শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের হুমকি

৯ম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে ৮ বিভাগে কর্মসূচি পালন

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

৯ম পে-স্কেল বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এরই মধ্যে ৭ দফা দাবি আদায়ের গত ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগ, ৮ এপ্রিল সিলেট বিভাগ, ৯ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগ, ১৫ এপ্রিল বরিশাল বিভাগ, ১৬ এপ্রিল খুলনা বিভাগ ও ১৩ মে রংপুর বিভাগে বিভাগীয় সমাবেশ করেছে। দাবি আদায় না হলে বৃহৎ কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবে ঐক্য পরিষদ।
ঐক্য পরিষদের নেতারা বলছেন, অষ্টম জাতীয় পে-কমিশনের অনেক অসংগতি এবং বৈষম্য রয়েছে। এ সকল বৈষম্য ও অসংগতি দূর করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে একটি কমিটি গঠন করে দেয়া অসংগতি ও বৈষম্যগুলো খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা প্রদান করা হলেও প্রায় ৫ বছর পার হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কমিটি কোনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে বছর শেষে মূল্যস্ফীতির হারের সঙ্গে সমন্বয় করে এই বেতন-ভাতা বৃদ্ধির কথা। ইতোমধ্যেই স্থায়ী বেতন কমিশন গঠনের পরিবর্তে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণের উপায় খুঁজতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম কোনোভাবে টেনে ধরা যাচ্ছে না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সরকারি কর্মচারীরা যেন নতুন পে-স্কেল পেতে চান। দ্রব্যমূল্যের থেকে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি কম বলে দাবি করছে তারা। এ দাবি আগামী ২০ মের মধ্যে সাত দফা দাবি বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে আগামী ২৭ মে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশের মাধ্যমে কঠোর থেকে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দিবে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, প্রতি পাঁচ বছর পর পর পে-স্কেল ঘোষণা করা হয়। সে অনুযায়ী পে-স্কেল ঘোষণার সময় হয়ে গেছে। চাকরিজীবীদের আর্থিক সুবিধা বাড়ানো সংক্রান্ত দাবি দাওয়া সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিবেচনায় রয়েছে। খুব শিগগিরই এ সংক্রান্ত ঘোষণা আসবে। নবম জাতীয় পে-স্কেল ঘোষণা, ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্যভাতা, টাইম স্কেল সিলেকশন গ্রেড, বৈষম্য নিরসনসহ সরকারি কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া পূরণে সরকার কাজ করছে। সরকার অবগত এবং এটি বিবেচনাধীন আছে। তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি আলোচনার পর্যায়ে আছে এখনো ফাইনাল কিছু হয়নি।
সর্বশেষ ২০১৫ সালে বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছিল যা এখন কার্যকর রয়েছে। তবে সেসময় স্থায়ী পে কমিশন গঠনের প্রস্তাব থাকলেও সেটি এখনো কার্যকর করা হয়নি। অন্যদিকে, সরকারি কর্মচারীগণ জাতীয় পে- স্কেল মোতাবেক বার্ষিক প্রায় ৫% হারে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে থাকেন। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ বেতন বৃদ্ধির ধাপগুলো সেভাবে সাজানো হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বাজারে মূল্যস্ফীতির সাথে বেতন বৃদ্ধির সমন্বয় হচ্ছে না। গত ৬ বছরে ৩০% বেতন বৃদ্ধি হলেও মূল্যস্ফীতি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৭-৪০%। দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির ফলে নতুন পে কমিশন গঠনের মাধ্যমে ৯ম পে স্কেল ঘোষণাসহ অন্যান্য বৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এ দাবিতে মাঠেও নেমেছেন সরকারি কর্মকর্তারা। তবে আশার কথা হলো, এরই মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে সরকার। প্রথম বিএনপি সরকারের আমলে গত ২০০৫ সালে সর্বশেষ বেতনকাঠামো কার্যকর করা হয়েছিল। এর পরে ২০০৯ সালের ১১ নভেম্বর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নতুন বেতনকাঠামো ঘোষণা করা হয়ছিল। ওই বেতনকাঠামোতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি পায় সর্বোচ্চ ৭৪ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ৫৬ শতাংশ। সর্বোচ্চ বেতন ৪০ হাজার এবং সর্বনিম্ন বেতন ধরা হয়েছিল চার হাজার ১০০ টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য আর্থিক সুবিধা সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল।
দ্রব্যমূল্যের থেকে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি কম
সরকারি কর্মচারীগণ জাতীয় পে-স্কেল মোতাবেক বার্ষিক প্রায় ৫% হারে ইনক্রিমেন্ট পেয়ে থাকে। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ বেতন বৃদ্ধির ধাপগুলো সেভাবে সাজানো হয়েছে। মোট কথা বাজারে মূল্যস্ফিতির সাথে বেতন বৃদ্ধির সমন্বয় হচ্ছে না। গত ৬ বছরে ৩০% বেতন বৃদ্ধি হলেও মূল্যস্ফিতি বা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৭-৪০%। এমতাবস্থায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির ফলে নতুন পে কমিশন গঠনের মাধ্যমে ৯ম পে-স্কেল ঘোষণাসহ অন্যান্য বৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
৯ম জাতীয় পে-স্কেল ২০২২
সরকারি কর্মচারীদের ১১-২০ গ্রেডের আন্দোলনের ফলে সরকারি চাকুরেদের বেতন কাঠামোয় বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে সরকার চাইছে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই নতুন একটি বেতন কাঠামো দিতে। নতুন বেতন কাঠামোয় কোনোরকম বৈষম্য যাতে না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। বর্তমানে ০৮/০৩/২০২২ তারিখ এ পোস্ট লেখা পর্যন্ত আর কোনো আপডেট সরকার এখনো পাবলিশ করেনি বা ঘোষণা করেনি বলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ।
মহার্ঘভাতা সর্বশেষ খবর ২০২২
সরকারি কর্মচারীগণ বারবার ৪০% মহার্ঘভাতা চেয়ে আন্দোলন করছে। অতীত ইতিহাস বলছে সর্বোচ্চ ২০% মহার্ঘভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও অর্থ লগ্নী প্রতিষ্ঠানসমূহের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী এবং সামরিক বাহিনীর সকল সদস্যকে অন্তর্ভর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে তাদের মূল বেতনের ২০% (বিশ শতাংশ) হারে মাসিক সর্বনিম্ন ১,৫০০/- (এক হাজার পাঁচশত টাকা এবং সর্বোচ্চ ৬,০০০/- (ছয় হাজার) টাকা মহার্ঘভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
গত ১৯ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পে কমিশন গঠন করে নবম পে-স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের আগে অন্তর্বর্তীকালীন কর্মচারীদের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘভাতা দিতে হবে। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণসহ পে কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখাতে হবে। সচিবালয়ের ন্যায় সব দফতর, অধিদফতরের পদ-পদবি পরিবর্তনসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রণয়ন করতে হবে। লিখিত বক্তব্য আরো বলা হয়, ৮১ টাইমস্কেল সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহালসহ বেতন জ্যেষ্ঠতা পুনর্বহল, বিদ্যমান গ্র্যাচুইটি বা আনুতোষিকের হার ৯০ শতাংশের স্থলে ১০০ শতাংশ নির্ধারণ ও পেনশন গ্র্যাচুইটি এক টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আপিল বিভাগের রায় বাস্তবায়নসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন নিয়োগবিধি-২০১৯-এর ভিত্তিতে দশম গ্রেডে উন্নীত করতে হবে। আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিল করে উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগ করা ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করতে হবে। এছাড়া কর্মরত কর্মচারীসহ সব পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা পাঁচ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন বেতন কাঠামোতে যাতে কোনো অসমতা না থাকে, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরই মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বেতন বৈষম্য নিরসনে সরকার ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছিল। কমিটি গত দুই বছরে তেমন দৃশ্যমান কোনো কাজ করেনি। ফলে বৈষম্য দূর করা যায়নি। এ অবস্থায় সরকারের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। তাই, মূল্যস্ফীতির চাপ ও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচনের আগে নতুন বেতন কাঠামো দিতে আগ্রহী সরকার। এদিকে, বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদ শেষ হতে এখনো প্রায় দুই বছর বাকি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ২০২৩ সালের শেষদিকে হওয়ার কথা আছে। এ বিষয়টি সামনে রেখে অর্থ বিভাগ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কাজ করছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন বেতন কাঠামো দিয়ে সরকার কর্মকর্তাদের খুশি রাখতে চায়। বেতন বাড়ালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জন্য নির্বাচনে উদ্দীপনা সৃষ্টি হতে পারে বলেও অনেকেই মত দিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব এ ব্যাপারে বলেন, বর্তমান সরকারের বেতন বাড়ানোর এ উদ্যোগ অসাধারণ। সরকারি কর্মচারীদের আয় খুবই সীমিত ও স্থির। এজন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রয়োজন। আগামী নির্বাচনের আগে সরকার নতুন বেতন কাঠামো দিতে পারবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
আলিফ ১৬ মে, ২০২২, ১:০৯ এএম says : 0
সরকারের উচিত তাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া
Total Reply(0)
আকিব ১৬ মে, ২০২২, ১:১২ এএম says : 0
দ্রব্যমূল্যের যেভাবে দাম বাড়ছে এরকম ভাবে বাড়লে তারা চলবে কি করে। সবার আগে উচিত নিত্যপ্রয়োজনীয় দাম নিয়ন্ত্রণ করা। যে সামান্য বেতন পায় তা দিয়ে এখন সংসার চালোনো দায় হয়ে পড়েছে
Total Reply(0)
আনিছ ১৬ মে, ২০২২, ১:১৩ এএম says : 0
আমরা তাদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি
Total Reply(0)
ফাহাদ ১৬ মে, ২০২২, ১:১৪ এএম says : 0
সুন্দর প্রতিবেদন করেছেন, ধন্যবাদ আপনাকে
Total Reply(0)
Md Iqbal Hossain ১৬ মে, ২০২২, ১১:২০ পিএম says : 0
আসলেই আমাদের বেতন বাড়ানো দরকার বাজারের যে উর্দ্ধগতি তাতে সংসার চালানো খুব‌ই কঠিন হয়ে পড়েছে
Total Reply(0)
উসমান গনি ১৬ মে, ২০২২, ৮:০৫ পিএম says : 0
সরকারের উচিত তাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া?
Total Reply(0)
কমল হাসান ১৮ মে, ২০২২, ১২:০৬ পিএম says : 0
১১-২০ গ্রেড আর ১-৯ গ্রেডের অতিরিক্ত বৈষম্য না কমালে বর্তমানের মতো ভবিষ্যতেও কর্মচারীদের একই অবস্থা হবে। তাই বৈষম্য দূর করে পে-স্কেল দিতে হবে। এই দাবি একদম ন্যায্যা।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন