বাচ্চারা এখন মুরগির ফার্মের মতো হয়ে যাচ্ছে। এজন্য অভিভাবকদের সচেতন হওয়া দরকার, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম খারাপ দিকে যাবে।
Total Reply(0)
আনিছ ১৪ মে, ২০২২, ১১:৪৬ এএম says : 0
এজন্য শহরের ধনী ও সরকার যদি প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে দুইটি করে খেলার মাঠ করে দিতো। তাহলে অন্তত তারা খেলার সুযোগটা পেতো
Total Reply(0)
আনিছ ১৪ মে, ২০২২, ১১:৫৩ এএম says : 0
আমরা চাই সরকার প্রতিটি ওয়ার্ডে যেন দুইটি করে মাঠ করে দেয়। এজন্য সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি বিশেষ জোড় দাবি জানাই
Total Reply(0)
আকিব ১৪ মে, ২০২২, ১২:০৬ পিএম says : 0
শহরে যাই কিছু মাঠ আছে, বেশিরভাগ সময়ই প্রভাবশালীদের কোনো কোনো কিছু সরঞ্জাম থাকে। এজন্য সরকার ও দায়িত্ববান লোকদের এ ব্যাপারে বিশেষ নজর দিতে হবে
Total Reply(0)
আকিব ১৪ মে, ২০২২, ১২:০৬ পিএম says : 0
আগামী প্রজন্ম ও নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় মাঠ ও খোলা জায়গা রাখার বিকল্প নেই। যেভাবে একের পর এক মাঠ ও খোলা জায়গায় ভবন-স্থাপনা গড়ে উঠছে, তা রোধ করা উচিৎ। আর যাতে একটি মাঠও বিলুপ্ত না হয়, এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সচেতন হওয়া জরুরি।
Total Reply(0)
Abdul Quaium Sheikh ১৫ মে, ২০২২, ১২:২৬ পিএম says : 0
খেলাধুলা ও সুস্থতার প্রয়োজনে রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় পর্যাপ্ত খালি জায়গা ও খেলাধুলার মাঠ বাকা নিতান্ত অপরিহার্য।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন